দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলার ১৬ বছর আজ মঙ্গলবার। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারাদেশে একযোগে বোমা হামলা চালায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)। ওই দিন বেলা সাড়ে ১১টায় দেশের ৬৩ জেলার গুরুত্বপূর্ণ ৪৫০টি স্থানে প্রায় পাঁচশ বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গিরা। এই হামলায় নিহত হন দুজন এবং আহত হন দুই শতাধিক ব্যক্তি।
সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় সারাদেশে মামলা হয়েছিল সর্বমোট ১৫৯টি। তদন্ত শেষে ১৬টি মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয় ১৪৩ মামলার। এরমধ্যে নিম্ন আদালতে ১০০টি মামলার বিচারকাজ শেষ হয়েছে। বিচারাধীন আছে আরও ৪৩টি মামলা।
এসব মামলার এজাহারে নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয় ২৪২ জনকে। আর চার্জশিটে আসামি করা হয় এক হাজার ১২১ জনকে। এরমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয় ৯৮৮ জনকে। এসব মামলায় ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ডসহ ২৬৩ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজার আদেশ দেন আদালত। খালাস পান ১২২ জন।
সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলায় মোট ১৭টি মামলা হয়। এরমধ্যে চারটি মামলার বিচার নিষ্পত্তি হয়েছে। পাঁচটি মামলা এখনো বিচারাধীন, বাকি আটটি মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। বিচার নিষ্পত্তি হওয়া চার মামলায় ৩৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। বিচারের দীর্ঘসূত্রতায় অনেক মামলায় এখন সাক্ষী খুঁজে পাওয়া চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিচারের দীর্ঘসূত্রতার কারণে আসামিদের অনেকেই এখন পলাতক। বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধেও ইতোমধ্যে হাইকোর্টে আপিল করেছে আসামিরা। অবশ্য ঝালকাঠিতে দুই বিচারক হত্যা মামলায় ২০০৭ সালের মার্চে জেএমবিপ্রধান শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাভাই, খালেদ সাইফুল্লাহ, আতাউর রহমান সানি, আবদুল আউয়াল ও ইফতেখার হাসান আল মামুনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে।
ওই বছরের ১৪ নভেম্বর ঝালকাঠিতে বিচারক বহনকারী গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালায় জঙ্গিরা। এতে নিহত হন ঝালকাঠি জেলা জজ আদালতের বিচারক জগন্নাথ পাড়ে ও সোহেল আহম্মদ।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, সাক্ষী হাজিরে রাষ্ট্রপক্ষের দীর্ঘসূত্রতার কারণেই ৪৩টি মামলার বিচারকাজ এখনও শেষ হয়নি। আদালত থেকে সাক্ষীদের বারবার হাজির হওয়ার সমন দিলেও তা ফেরত আসছে। কারণ বেশিরভাগ সাক্ষীই আদালতের নথিতে উল্লেখিত ঠিকানা পরিবর্তন করেছেন। রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, সাক্ষীদের মধ্যে অনেকে ভীতির মধ্যে রয়েছেন।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী মো. আবদুল্লাহ আবু জানান, ঢাকার আদালতে ১৭টি মামলা ছিল। এরমধ্যে কয়েকটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন ও কয়েকটির বিচার শেষ করে আসামিদের সাজা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে পাঁচটি মামলা বিচারাধীন আছে। সেগুলোও সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। সাক্ষীরা আদালতে হাজির না হওয়ায় মামলার বিচার বিলম্বিত হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে সাক্ষীদেরও পাওয়া যায়নি। পুলিশও চেষ্টা করছে সাক্ষীদের খুঁজে বের করতে। আবার করোনার কারণে বিচার বন্ধ ছিল। করোনা পরিস্থিতির কারণে গত বছর এবং এ বছর অনেক দিন আদালত বন্ধ ছিল। কার্যক্রম স্বাভাবিক হতেই সাক্ষীদের হাজির করে বিচার শেষ করার চেষ্টা করবো।