বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ঋণের বিপরীতে মূলধন বাড়ানোর নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ ব্যাংক
ফাইল ছবি

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঝুঁকির মাত্রা কমানো ও সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য মূলধন সংরক্ষণের হার বৃদ্ধির বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগামী বছর থেকে ঋণের বিপরীতে ৩ শতাংশ মূলধন রাখতে হবে। আগামী বছর থেকে এ হার বাড়ানোর প্রস্তুতি নিতে হবে। ২০২৩ সাল থেকে প্রতি বছর এ হার শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ হারে বাড়বে। ২০২৬ সালের মধ্যে ঋণের বিপরীতে ৪ শতাংশ মূলধন রাখতে হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বুধবার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ সিদ্ধান্তের ফলে ব্যাংকিং খাতের সক্ষমতা বাড়বে। কিন্তু বর্তমানে ব্যাংকগুলোর যে নেতিবাচক অবস্থা রয়েছে তাতে অনেক ব্যাংকের পক্ষেই ওই হারে মূলধন রাখা সম্ভব হবে না। তখন বাধ্য হয়ে ব্যাংকগুলোকে ঋণ বিতরণ কমাতে হবে। ঋণ বিতরণ কমলে অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে আমদানি ব্যয় কমবে। এসব বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সতর্ক থাকতে হবে।

সূত্র জানায়, ব্যাংকের মৌলিক মূলধনকে বলা হয় টিয়ার-১। ব্যাংক যেসব ঋণ বিতরণ বা বিনিয়োগ করে সেগুলো ব্যাংকের সম্পদ। এই মূলধন ও সম্পদের অনুপাতকে বলা হয় লিভারেজ অনুপাত। এখন থেকে ব্যাংকগুলো এই অনুপাতে মূলধন রাখতে হবে। ২০১৫ সাল থেকেই ব্যাংকগুলোকে মূলধন ও সম্পদের এই অনুপাত কমপক্ষে ৩ শতাংশে উন্নীত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।

২০১৯ সালে ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে পর্যাপ্ত মূলধন রাখার পাশাপাশি সম্পদ ও মৌলিক মূলধনের অনুপাতও বাড়ানোর কথা বলা হয়েছিল। ওই সময়ে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের (খেলাপি ঋণ ও খেলাপি হওয়ার পর্যায়ে আছে এমন সব ঋণ) বিপরীতে ১২ শতাংশ মূলধন রাখার বিধান করা হয়।

গত বছর পর্যন্ত অনেক ব্যাংক ওই হারে মূলধন সংরক্ষণ করতে পারেনি। ১১টি ব্যাংকে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার মূলধন ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ঋণ ও সম্পদের অনুপাতও বাড়েনি। বরং খেলাপি ঋণ বাড়ায় এই অনুপাত কমেছে। এতে ব্যাংকগুলোর ঝুঁকির মাত্রা বেড়েছে। তবে কয়েকটি ব্যাংক বেশ ভালো অবস্থানে আছে। খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি ও মূলধনের হার কমার কারণে আন্তর্জাতিকভাবে দেশের ব্যাংকগুলো অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে।

বিশেষ করে বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নেতিবাচক পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এর মধ্যে অনেক ব্যাংকের এলসি গ্রহণ করছে না বিদেশি ব্যাংক। এতে তৃতীয় কোনো ব্যাংকের গ্যারান্টি দিতে হচ্ছে। এর বিপরীতে বিশেষ কমিশন দিতে হচ্ছে গ্যারান্টিদাতা ব্যাংককে। ফলে আমদানির পণ্যের খরচ বেশি পড়ছে। এতে বেড়ে যাচ্ছে ব্যবসা খরচ।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়, ঋণ ও সম্পদের অনুপাত বাড়লে ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আমদানি কমবে। পাশাপাশি সামগ্রিক আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা বাড়বে। বাড়বে ব্যাংকগুলোর মূলধনের গুণগত মান। এতে অপ্রত্যাশিত ক্ষতির বিপরীতে ব্যাংকগুলোর ঝুঁকি মোকাবিলার সক্ষমতাও বাড়বে।

এ কারণে ব্যাংকগুলো মূলধন ও ঋণের অনুপাত বাড়াতে ২০২২ সাল থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। ওই বছরে এই অনুপাত কমপক্ষে ৩ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। ২০২৩ সালে তা বাড়িয়ে ৩ দশমিক ২৫ শতাংশ উন্নীত করতে হবে। ২০২৪ সালে তা সাড়ে ৩ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। ২০২৫ সালে ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে ৪ শতাংশে উন্নীত করতে হবে।

সূত্র জানায়, বর্তমানে অনেক ব্যাংক ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের বিপরীতে মূলধন বাড়াতে পারছে না। খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশনেও ঘাটতি রয়েছে। এ অবস্থায় মৌলিক মূলধন আলোচ্য হারে বাড়ানো অনেক ব্যাংকের পক্ষেই সম্ভব হবে না। এতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে একদিকে ব্যাংকগুলো আরও অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়বে। বাড়বে ব্যবসা খরচ।

শেয়ার করুন