প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হককে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নেওয়া হয়েছে। তাকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডা. নজরুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হবে।
শনিবার বেলা ১১টার কিছু সময় পর তাকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি ঢাকায় পৌঁছায়। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় রাজশাহীর হজরত শাহমখদুম রহ. বিমানবন্দর থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা করে।
হাসান আজিজুল হককে বাড়ি থেকে বিমানবন্দরে নেওয়ার সময় অ্যাম্বুলেন্সে ছিলেন রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শাহ আজম শান্তনু ও ছেলে ইমতিয়াজ হাসানসহ পরিবারের সদস্যরা।
৮২ বছর বয়সী কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক বার্ধক্যজনিত নানা অসুখে ভুগছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা থেকে অবসর নেওয়ার পর নগরীর চৌদ্দপাই এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় হাউজিং সোসাইটির (বিহাস) নিজের বাসায় থাকেন তিনি। গত ১৬ আগস্ট ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে তার ছেলে ইমতিয়াজ হাসান জানান, গত এক মাস ধরে তার বাবা অসুস্থ। তবে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির কথা চিন্তা করে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছিল না। বাড়িতেই কয়েকজন চিকিৎসকের সমন্বয়ে চিকিৎসা চলছে। তবে শুক্রবার রাজশাহীর বিশিষ্টজনেরা সভা করে তাকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, আমরা কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের পাশে আছি। এখন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নেওয়া হচ্ছে। আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্য কোথাও নেওয়ার প্রয়োজন হলে তাকে সেখানেও নেওয়া হবে। সাংসদ বলেন, ‘গণমাধ্যমে এসেছে যে তিনি কাউকে চিনতে পারছেন না। এটা সঠিক তথ্য নয়। তিনি আমাদের সবাইকে চিনতে পেরেছেন। আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আমরা তাকে অভয় দিয়েছি।’
তার ছেলে ড. ইমতিয়াজ হাসান বলেন, ‘প্রায় এক মাস আগে বাবা বাথরুমে পড়ে যান। এতে তিনি কোমরে ব্যথা পান। পড়ে গিয়ে যেখানে ব্যথা পেয়েছিলেন সেখানে এক্স-রে করানো হয়েছে। সেখানে হালকা ফ্যাকচার ধরা পড়েছে। এরপর থেকে তিনি বিছানাগত। বিছানা থেকে উঠতে পারেন না। শরীরে লবণের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।’
ড. ইমতিয়াজ হাসান বলেন, ‘বার্ধক্যজনিত সমস্যা ছাড়াও আগে থেকেই তার হার্টে সমস্যা, ডায়াবেটিসও রয়েছে। বর্তমানে তিনি বেশি ভুগছেন হাইপোন্যাট্রিমিয়ায়। এটা হচ্ছে শরীরে লবণের ঘাটতি। লবণের ঘাটতি পূরণে তাকে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে, লবণের ট্যাবলেট দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বাসাতেই তার ইসিজি করানো হয়েছে। তিনি একেবারে নিস্তেজ হয়ে পড়েছেন, চিন্তাশক্তিও কমেছে। খুব বেশি কথা বলতে পারছেন না।’
অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক ১৯৩৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বর্তমান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার যবগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি রাজশাহীতে কাটিয়েছেন। ১৯৭৩ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ৩১ বছর অধ্যাপনা করেন। বর্তমানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব দিকে রাজশাহী মহানগরীর চৌদ্দপাই এলাকার ‘বিশ্ববিদ্যালয় হাউজিং সোসাইটির (বিহাস)’ নিজ বাসা ‘উজান’-এ বসবাস করছেন।