নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৩৯টি দলের মধ্যে ৩৪টি রাজনৈতিক দল ২০২০ সালের আয়-ব্যয়ের (অডিট রিপোর্ট) জামা দিয়েছে। একটি রাজনৈতিক দল সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে। ড. কামাল হোসেনের গণফোরামসহ অপর চারটি দলের অডিট রিপোর্ট পায়নি ইসি। বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল (এমএল) সময় বাড়ানোর আবেদন করলেও গণফোরাম, গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট কোনো হিসাব জমা দেয়নি। চাওয়া হয়নি কোনো সময়ও।
হিসাব জমা দেয়ার শেষ দিন মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) ইসির যুগ্ম সচিব আসাদুজ্জামান এসব তথ্য জানান।
এর আগে রোববার (২৯ আগস্ট) আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে জমা দেয়া বার্ষিক আয়-ব্যয় ও লেনদেন প্রতিবেদন জমা দেয় আওয়ামী লীগ।
এবারও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আয় কমেছে। অন্যদিকে গত তিন বছরের মতো ব্যয় বেড়েছে দলটির। আয় কমেছে ৫১ শতাংশ এবং ব্যয় বেড়েছে ২১ শতাংশ। নির্বাচন কমিশনে (ইসি) ২০২০ সালের আয়-ব্যয়ের হিসাব থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকারের কাছে আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দেন দলটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া ও উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান।
পরে আবদুস সোবহান গোলাপ সাংবাদিকদের জানান, বর্তমানে দলটির তহবিলে ৫০ কোটি ৭৩ লাখ ৩৭ হাজার ১৯৪ টাকা জমা রয়েছে। ২০২০ সালে আওয়ামী লীগের আয় হয়েছে ১০ কোটি ৩৩ লাখ ৪৩ হাজার ৫৩৩ টাকা। যা ২০১৯ সালের আয়ের চেয়ে ১০ কোটি ৬৮ লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৭টা কম। ২০১৯ সালের চেয়ে আয় কমেছে ৫১ শতাংশ। ২০১৯ সালে দলটি আয় করেছিল ২১ কোটি দুই লাখ ৪১ হাজার ৩৩০ টাকা।
আয় কম হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি জানান, ২০২০ সালে মনোনয়নপত্র বিক্রি বাবদ অর্থ আগের বছরের তুলনায় কম হয়েছে। আয়ের প্রধান খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে- বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যদের চাঁদা, মনোয়ন ফরম বিক্রি ও বিভিন্ন ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের দেয়া অনুদান প্রভৃতি।
তিনি জানান, ২০২০ সালে আওয়ামী লীগের ব্যয় হয়েছে নয় কোটি ৯৪ লাখ ৪৯ হাজার ৯৩১ টাকা। যা ২০১৯ সালের চেয়ে ব্যয়ের চেয়ে এক কোটি ৭৩ লাখ ৪৮ হাজার ৩৫৬ টাকা বেশি। ২০১৯ সালের চেয়ে ব্যয় বেড়েছে ২১ শতাংশ। ২০১৯ সালে দলটির ব্যয় হয়েছিল আট কোটি ২১ লাখ এক হাজার ৫৭৫ টাকা।
তিনি বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা, বিভিন্ন পর্যায়ে দলীয় প্রার্থীদের অনুদান, পত্রিকা-প্রকাশনা ও সংশ্লিষ্ট খরচ বাবদ ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে দলটির ব্যয় বেড়েছে। ব্যয়ের প্রধান খাতের মধ্যে রয়েছে- অফিস রক্ষণাবেক্ষণ ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, সংগঠন পরিচালনা ব্যয় ও ত্রাণ সমগ্রী বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা ব্যয়।’
জানা যায়, একাদশ সংসদ নির্বাচনের বছর ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের আয় হয়েছিল ২৪ কোটি ২৩ লাখ ৪২ হাজার ৭০৭ টাকা। আর ব্যয় হয়েছিল ১৮ কোটি ৮৭ লাখ ৮০ হাজার ৫৫৭ টাকা।
অন্যদিকে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি ২৬ আগস্ট তাদের আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দিয়েছে। দলটির দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছর (২০২০ সালে) আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হয়েছে তাদের। এ সময়ে দলটির আয় হয়েছে এক কোটি ২২ লাখ ৫৩ হাজার ১৪৯ টাকা। বিপরীতে ব্যয় হয়েছে এক কোটি ৭৪ লাখ ৫২ হাজার ৫১৩। অতিরিক্ত অর্থ পার্টির ফান্ড থেকে ব্যয় করা হয়েছে। আগের বছরও দলটির আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি ছিল।
আইন অনুযায়ী ইসিতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রতি বছর আয়-ব্যয়ের হিসাব দিতে হয়। ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে দলগুলোকে ২০২০ সালের আর্থিক বিবরণী নিরীক্ষা করে জমা দেয়ার জন্য চিঠি দিয়েছিল ইসি। পরে করোনার কারণে সময় আরও এক মাস বাড়ানো হয়।