প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৫ আগস্টের খুনিদের জিয়াউর রহমান দায়মুক্তি দিয়ে, বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরির মাধ্যমে পুরস্কৃত করেছিলেন। আর তার স্ত্রী খালেদা জিয়া আরও একধাপ উপরে গিয়ে জনগণের সংসদে একজন খুনিকে এনে বসান।
আজ বুধবার বিকালে জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাংসদ আলী আশরাফের ওপর আনীত শোক প্রস্তাবে আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে একটা নির্বাচন হয়। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থেকে নির্বাচনটা করেছিল। যাতে সকল রাজনৈতিক দল বয়কট করেছিল। অর্থাৎ ভোটারবিহীন নির্বাচন, সারাদেশে সেনাবাহিনী নামিয়ে দিয়ে, প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করে নির্বাচনটা করা হয়। সেই নির্বাচনে কর্নেল রশিদকে কুমিল্লার চান্দিনা থেকে নির্বাচিত করে সংসদে নিয়ে আসে। এবং বিরোধী দলের নেতার আসনে বসিয়েছিল। আরেকজন হলো চুয়াডাঙ্গা থেকে কর্নেল (বজলুল) হুদাকে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো, তিনি (আলী আশরাফ) যে এলাকা থেকে নির্বাচন করতেন, এই চান্দিনা এলাকা, যেখানে জাতির পিতার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি কর্নেল রশিদের বাড়ি। তার পাশেই খন্দকার মোশতাকের। পরবর্তী সময়ে ওই আসনে আবার জনগণের ভোটে আলী আশরাফই বিজয়ী হয়েছিলেন।
অধ্যাপক আলী আশরাফ সবসময় আদর্শ নিয়ে চলতেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি সবসময় ১৫ আগস্টের হত্যার বিরোধিতা করেছেন। ৩ নভেম্বর জেলহত্যার বিরোধিতা করেছেন এবং এই মামলার সাক্ষীও ছিলেন। আমরা একজন দক্ষ সংসদ সদস্যকে হারিয়েছি। যিনি প্রবীণ সাংসদ হিসেবে নবীন সাংসদের প্রশিক্ষণ দেওয়া। বুদ্ধি ও পরামর্শ দিয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আলী আশরাফ সমসাময়িক রাজনীতি, অর্থনীতি বিষয়ে ১৫টি বই লিখেছেন। এগুলো আগামী প্রজন্মকে সমৃদ্ধ করবে।
আমরা অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ানকে হারিয়েছি উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতাল ভর্তি হওয়ার পর আমি প্রতিনিয়ত খবর নিয়েছি। আশা ছিল বেঁচে ফিরে আসবেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য অনেক চেষ্টা করেও তাকে আমরা ফিরিয়ে আনতে পারলাম না। না ফেরার দেশেই তিনি চলে গেছেন। এই সংসদের অনেক সদস্যকে আমরা হারিয়েছি। এটা সত্যিই দুঃখজনক।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের আগে কুমিল্লা-৭ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য মরহুম আলী আশরাফের মৃত্যুতে আনা শোকপ্রস্তাব সর্বসন্মতক্রমে গ্রহণ করা হয়। তার আগে সরকারি ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা শোকপ্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন।
পরে আলী আশরাফসহ মৃত্যুবরণকারীদের বিদেহী আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এক মিনিট নীরবতা পালন ও তাদের আত্মার শান্তি কামনা করে দোয়া মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন সাংসদ রুহুল আমিন মাদানী।
অন্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, সরকারি দলের প্রবীণ সাংসদ মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মুহম্মদ ফারুক খান, সাবেক মন্ত্রী মুজিবুল হক, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ ও জাতীয় পার্টির সাংসদ মসিউর রহমান রাঙ্গা, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কাজী ফিরোজ রশীদ, বিকল্প ধারার আব্দুল মান্নান, গণফোরামের সংসদ সদস্য সুলতান মো. মনসুর আহমেদ।