বঙ্গোপসাগরে ধরা পড়ছে বড় বড় রুপালি ইলিশ। ট্রলারভর্তি মাছ নিয়ে নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার চেয়ারম্যান ঘাটে ফিরছেন জেলেরা।
জেলেরা জানান, সাগরে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার দেড় মাস পর চলতি সপ্তাহে জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে রুপালি ইলিশ। প্রতিটি ট্রলারে ৮০০ গ্রাম থেকে পৌনে দুই কেজি ওজনের প্রচুর ইলিশ ধরা পড়েছে। যার কারণে দামও ভালো পাচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হাতিয়ার চেয়ারম্যান ঘাটে এখন উৎসবের আমেজ। ঘাট চলতি সপ্তাহে জেলে ও ব্যবসায়ীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। ৬৫ দিন নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেরা সাগরে গেলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে জালে ওঠেনি ইলিশ। এতে হতাশ ছিলেন জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা।
কিন্তু গত এক সপ্তাহে পাল্টে গেছে এখানকার চিত্র। সাগর থেকে ট্রলারভর্তি ইলিশ নিয়ে ঘাটে ফিরছেন জেলেরা। ঘাট থেকে মোকামে তোলা হচ্ছে ছোট-বড় ইলিশ। ব্যবসায়ীদের হাঁকডাক ও কেনাবেচায় সরগরম হয়ে উঠে এই মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রটি। অনেক ব্যবসায়ী কাঙ্ক্ষিত দাম পেয়ে ট্রাকে করে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠাচ্ছেন ইলিশের চালান।
বঙ্গোপসাগর থেকে ১৪ দিন পর ঘাটে ফিরেছে আল্লাহর দান ফিশিং বোট। বড় মাছ পেয়ে খুশি বোটের আমিন মাঝি। বড় ইলিশ মাছ পেয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা এখন যে ইলিশ পাইতেছি তা দেড় কেজির ওপরে। ছোট ইলিশ কম পাচ্ছি। বড় পাছ পাওয়ায় দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে।
গভীর সমুদ্র থেকে ফিশিং বোট নিয়ে আসা জয়নাল মাঝি বলেন, গভীর সমুদ্রে গেলে বড় বড় মাছ পাওয়া যায়। সেগুলো দেড় থেকে দুই কেজি ওজনের। মাছগুলোর বয়স দেড় থেকে দুই বছরের। আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো দাম পাচ্ছি।
চেয়ারম্যান ঘাটের ইলিশের বেপারী আইয়ুব আলী বলেন, বাজারে ইলিশের চাহিদা অনেক বেশি। বর্তমানে দেড় দুই বছর বয়সের বড় বড় ইলিশ মাছ আসছে।
চেয়ারম্যান ঘাটের নুর উদ্দিন মেম্বার মৎস্য আড়তের মালিক মো. রুবেল বলেন, এখন অনেক বড় বড় মাছ ধরা পড়ছে। এই মৌসুমে শুরুর দিকে এত মাছ ছিল না।
হাতিয়ার হরনী ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. আরিফুল হাসান বলেন, হাতিয়া উপজেলায় প্রায় এক থেকে দেড় লাখ জেলে ইলিশ মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। এখন মাছের জমজমাট মৌসুম। যখন নিষেধাজ্ঞা থাকে তখন সরকার জেলেদের যে সুযোগ সুবিধা দেয় তাতে জেলেরা মোটামুটি খুশি। তবে তুলনামূলকভাবে কম সংখ্যক জেলে সরকারি সুযোগ সুবিধা পায়। নিবন্ধন নাই এমন জেলের সংখ্যাই বেশি।
হাতিয়ার চানন্দি ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. ইউসুফ বলেন, চেয়ারম্যান ঘাটে এসেছি পরিবারের জন্য মাছ কেনার জন্য। মাছগুলো কমের মধ্যেই পেয়েছি।
চেয়ারম্যান ঘাটের ইলিশের বেপারী আলাউদ্দিন বলেন, হাতিয়া দ্বীপের চারপাশে মেঘনা নদী। এখানে ছয় মাস লবণ পানি থাকে। বাকি ছয় মাস মিষ্টি পানি। তাই হাতিয়ার ইলিশ অনেক সুস্বাদু। তাই এই মাছটার চাহিদা বাংলাদেশের সব জায়গায় বেশি।
জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি বেলায়েত হোসেন সাহরাজ বলেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে আমাদের এলাকার জেলেরা নদীতে মাছ ধরতে গেছে। তারা বড় বড় মাছ পেয়ে অনেক খুশি।