মোবাইল ফোনের দুর্বল নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেটের ধীরগতি সমস্যার সমাধান করে গুণগত ও মানসম্মত নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে করা রিটের শুনানি দুই মাসের জন্য মুলতবি করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, মোবাইল অপারেটরদের নেটওয়ার্ক সমস্যার সমাধান করতে হবে।
রোববার (৫ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এদিন আদালতে রিটকারীদের পক্ষে আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী।
শুনানিতে অ্যাডভোকেট ইশরাত নেটওয়ার্ক সমস্যার কথা তুলে ধরেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ বিটিআরসির লিখিত জবাবে নেটওয়ার্কের সমস্যা সমাধানে তাদের অব্যাহত কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত করে আদালতকে বলেন, বিটিআরসি বলেছে, নেটওয়ার্ক সমস্যা সমাধানে তারা প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।
লিখিত জবাবে নেটওয়ার্ক সমস্যা সমাধানে নিজেদের কার্যক্রম তুলে ধরে বিটিআরসি আদালতকে জাানিয়েছে, নেটওয়ার্ক সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
তখন আদালত বলেন, নেটওয়ার্ক সমস্যার সমাধান মোবাইল অপারেটরদেরই করতে হবে। প্রত্যন্ত এলাকায় নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। জনগণের রেভিনিউ যাচ্ছে। বিটিআরসি যেহেতু উদ্যোগ নিয়েছে তাই এ রিট মামলা দুই মাস স্ট্যান্ডওভার (মুলতবি) রাখছি।
আদালত রিটকারীদের আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, দুই মাসে নেটওয়ার্ক সমস্যার সমাধান না হলে কোর্টকে মেনশন করে জানাবেন। এ পিটিশনটি তখন শুনানির জন্য আবার আসবে।
এর আগে গত ৮ জুন মোবাইল ফোনের দুর্বল নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেটের ধীরগতি সমস্যার সমাধান করে গুণগত ও মানসম্মত নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। রিটে গ্রাহকদের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ইন্টারনেটের গতি সেবা দিতে নির্দেশনা চাওয়া হয়।
মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. রাশিদুল হাসান ও সাংবাদিক মেহেদী হাসান ডালিমের পক্ষে অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান এ রিট দায়ের করেন।
রিটে তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি সচিব, বিটিআরসির চেয়ারম্যান এবং গ্রামীণফোনসহ মোবাইল কোম্পানিগুলোর প্রধান নির্বাহীকে বিবাদী করা হয়েছে।
রিট আবেদনে বলা হয়েছে, দুর্বল নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেটের ধীরগতির কারণে মোবাইল ফোন গ্রাহকরা মারাত্মক ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। গ্রাহকের কাছ থেকে যে পরিমাণ খরচ নেয়া হয় সে তুলনায় সেবার মান হতাশাজনক। মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেলেও মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো সে অনুযায়ী সেবা দেয়নি, ফলে গ্রাহকদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
২০২০ সালের এক জরিপে দেখা গেছে, ডিজিটাল সেবার মান নিশ্চিতকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তালিকায় প্রায় তলাানিতে।
রিটকারীদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ‘দেশের ইন্টারনেটের গতি এতটাই দুর্বল যে, অনেক অঞ্চলে মানুষ ইন্টারনেটের সেবা থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত হচ্ছে। যে টাকা দিয়ে নেট কেনা হয়, তার মেয়াদ শেষ হলে ব্যবহার করা যায় না। অথচ নির্দিষ্ট সময়ে ব্যবহার শেষ করতে না পারার অন্যতম কারণ ইন্টারনেটের ধীরগতি।’
ইন্টারনেটের ধীরগতি নিয়ে বিআরটিসিতে বছরে প্রায় সাড়ে ৫ োখ অভিযোগ জমা হলেও গ্রাহকরা এখনো ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাচ্ছে না বলেও জানান এ আইনজীবী।
এর আগে গত বছরের ২৭ নভেম্বর মোবাইল ফোনের দুর্বল নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেটের ধীরগতি সমস্যার সমাধান করে গুণগত ও মানসম্মত নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা নিশ্চিতে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছিল।
নোটিশ পাওয়ার পরও এ সমস্যার সমাধানে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায় উচ্চ আদালতে এ রিট দায়ের করা হয় বলে জানান অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান।