নিউজিল্যান্ডের স্পিনার কোল ম্যাককোনকির বলটি সীমানা ছাড়তেই নতুন ইতিহাস লিখল টাইগাররা। প্রথমবারের মতো দেশটির বিপক্ষে সিরিজ নিশ্চিত হতেই উদযাপনে মাতলেন মাহমুদউল্লাহ-আফিফরা। হাত মুষ্টি করে শূন্যে ছুড়ে আবার শান্ত ‘সাইলেন্ট কিলার’। সিরিজ জয়ের নায়ক চাপা আনন্দ নিয়ে যখন গ্লাভস খুলে ব্যাট বগলদাবা করে হাঁটা ধরল ডাগআউটের পথে, হাত মেলাল প্রতিপক্ষের সঙ্গে- তখন পুরো দলে ভর করেছে রোমাঞ্চিত সিরিজ জয়ের আবহ- সমর্থকদেরও বটে!
অবশ্য মিরপুরে আজকের ম্যাচটাকে রোমাঞ্চকর বলাই যায়। টাইগার স্পিনার নাসুম আহমেদের ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ের পর মুস্তাফিজুর রহমানের নৈপুণ্য। একশোর নিচে লক্ষ্য নিয়ে শুরুতেই ধাক্কা। পরে সময় গড়ানোর পর ধাক্কাটার শঙ্কায় রূপ নেওয়া। আর শেষে মাহমুদউল্লাহর অধিনায়কোচিত ক্যামিও। তাতেই ইতিহাস। অস্ট্রেলিয়ার পর কিউইদের বিপক্ষেও ঘুচল সিরিজ খরা। ব্লাক ক্যাপসদের বিপক্ষে এই সংস্করণে প্রথম জয়ের পর প্রথম শিরোপা। বিশ্বকাপের আগে জয়ের ধারায় থাকতে চাওয়া টাইগারদের আত্মবিশ্বাসের অন্যতম খোরাক নিশ্চয়ই!
ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়াকে ধরাশায়ী করার মাসখানেক পর টাইগারদের ডেরায় কুপোকাত হলো ব্লাক ক্যাপসরা। বিশ্বকাপের আগে দুর্দান্ত জয়ের ধারায় থাকা সাকিব-মাহমুদউল্লাহরা জিতল টানা তিন সিরিজ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২-১, অস্ট্রেলিয়াকে ৪-১ এবং এক ম্যাচ হাতে রেখেই নিউজিল্যান্ডকে ৩-১ ব্যবধানে হারিয়ে জয়। এমন জয়ের ফর্মে অবশ্যই খুশি টিম বাংলাদেশ।
অবশ্য খুশি না হওয়ার কোনো কারণ নেই। ম্যাচ শেষে ম্যাচ জয়ী লাজুক নাসুম আহমেদকে অনুভূতি জানতে চাইলে, তার দেওয়া হাসিই প্রমাণ করে আগুনের জবাবে রাখা ‘আগুনটা’ জয়ের পর জ্বলেই উঠেছে। ‘উইকেটে টার্ন পাচ্ছিলাম। তাই চেষ্টা করেছি একটা জায়গায় বল করা, উল্টাপাল্টা কিছু চিন্তা করিনি। সিরিজ জিতেছি আলহামদুলিল্লাহ। অনুভূতি বলতে… আসলে অনেক খুশি লাগছে।’
আজ মিরপুরে ছোট রানের ম্যাচটিতে নায়কের ভূমিকা রেখেছিল তিনজন। প্রথমে নাসুম পরে মোস্তাফিজ এবং তুলির শেষ আঁচড়ের রাঙালো মাহমুদউল্লাহ তৃতীয়। তবে টাইগার অধিনায়কের কণ্ঠে সবার বন্দনা, ‘টিম ম্যানেজমেন্ট এবং দলের ছেলেদের কৃতিত্ব দিতেই হবে। আজকে ম্যাচ জেতার এবং সিরিজ জেতার ক্ষুধা ছিল। বাংলাদেশের হয়ে আরও একটি ম্যাচ জেতার সুযোগ সামনে। যেসব জায়গায় প্রয়োজন সেসব নিয়ে কাজ করে আরো ভালো পারফর্ম করতে হবে।’
চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতে অবশ্য ব্যাটিং ব্যর্থতার পরও দারুণ লড়াই করেছিল সফরকারী কিউইরা। দুর্দান্ত ছিলেন রাচিন রাবিন্দ্র ও আজাজ প্যাটেল। মিতব্যয়ী এই দুজনে চাপে রেখেছিল টাইগারদের। তাদের করা আট ওভারে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা নিতে পেরেছিল মাত্র ১৭ রান, হারিয়েছিল দুই উইকেট।
এদিন মিরপুরে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে নাসুমের তোপে পড়ে কিউইরা। শুরুতে রাচিনকে ফেরানোর পর ভয়ংকর অ্যালেনকেও ফেরার নাসুম। কিউইরা পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে এদিন নিতে পারে মাত্র ২২ রান, হারায় ২ উইকেট। পরে উইলকে নিয়ে লাথাম ৩৫ রানের জুটি গড়ে বড় রানের আশা দেখালেও তাকে ফিরিয়ে তা গুড়িয়ে দেন মেহেদি। এর পর আবার নাসুম শো। পরপর দুই উইকেট তুলে নিয়ে আশা জাগান হ্যাটট্রিকের। তাতেই ভিত নড়ে যায় কিউইদের। শেষের দিকে মোস্তাফিজের তোপে ৯৩ রানেই থামে সফরকারীরা। কিউইদের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৮ বলে ৪৬ রান করেন উইল ইয়ং।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের হিসেবে ছোট স্কোর হলেও টার্গেটে খেলতে নেমে বাজে শুরু পায় বাংলাদেশ। উড়িয়ে মারতে গিয়ে লিটন ফেরেন মাত্র ৬ রানে। পরে একই ভাবে আউট হন সাকিব আল হাসানও (৮)। চাপ কাটাতে আসা মুশফিক কোনো রান করেই শঙ্কা বাড়িয়ে দেন আরো। অবশ্য সেখানে হাল ধরেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ ও নাঈম। ২৯ করে নাঈম ফিরলে বাড়ে শঙ্কা। অবশ্য একবার দারুণ ভাবে আউটের হাত থেকে বেঁচে যান টাইগার অধিনায়ক। আর শেষের বন্ধুর পথটা তরুণ আফিফকে নিয়ে পারি দিয়েই গড়েন ইতিহাস।