আফগান সরকারের স্বীকৃতি আদায়ে তৎপর পাকিস্তান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

সঙ্গে শর্তসাপেক্ষে আলোচনায় বসতে রাজি পাকিস্তান
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি। ফাইল ছবি

আফগানিস্তান ইস্যুতে পুরোনো দৃষ্টিভঙ্গি বাদ দিয়ে বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় বাস্তববাদী মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে পাকিস্তান। বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি এই আহ্বান জানান বলে জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, কাবুলে তালেবানের নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হওয়ার পরপরই এই ধরনের বিবৃতি দেওয়ার মাধ্যমে কার্যত আফগানিস্তানকে স্বীকৃতি দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে পাকিস্তান। এছাড়া অর্থনৈতিক ও মানবিক সংকট এড়ানোর কাজে সহায়তা করতে তালেবানের নেতৃত্বধীন আফগানিস্তানকে ছয়টি দেশ নিয়ে গড়া আঞ্চলিক জোটে আমন্ত্রণ জানানোরও পরামর্শ দেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

এদিকে তালেবান কাবুলে সরকার গঠন করলেও সেটি অন্তর্ভুক্তিমূলক না হওয়ায় সমালোচনা করেছে পশ্চিমা দেশগুলো। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের এই আহ্বানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ঠিক কতটা সাড়া দেবে, তা নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা।

বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউন জানিয়েছে, বুধবার আফগানিস্তান ইস্যুতে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নেন শাহ মাহমুদ কোরেশি। কাবুলের বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে প্রথমে ইরান, চীন, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং তাজিকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের নিয়ে একটি ভার্চ্যুয়াল মিটিংয়ের আয়োজন করেন তিনি।

পরে ওই একই ইস্যুতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন এবং জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলাদা একটি বৈঠকে অংশ নেন কোরেশি। উভয় বৈঠকেই পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বার্তা ছিল পুরোপুরি পরিষ্কার। বার্তাটি ছিল- আফগানিস্তানের নতুন বাস্তবতাকে মেনে নিতে হবে এবং বিশ্বকে সেই অনুযায়ী এগিয়ে যেতে হবে।

যদিও অতি-সতর্কতার সঙ্গে লেখা বিবৃতিতে শাহ মাহমুদ কোরেশি স্পষ্টভাবে এই কথাটি সামনে আনেননি। তবে সেখানে যা লেখা আছে তাতে এতটুকু বোঝার জন্য যথেষ্ট যে- পাকিস্তান চায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আফগান তালেবান সরকারের সঙ্গে কাজ করুক।

ভার্চ্যুয়াল মিটিংয়ে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘নতুন পরিস্থিতিতে প্রয়োজন পুরোনো দৃষ্টিভঙ্গি বাদ দেওয়া। আমাদের ভেতর নতুন উপলব্ধি আনতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় বাস্তববাদী মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।’

পাকিস্তানের আশঙ্কা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তালেবানের সঙ্গে কাজ করতে না চাইলে দেশটিতে মানবিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হতে পারে। আর তাই যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার সময় ওয়াশিংটনের হাতে মজুত থাকা আফগান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আটকে না রাখার ব্যাপারেও আহ্বান জানান কোরেশি। তালেবান কাবুলের ক্ষমতা নেওয়ার পর ওই রিজার্ভ আটকে রাখার কথা জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।

তুরস্ক, যুক্তরাজ্য, স্পেন, ভারত, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এবং সামরিক জোট ন্যাটো মহাসচিবের উপস্থিতিতে একটি বৈঠকে শাহ মাহমুদ কোরেশি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে (কোনো দল বা সরকার নয়), আফগানিস্তানের মানুষকেই সবার আগে গুরুত্ব দিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে সংরক্ষিত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে যদি আফগানিস্তানের প্রবেশাধিকার না থাকে, তাহলে দীর্ঘদিন ধরে দুঃখ-কষ্টে জর্জরিত আফগান নাগরিকদের দুর্ভোগ কখনও কমবে না।’

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার আফগানিস্তানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষণা করেছে তালেবান। দেশটির নতুন এই সরকারের নেতৃত্বে রয়েছেন মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ। কোনো নারীর স্থান না হওয়া নতুন এই সরকারে এমন সব জ্যেষ্ঠ ও কট্টরপন্থি তালেবান নেতাদেরকে স্থান দেওয়া হয়েছে, যারা গত দুই দশক ধরে দেশটিতে মার্কিন বাহিনীর ওপর জঘন্য সব হামলা পরিচালনার জন্য অভিযুক্ত।

আলজাজিরা জানিয়েছে, আফগানিস্তানের নতুন সরকারপ্রধান মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ জাতিসংঘের কালো তালিকায় রয়েছেন। ১৯৯৬-২০০১ সালে তালেবানের প্রথম দফার সরকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ওই সময়ে তালেবান সরকারে দায়িত্ব পালন করার কারণেই তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে জাতিসংঘ।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে এক সংবাদ সম্মেলনে তালেবানের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ জানান, নতুন প্রধানমন্ত্রী মোল্লা হাসান আখুন্দের ডেপুটি হিসেবে অর্থাৎ উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাজ করবেন তালেবানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা আবদুল গনি বারাদার।

শেয়ার করুন