ওল্ড ট্রাফোর্ডে রোনালদোর রাজকীয় প্রত্যাবর্তন

ক্রীড়া ডেস্ক

ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো

ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্রাফোর্ডে রাজকীয় প্রত্যাবর্তনই হলো ক্রিশ্চিয়ানা রোনালদোর। দ্বিতীয় অভিষেকে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই করলেন জোড়া গোল। সেই জোড়া গোলে ভর করে আজ (শনিবার) ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে নিউক্যাসল ইউনাইটেডকে ৪-১ ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়েছে ম্যান ইউ।

৩৬ বছর বয়সী ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো সাড়া জাগিয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে ফিরলেও ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে এসে তিনি প্রিমিয়ার লিগে কতটা প্রভাব ফেলতে পারবেন সেই নিয়ে বিস্তর জল্পনা ছিল। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, ‘খোদ সিআরসে ভেনকে সংবাদমাধ্যমে এসে বলতে হয়েছে, ছুটি কাটাতে নয়, ম্যানইউর হয়ে ট্রফি জিততেই এসেছি আমি।’

তবে শুধু কথাতেই নয়, কাজেও প্রমাণ দিলেন পর্তুগিজ এই রাজপুত্র। ম্যানইউর হয়ে অভিষেক ম্যাচেই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে দলকে জেতালেন। নিউক্যাসলের বিপক্ষে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে শুরু থেকেই আধিপত্য ছিল ইউনাইটেডের। কিন্তু কেমন চেনা যাচ্ছিল না বিশ্বসেরা ফুটবলার রোনালদোকে। প্রথম বিশ মিনিট বলতে গেলে পায়ে বলই পাননি। তবে তারপরই স্বরূপে ফেরেন তিনি।

বলতে গেলে, গোটা প্রথমার্ধই রোনালদোকে আটকে রেখেছিল নিউক্যাসল। কিন্তু সিআর সেভেন বলে কথা! তাকে আটকানো কেবল মুশকিলই নয়, অসম্ভবও। প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে বল পেয়ে গোল করতে কোনো ভুল করেননি। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জার্সিতে দ্বিতীয় অভিষেকে গোল করলেন রোনালদো। মুখের উপর জবাব দিলেন নিন্দুকেরও।

এদিকে, ১-০ গোলে এগিয়ে থেকে প্রথমার্ধ শেষ করার পর বেশিক্ষণ লিড ধরে রাখতে পারেনি ম্যানইউ। দ্বিতীয়ার্ধের ৫৬ মিনিটে হাভিয়ার ম্যানকুইলো বল পেয়ে রেড ডেভিলসের রক্ষণকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দুরন্ত একটি গোল করে দলকে সমতায় ফেরান।

তবে তারপরই আবারো পাল্টা আক্রমণ ‘গোল মেশিন’ রোনালদোর। বয়স যে তার কাছে নেহাৎ-ই সংখ্যা। সেটা আরও একবার বুঝিয়ে দিলেন রোনালদো। ১২ বছর ১১৮ দিন বাদে ফের ইউনাইটেডের হয়ে খেলতে নেমেছেন। কিন্তু তার ছন্দে এতটুকু মরচে ধরেনি। বরং অভিজ্ঞতা তাকে আরো উজ্জ্বল করেছে। ম্যাচের ৬২ মিনিটে কার্যত একক দক্ষতাতেই ইউনাইটেডকে ফের ২-১ এগিয়ে দেন রোনালদো।

রোনালদোর ছোঁয়ায় যেন আরও এক পর্তুগিজ তারকা ব্রুনো ফার্নান্ডেজও দুরন্ত ছন্দে। ম্যাচের ৮০ মিনিটে প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে জোরালো শটে ব্যবধান ৩-১ করেন ব্রুনো ফার্নান্ডেজ। এরপর অতিরিক্ত সময়ে জেসি লিংগার্ডের গোলে ব্যবধান আরও বাড়ায় রেড ডেভিলসরা।

পর্তুগিজ রাজপুত্রকে বরণে প্রস্তুতই ছিল ঐতিহাসিক ওল্ড ট্র্যাফোর্ড ময়দান। ফুটবল বিষয়ক ওয়েবসাইট মার্কার প্রতিবেদনে দেখা যায়, শনিবার ম্যাচ শুরুর কয়েক ঘন্টা আগেই দর্শকে পরিপূর্ণ হয়ে যায় ওল্ড ট্র্যাফোর্ড। আর সবার গায়েই প্রিয় সিআর সেভেনের জার্সি।

প্রথম পর্তুগিজ ফুটবলার হিসেবে ২০০৩ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে পা রেখেছিলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের ছোঁয়ায় নিজেকে নিয়ে যান অনন্য উচ্চতায়। প্রিয় গুরুর কাছে তাই ঋণ শোধ হওয়ার নয় সিআর সেভেনের। পুরনো ঠিকানায় এসেছেন তাও কয়েকদিন পেরিয়ে গেছে। সমর্থকদের আর তর সইছে না রোনালদোকে মাঠে দেখার। এরইমধ্যে পিএসজিতে অভিষেক হয়ে গেছে মেসির। রোনালদোর অভিষেক নিয়ে অপেক্ষা যেন শেষ হচ্ছিল না।

সবার অপেক্ষা শেষ হয় নিউক্যাসেল ম্যাচেই। এ ম্যাচেই ৭ নম্বর জার্সিতে পুরোনো সাম্রাজ্যে আবারও রাজত্ব শুরু করেন রোনালদো। ক্যারিয়ারে আজ যা অর্জন তার ভিত্তিটা যে হয়েছিল ইউনাইটেডেই। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের লিগে ৭ বার শিরোপা জয়ের স্মৃতি আছে রোনালদোর। এর মধ্যে তিনটিই ইউনাইটেডের হয়ে।

ইউনাইটেডের হয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে আরও শিরোপা জিততে চান রোনালদো। সোলশায়ারও খুশি এমন হীরা পেয়ে। গেল মৌসুমে রানার্সআপ। এ মৌসুমে ২০১২-১৩ সালের পর থেকে ইপিএলের শিরোপা না পাওয়ার আক্ষেপ ঘোচাতে চায় ইউনাইটেড।

শেয়ার করুন