জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ পাঁচজনকে ফের ২ দিনের রিমান্ডে দিয়েছেন আদালত।
রাজধানীর ভাটারা থানার সন্ত্রাস বিরোধ আইনের মামলায় রবিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ-উর-রহমান এ রিমান্ডের আদেশ দেন।
রিমান্ডে যাওয়া অপর আসামিরা হলেন- জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য ইজ্জত উল্লাহ, মোবারক হোসেন, ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি ইয়াসিন আরাফাত ও রফিকুল ইসলাম খান।
একই আদালত ফের রিমান্ড আবেদন না থাকায় দলটির অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ ও আব্দুর রবকে চার দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
অন্যদিকে জামায়াতের কর্মী মনিরুল ইসলাম ও আবুল কালাম নামে দুইজন চার দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শহিদুল ইসলাম আসামি মনিরুল ইসলামের এবং আরেক মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোর্শেদ আল মামুন ভূঁইয়া আসামি আবুল কালামের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়া হয়।
এরআগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান জোনাল টিমের পরিদর্শক (নি.) কাজী ওয়াজেদ মিয়া রিমান্ডে থাকা ৯ আসামিকে আদালতে হাজির করেন। মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ ৫ জনের ফের ১০ দিনের রিমান্ড, দুই আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি এবং অপর দুই আসামিকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, ‘রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা মামলা সংক্রান্ত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে, যা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তদন্তে জানা যায়, এ পাঁচ আসামিসহ তাদের অন্যান্য সহযোগীরা ঘটনার দিন ও সময়ে ঘটনাস্থলে সমবেত হয়ে বর্তমান সরকারকে অবৈধভাবে উৎখাত, প্রজাতন্ত্রের ব্যক্তিসত্ত্বা বা প্রজাতন্ত্রের সম্পত্তির ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন। তারা বিভিন্ন উস্কানিমূলক লিফলেট তৈরি করে তা বিলি করে সাধারণ মানুষকে ধ্বংসাত্মক কাজে উদ্বুদ্ধ করেন বলে জানা যায়। ’
আরও বলা হয়, ‘আসামিরা একটি রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় এরূপ ধ্বংসাত্মক কাজের মাধ্যমে অবৈধ পন্থায় সরকার উৎখাতে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছিল এবং ষড়যন্ত্র করে প্রজাতন্ত্রের ব্যক্তি সত্ত্বা এবং সম্পত্তির ক্ষতিসাধনে লিপ্ত ছিল। তারা সরকারকে অবৈধভাবে উচ্ছেদ করার লক্ষ্যে সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তাড়ায় আর কী কী পরিকল্পনা করেছিল, পরিকল্পনার নেপথ্যে আর কে কে জড়িত, দেশের অখণ্ডতা, সংহতি, জননিরাপত্তা বা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করার কাজে তারা কী ধরনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল এবং এ ধরনের কাজে তাদের কোথা থেকে, কিভাবে অর্থ সংস্থান হয় তা এখনো সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি।’
মামলাটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং গুরুত্বপূর্ণ। আসামিরা জননিরাপত্তা বিঘ্ন করে অবৈধ পন্থায় সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। তাদের আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রয়োজন। এ অবস্থায় ৫ আসামির রিমান্ড মঞ্জুরের প্রাথনা করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
আসামিদের পক্ষে তাদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুর রাজ্জাক রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু এর বিরোধীতা করেন।
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আসামিদের দুই দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
গত ৭ সেপ্টেম্বর এ ৯ আসামির চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এ মামলায় গত ১০ সেপ্টেম্বর সাবেক এমপি মাওলানা আ ন ম শামসুল ইসলাম এবং তার বাবুর্চি ইমাম হোসেনের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
গত ৬ সেপ্টেম্বর রাতে ভাটারা এলাকা থেকে গোলাম পরওয়ারসহ ৯ জনকে আটক করে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, জামায়াতের নেতারা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসায় গোপন বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। বৈঠকে তারা রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র ও নাশকতার পরিকল্পনা করছিলেন। এ ঘটনায় ভাটারা থানার এসআই হাসান মাসুদ মামলাটি দায়ের করেন।