যেখানে অনার্স-মাস্টার্স চালু করার অবকাঠামো নেই সেখানেও জনপ্রতিনিধিদের চাপে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তা চালু করতে বাধ্য হয়েছে। যত্রতত্র অনার্স-মাস্টার্স খুলে সনদ দেওয়া হয়েছে‑ বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
আজ বুধবার জাতীয় সংসদে কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৬ ভাগ শিক্ষার্থী বেকার থাকেন এমন পরিসংখ্যানের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সারাদেশে এমনকি প্রত্যন্ত অঞ্চলেও যেখানে অনার্স-মাস্টার্স চালু করার অবকাঠামো নেই সেখানে আমাদের জনপ্রতিনিধিদের কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বাধ্য হয়েছে তা চালু করতে। যেখানে যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক নেই সেখানেও অনার্স-মাস্টার্স খুলে যত্রতত্র সনদ দেওয়া হয়েছে। তার জন্য আমরা জনপ্রতিনিধিরাই অধিকাংশ দায়ি।
এই দিকটা কাটিয়ে ওঠতে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কাজ করছে। অনেকগুলো শতবর্ষী প্রতিষ্ঠান আছে, অনেকগুলো খুবই ভালো প্রতিষ্ঠান। সেগুলো ছাড়া আর বাকিগুলোতে মাস্টার্সের বিষয় থাকবে না। সেখানে অনার্স থাকবে, বিএ, বিএসসি, বিকম থাকবে। ডিপ্লোমা করানো হবে। যাতে তারা বিভিন্ন কর্মে যুক্ত হতে পারেন।
তিনি বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটিতে সংসদ সদস্যদের সভাপতিত্বের মামলাটি এখনও বিচারাধীন। কোর্টের মামলার বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। আমি আইনমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করেছি। তাঁরা আমাকে আশ্বস্ত করেছেন যে বিষয়টি দেখবেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, করোনাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ছিলো তা সঠিক নয়। শ্রেণিকক্ষে পাঠদান বন্ধ ছিলো। তবে টেলিভিশন ও অনলাইনের মাধ্যমে পাঠদান পুরোপুরি চলমান ছিলো। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে পাঠদান চলছে। আর পরীক্ষাও চলেছে। সরকারি ও বেসরকারি সকল বিশ্ববিদ্যালয়েই চলেছে। খুব একটা সেশনজটেরও সুযোগ বেশি নেই। আমরা খুব সহজে এই সমস্যার সমাধান করতে পারবো।
তিনি বলেন, আমরা নতুন শিক্ষাক্রমে যাচ্ছি। পিএসসি ও জেএসসি নিয়ে যা যুগোপযোগী আমরা ঠিক সেইভাবেই করবো।
এনটিআরসি নিয়োগে পুলিশ ভেরিফিকেশন এখন খুবই প্রয়োজনীয় বিষয়। এখন জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসসহ নানান রকমের সমস্যা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যেভাবে জাল বিস্তার করছে। সেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে সজাগ ও সতর্ক থাকা উচিত।
শিক্ষার মান সম্পর্কে বিরোধী দলীয় সংসদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, শিক্ষার মান নিয়ে আমাদের প্রায়শ প্রশ্ন করা হয়। কিন্তু আমাদের এখান থেকে পাস করে দেশে ও বিদেশে যে সাফল্য আমরা দেখি, তাতে শিক্ষার মান তলিয়ে গেছে‑ এই কথাটি বলবার সুযোগ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মানসম্পন্ন নন এই কথাগুলোও আসে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ভিসি নিয়োগ দেওয়ার সময় অনেকগুলো বিষয় সামনে আনা হয়। তাঁর অ্যাকাডেমিক এক্সিলেন্স, প্রশাসনিক দক্ষতা ও নেতৃত্বের গুণাবলী দেখা হয়। সবকিছু দেখে আমরা প্যানেল নির্ধারণ করি। তারপর সেটা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যায়, সেখানেও যাচাই-বাছাই করা হয়। তারপরে সেটা মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে যায়। দীর্ঘ ভেটিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা চূড়ান্ত করা হয়। এখন পর্যন্ত যে অভিযোগ এসেছে। তা খুব হাতেগোনা।
- আরও পড়ুন >> সমালোচনা আমাকে আরও শক্তিশালী করে: জাহিদ মালেক
তিনি বলেন, অনেক সময় দেখা যায় ভিসির মেয়াদ শেষ হয়ে আসছে। তখন অনেকই নতুন ভিসি হতে চান। সেকারণে যিনি দায়িত্বে থাকেন। তাঁর সময়কাল নিয়ে প্রশ্ন তোলবার জন্য নানান কথা তুলে ধরা হয়। কিন্তু কোন জায়গায় কোন অভিযোগ আসলে আমরা ইউজিসির মাধ্যমে তদন্ত করি।
তিনি বলেন, চাকরিপ্রার্থী বলেন‑ তিনি চাকরি পান না। আর দাতা বলেন, তিনি যোগ্য লোক খুঁজে পাচ্ছেন না। দুটোর মাঝে যে দূরত্ব সেটা দূর করার জন্য আমরা সফট স্কিল শিখানোর কাজ করছি।
শিক্ষক নিয়োগের অনিয়ম প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষক নিয়োগের ন্যূনতম যোগ্যতার একটি নীতিমালা করে দেওয়া হয়েছে ইউজিসির মাধ্যমে। ইউজিসির সক্ষমতার বৃদ্ধির জন্যও কাজ করছি। আশা করি, খুব শিগরিই এটা সংসদে উঠবে।
স্কুল-কলেজ সরকারিকরণের প্রক্রিয়া দীর্ঘ উল্লেখ করে দীপু মনি বলেন, এই প্রক্রিয়াটি খুবই জটিল। দীর্ঘদিন আগে তাঁরা (শিক্ষক) নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন। তাদের নিয়োগের সঠিক কাগজপত্র অনেক জায়গায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারিকরণ করা হবে বলার পরে অনেক জায়গায় অনিয়ম করবার একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। এটি সঠিকভাবে করার জন্য আমরা জনবল নিয়োগ করে সেটি দ্রুততার সঙ্গে শেষ করতে চাচ্ছি। কাগজের প্রয়োজনীয়তা যতো পারি কমানোর চেষ্টা করছি।