সব সমালোচনাকে ইতিবাচক হিসেবে নেন দাবি করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, আমি সমালোচনা পছন্দ করি। কারণ এটা আমাকে শক্তিশালী করে। তবে এ সমালোচনা অবশ্যই সঠিক হতে হবে।
বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট বিলের ওপর বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যদের জনমত যাচাইয়ের আলোচনার পর দেওয়া বক্তৃতায় এসব কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
সমালোচনার মুখে জাহিদ মালেক সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনেক কাজ আপনারা বুঝতে পারেন না।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে কয়েকটি আইন প্রণয়নের কার্যক্রমে মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগের বিরুদ্ধে জবাব দিতে গিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আপনার যে কথাগুলো বলছেন অধিকাংশই প্রাইভেট সেক্টরের। যে দুর্নীতির কথা বলেন সেগুলো অধিকাংশই প্রাইভেট সেক্টরে হয় এবং যেখানেই হয় আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিই। অনেকেই জেলে আছে। যেখানেই সমস্যা দেখা দেয় আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করি।
তিনি বলেন, দেশে যদি ভালো ব্যবস্থা না থাকতো তাহলে মানুষের গড় আয়ু ৭৩ বছর হতো না, এটা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটা অবদান। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এমডিজি (সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য) পুরস্কার পেয়েছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ভ্যাকসিন হিরো হয়েছেন, সাউথ সাউথ পুরস্কার পেয়েছেন। কাজ না করলে এ পুরস্কারগুলো পাওয়া যায় না। কাজেই এটা বাংলাদেশ পেয়েছে।
জাহিদ মালেক বলেন, আজ সংসদ ভালো জমেছে। আপনারাও বলবেন আমি জবাব দেবো। প্রস্তুত হয়ে এসেছি।
তিনি আরও বলেন, জনবলের ঘাটতি আছে আমরা মানি। কিন্তু ইতোমধ্যে এই করোনার সময়ও প্রায় ৩০ হাজার লোক নিয়োগ দিয়েছি। এছাড়া ১০ হাজার ডাক্তার নিয়োগ হয়েছে, আরও চার হাজার নিয়োগের অনুমোদন হয়েছে, সেটাও আপনারা পেয়ে যাবেন। প্রায় আট হাজার নার্স নিয়োগের ব্যবস্থা হচ্ছে, সেটাও পেয়ে যাবেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, টেকনোলজিস্টের বিষয়ে আমরা জানি ঘাটতি আছে। আমরা চার হাজার টেকনোলজিস্ট নেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলাম। এ নিয়ে কিছু আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে বলে আমি নিজেই তদন্ত দিয়েছি, সেই বিষয়গুলো দেখা হচ্ছে। দেখে একটা সিদ্ধান্ত হবে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমাদের তিন-চার হাজার টেকনোলজিস্ট দিয়ে কাজ হবে না, আমরা ১০-১২ হাজার টেকনোলজিস্ট নিয়োগের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
- আরও পড়ুন >> করোনায় একদিনে আরও ৫১ জনের মৃত্যু
জাহিদ মালেক বলেন, আইসিইউ যেন ভালোভাবে চলে সেজন্য প্রধানমন্ত্রী আইনকে উপেক্ষা করে ৪০৯ জন অ্যানেস্থেসিয়ান নিয়োগ দিয়েছেন। যারা আইসিইউতে কাজ করেন, তারা আগামী দুই-চারদিনের মধ্যে কাজে যোগ দেবেন। এটা একটা নজিরবিহীন নিয়োগ হয়েছে।
পরে বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ বলেন, বিএনপির সময় কি কোনো হাসপাতালে ৩৮ লাখ টাকা দিয়ে পর্দা কেনা হয়েছিল? গত ১০ বছরে যে হাজার হাজার কোটি টাকার যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে তার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো ব্যবস্থা আছে?
তিনি অভিযোগ করে বলেন, পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে ১৩ বছর আপনারা ক্ষমতায় আছেন। দেশের গণতন্ত্রের সূচক কোথায় আছে? প্রতিদিন গণমাধ্যমে এমন কোনো বিভাগ নেই যেখানের দুর্নীতির খবর প্রকাশ হচ্ছে না। এগুলো পড়েন। গত ১২ বছরে ১০ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তি এগিয়ে যাচ্ছে। আজ এ বিষয়গুলো অহেতুক দোষারোপ না করে আমরা দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। গণতন্ত্রের যে সংকট চলছে, গণতন্ত্রের যে সংকট দাঁড়িয়ে গেছে। এই সংকট থেকে আমরা কীভাবে বেরিয়ে আসবো, মানুষের ভোটাধিকার আমরা কীভাবে নিশ্চিত করবো এ সংকটগুলো নিয়ে আলোচনা করি।
তার প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপির হারুন সাহেব বলেছেন, ৩৮ লাখ টাকা দিয়ে পর্দা কেনা হয়েছে। কিন্তু এটা কোথায় হয়েছে আমার জানা নেই। এটা কেনা হয়নি। ভুল তথ্য দিলে জনগণ ভুল বোঝে। এটা সঠিক নয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০ হাজার ইউনিট রয়েছে। এর মধ্যে যন্ত্রপাতি রয়েছে। এটা ব্যবহার হলে একটা সময় তা নষ্ট হয়ে যায়। একটা সময় এটা ঠিক করতে হয়। যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ একটি চলমান প্রক্রিয়া। তা আমরা করে যাচ্ছি।