দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় সম্প্রতি প্রস্তাবিত জাতীয় শিক্ষাক্রম অনুযায়ী, প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ শিক্ষাক্রমের রূপরেখায় অনুমোদন দিয়েছেন। আশা করা হচ্ছে, এর ফলে প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা সহজ হবে।
এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক হলো এতে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়নি। দশম শ্রেণির আগে কোনো পাবলিক পরীক্ষা হবে না। পরীক্ষার চেয়ে ক্লাসে মূল্যায়নকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে থাকবে না কোনো পরীক্ষাভীতি। তবে সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক-এর ফলে বন্ধ হবে কোচিং ও গাইড বাণিজ্য। দ্বিতীয়ত, প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রম অনুযায়ী একজন শিক্ষার্থী কোন বিষয় নিয়ে পড়বে তা ঠিক হবে উচ্চমাধ্যমিকে গিয়ে। এর পরিবর্তে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে ১০টি অভিন্ন বিষয়ে পড়ানো হবে। এটিও একটি ভালো প্রস্তাব বলে মনে করি। কারণ দেখা গেছে, মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিভাগ নির্বাচনে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। ফলে এ বিভাগ নির্বাচন খুব একটা কার্যকর হয় না; কর্মক্ষেত্রে কমই কাজে লাগে। প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রমের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এইচএসসি পরীক্ষা হবে দুবার। প্রথমবার একাদশ শ্রেণিতে, দ্বিতীয়বার দ্বাদশ শেণিতে। দুই পরীক্ষার নম্বর যোগ করে চূড়ান্ত ফল নির্ধারণ করা হবে। আর এসএসসি পরীক্ষা হবে বর্তমানের তুলনায় অর্ধেক নম্বরে। প্রতি বিষয়ে ৫০ নম্বরের পরীক্ষা স্কুলেই হবে, বাকি ৫০ নম্বরের পরীক্ষা নেবে শিক্ষা বোর্ড। সব মিলে বলা যায়, প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রমে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করার একটি প্রয়াস রয়েছে। তবে এর বাস্তবায়নই বড় বিষয়।
যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা হবে, এটাই স্বাভাবিক। সে জন্যই শিক্ষাক্রমে আনা হয় পরিবর্তন। তবে এবারের পরিবর্তন যে সবচেয়ে বড় তাতে কোনো সন্দেহ নেই-বলা যায় আমূল পরিবর্তন। তবে শুধু শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন আনাই যথেষ্ট নয়; শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো, শিক্ষা খাতে বরাদ্দ-এসব দিকেও দৃষ্টি দিতে হবে। সেইসঙ্গে প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিকতা হতে হবে।
সৈয়দ শিশির : কবি ও সাংবাদিক