ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে হাইকমান্ডের ওপর ক্ষোভ ঝাড়লেন বিএনপি নেতারা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি
ফাইল ছবি

দল পুনর্গঠন ও আগামী দিনের কর্মসূচি নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে দ্বিতীয় দিনের বৈঠক করেছে বিএনপির হাইকমান্ড। বুধবার বিকাল থেকে শুরু হওয়া ছয় ঘণ্টার বৈঠকে প্রসঙ্গের বাইরে গিয়ে নেতারা একাদশ জাতীয় নির্বাচনে দলের ভরাডুবির বড় কারণ হিসেবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে দুষেছেন। ঐক্যফ্রন্টের পেছনে সময় ব্যয় করার ক্ষোভ ঝেড়েছেন অনেকে। যদিও এমন কড়া বক্তব্যের কোনো জবাব দেননি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

বুধবার বিকাল চারটার দিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয় গুলশানে অনুষ্ঠিত হয় পূর্বনির্ধারিত বৈঠক। এতে অংশ নেন অর্ধশতাধিক কেন্দ্রীয় নেতা। স্থায়ী কমিটির সদস্য ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দলের যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক সহ সাংগঠনিক সম্পাদকসহ সম্পাদকমণ্ডলী। ঘণ্টা-ছয়েক চলে এই রুদ্ধদ্বার বৈঠক।

বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সভাপতিত্ব করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তবে বুধবার স্থায়ী কমিটির নেতারা কোনো বক্তব্য রাখেননি। আজ বৃহস্পতিবার তৃতীয় ও সমাপনী বৈঠক হবে। যেখানে সব বিষয়ে কথা বলবেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

বৈঠক অংশ নেওয়া একজন সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ইস্যুতে বেশিরভাগ নেতাই তীর্যক বক্তব্য দেন। অনেকে ইস্যুর বাইরে গিয়ে ফ্রন্টকে তুলোধুনো করেন।’

বৈঠকে সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ জোরালো কণ্ঠে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চান ঐক্যফ্রন্ট প্রধান ড. কামাল হোসেনের অধীনে নির্বাচন করে কী ফল পেয়েছে দল? বরং ফ্রন্ট করার পর থেকে দলের অনেকের মন ভেঙেছে। তৃণমূলে মান অভিমান সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে বৈঠক শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আজকে মূলত আলোচনা হয়েছে বর্তমান রাজনৈতিক এবং সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে। আমাদের আরও দুয়েকটি সভা হতে পারে। এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আগামী শনিবার বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ওই বৈঠকে আমরা নির্বাহী কমিটির সদস্য যারা আছেন এবং অন্যান্য পর্যায়ে আরও বৈঠক করব।’

ফখরুল বলেন, ‘বৈঠক থেকে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে গণমাধ্যমে যে মিথ্যা ভিত্তিহীন বানোয়াট অপপ্রচার চালানো হয়েছে তার তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে।

সংলাপ ইস্যুতে আরেকজন সাংগঠনিক সম্পাদক জানতে চান, গতবার নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে সংলাপ করে কী লাভ হয়েছে? এর ফসল দেখতে চেয়েছিলেন নেতাকর্মীরা। এটা কি শুধুই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বসে খাওয়া দাওয়ার দাওয়াত ছিল?

বৈঠক চলাকালীন ও বৈঠক থেকে বের হওয়ার পর একাধিক নেতার সঙ্গে কথা হয় সাংবাদিকদের।

বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, আমরা দলে ঐক্য চাই। তৃণমূলে বিভেদ চাই না৷ আমরা শৃঙ্খলা ও সুন্দর কমিটি চাই। সরকারবিরোধী আন্দোলনে যারা অভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে আসবে তাদেরকেই স্বাগত জানাবে বিএনপি। জাতীয়তাবাদী আর্দশের বাইরের কারোর সঙ্গে কোনো জোট কিংবা ফ্রন্ট চায় না নেতাকর্মীরা। আমরা এটা স্পষ্ট জানিয়েছি।

জামায়াতে ইসলামীকে নিয়েও বিক্ষিপ্ত আলোচনা হয়েছে৷ তবে নেতিবাচকও নয় আবার ইতিবাচকও নয়। একজন যুগ্ম মহাসচিব বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘ম্যাডাম কারাগার থেকে মুক্ত হয়েও মুক্ত হননি। সরকারের শর্তে বন্দি। আমরা আজও তাকে মুক্ত করতে পারিনি। অথচ উটকো বিষয় নিয়ে সময় ও শ্রম ব্যয় করেছি।

আরেকজন যুগ্ম মহাসচিব গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রসঙ্গে টেনে বলেন, ‘তিনি ভারসাম্যহীন। কখন কী বলেন ঠিক নেই’। এই কথা বলার সময় সিনিয়র অনেকেই হাসতে থাকেন। জাফরুল্লাহ চৌধুরী কোন মতাদর্শের তা নিয়েও নেতারা সংশয় প্রকাশ করেন।

বুধবারের বৈঠকেও নেতারা আন্দোলনে জোর দিয়েছেন। সংলাপ পরে আগে নির্দলীয় সরকারের অধীনে ভোটের ব্যবস্থা করতে হবে, নইলে ফল আগের মতোই হবে বলে মত দিয়েছেন তারা।

শেয়ার করুন