বেসরকারি এলপিজির দাম নির্ধারণ করতে পারলেও সরকারি এলপিজির দাম নির্ধারণ পারবে না এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (ইআরসি)- এমনই এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। যে কারণে আবারও বিপিসির হাতেই যাচ্ছে সে ক্ষমতা।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আইন অনুযায়ী, দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্য নির্ধারণ করার কথা কমিশনের। কিন্তু এতদিন বিদ্যুতের দাম ছাড়া কমিশন আর কোনও পণ্যের দাম নির্ধারণ করতো না। আদালতের নির্দেশে কমিশন চলতি বছরের শুরুতে এলপিজির দাম নির্ধারণে গণশুনানি করে। এরপর গত ১৩ এপ্রিল প্রথমবারের মতো সরকারি-বেসরকারি এলপিজির দাম নির্ধারণ করে দেয় কমিশন।
বেসরকারিভাবে সৌদি সিপি (কন্ট্রাক্ট প্রাইস) অনুযায়ী, বাংলাদেশ এলপিজি আমদানি করে। প্রতিমাসেই বদলে যায় এই দাম। অন্যদিকে সরকারিভাবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) গ্যাসক্ষেত্র থেকে বাই প্রোডাক্ট হিসেবে এলপিজি উৎপাদন করে।
এপ্রিলের পর থেকে প্রতি মাসের শেষদিকে সৌদি সিপি অনুযায়ী দাম নির্ধারণের আদেশ দিতে শুরু করে কমিশন। এক্ষেত্রে সরকারি এলপিজির দাম এপ্রিলের পর আর পরিবর্তন করেনি কমিশন যেহেতু এটি আমদানি করা হয় না। তবে বেসরকারি কোম্পানিগুলোর জন্য দাম প্রতিমাসেই বদলে যায়।
এমনই এক অবস্থায় এসে এখন জ্বালানি বিভাগের তরফ থেকেও বলা হলো, বিপিসির সরবরাহ করা এলপিজির দাম ঠিক করার দরকার নেই বিইআরসি’র।
জ্বালানি বিভাগের উপ-সচিব শামিমা ফেরদৌস এক চিঠিতে গত ৯ সেপ্টেম্বর জানায়, বেসরকারি এলপিজির সঙ্গে বিইআরসি সরকারি এলপিজির দর নির্ধারণ করছে। এতে করে সরকারি এলপিজি বাজারে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করতে পারছে না। একইসঙ্গে এলপিজি সরবরাহ কোম্পানি এলপি গ্যাস লিমিটেডের কমিশন ঠিকঠাক হয়নি।
ফলে সরকারি এলপিজির বাজারমূল্য নির্ধারণের দায়িত্ব বিইআরসির আওতার বাইরে রাখার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করেছেন এই উপ-সচিব। অর্থাৎ মন্ত্রণালয়ের পদস্থরাই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে চিঠিতে উঠে এসেছে।
এদিকে জ্বালানি বিভাগের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ শামসুল আলম। তিনি বলেন, দেশে এখন একেক কোম্পানির এলপিজির দাম একেক রকম। যে যার ইচ্ছেমতো দামে এলপিজি বিক্রি করে। ক্যাব ভোক্তাদের কথা বিবেচনা করে আদালতে রিট করে। এরপর আদালতের আদেশেই কমিশন দাম নির্ধারণের দায়িত্ব নেয়। এর আগে এই দায়িত্ব পালন করতো বিপিসি। তাতে সাধারণ মানুষের কোনও উপকার হতো না।
তিনি বলেন, কমিশন দাম নির্ধারণ শুরু করলেও ব্যবসায়ীদের কারণে বাজারে এই দাম তারা কার্যকর করতে পারছিল না। কারণ ব্যবসায়ীরা এই দাম মেনে নেয়নি। আবার কমিশনও তাদের আইন অনুযায়ী দাম না মানলে যে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা, নানা প্রতিবন্ধকতায় সেটা নিতে পারছিল না। এই অবস্থায় আমরা আবারও দাম কার্যকরের বিষয়ে আদালতের কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু আদালত এ বিষয়ে কোনও নির্দেশনা দেওয়ার আগেই জ্বালানি বিভাগ এমন এক সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এলপিজিসহ সব পেট্রোলিয়াম পণ্যের দাম বিইআরসির মাধ্যমে নির্ধারণ করা হলে ভোক্তারা তাদের সুবিধা পাবে, নইলে একপক্ষের সুবিধা দেখা হবে সবসময়। বিপিসি এখন এলপিজি কম আমদানি করলেও এক সময় সেটা বাড়তেই পারে। একই পণ্যের ক্ষেত্রে সরকারি দাম আর বেসরকারি দাম আলাদাভাবে নির্ধারণ করাটা কতখানি যুক্তিযুক্ত? তাই এই সিদ্ধান্ত জনস্বার্থবিরোধী বলে মনে করি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জ্বালানি সচিব আনিছুর রহমান বলেন, বিপিসির আবেদনের প্রেক্ষিতে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ সরকারি এলপিজি আমদানি করা হয় না। পরিমাণে কম উৎপাদন হওয়ার কারণে ব্যবহারও হয় খুবই সীমিত আকারে। এই অবস্থায় আমরা বিপিসির দিক বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সরকারি এলপিজির দাম বিপিসির হাতেই থাকছে। আর বেসরকারি এলপিজির দাম আগের মতোই বিইআরসি নির্ধারণ করবে।
প্রসঙ্গত, কমিশন ১২ এপ্রিল ভোক্তা পর্যায়ে সরকারি এলপিজি গ্যাসের প্রতি ১২.৫ কেজির সিলিন্ডারের দাম ৫৯১ টাকা নির্ধারণ করে দেয়।
দেশে অপরিশোধিত তেল প্রক্রিয়াজাত করার সময় উপজাত হিসেবে উৎপাদিত এলপিজি সংরক্ষণ করে সেটা বোতলজাত করে। আর এই এলপিজি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) এর নিয়ন্ত্রণে ‘এলপি গ্যাস লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানির মাধ্যমে বিক্রি করা হয়।