আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে দেশটির প্রধানমন্ত্রী মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দসহ শীর্ষ তালেবান নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পাকিস্তান, চীন ও রাশিয়ার বিশেষ দূত। এসময় তারা দেশটিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠনের জন্য ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীকে চাপ প্রয়োগ করেন। বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা পিটিআই ও সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকা।
পিটিআই জানিয়েছে, কাবুলে তালেবান নেতাদের বৈঠকের পর ওই তিন দেশের দূত আফগান নেতা হামিদ কারজাই এবং আবদুল্লাহ আবদুল্লাহর সঙ্গেও বৈঠক করেন। চীনের এক শীর্ষ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বার্তাসংস্থাটি জানিয়েছে, এসব বৈঠকে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই এবং দেশটির চলমান মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়।
কাবুলে নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত মনসুর আহমেদ খান এক টুইটার বার্তায় বলেছেন, আফগানিস্তানের জন্য পাকিস্তানের বিশেষ দূত সাদিক, রাশিয়ার জামির কাবুলফ ও চীনের ইউয়ে জিয়াইয়ং কাবুল সফর করেছেন। এসময় আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী হাসান আখুন্দসহ শীর্ষ নেতাদের প্রতি শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসন ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন।
মনসুর আহমদ খান অন্য একটি টুইটে লিখেছেন, ‘আফগানিস্তানের সকল প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও অন্যতম প্রধান দাবিই হচ্ছে নতুন তালেবান সরকারে সকল দল ও মতের অন্তর্ভুক্তি।’
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বুধবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, তিন দেশের বিশেষ দূত কাবুলে দেশটির ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি, অর্থমন্ত্রীসহ অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। একইসঙ্গে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই এবং সাবেক সরকারের অংশ আবদুল্লাহ আবদুল্লাহর সঙ্গেও বৈঠক করেন তারা।
পিটিআই বলছে, তালেবানের ক্ষমতা গ্রহণের পর সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই ও আবদুল্লাহ আবদুল্লাহর সঙ্গে এবারই প্রথম বিদেশি কূটনীতিকরা বৈঠক করলেন। তালেবান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করলেও কারজাই ও আবদুল্লাহ দেশটির রাজধানী কাবুলেই অবস্থান করছেন।
এর আগে গত সপ্তাহে তাজিকিস্তানের রাজধানী দুশানবেতে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে রাশিয়া, চীন, পাকিস্তান এবং ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা আফগানিস্তানে জাতীয় পর্যায়ে পুনর্মিলনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। এর ফলে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার দেশটির সকল জাতিগত-রাজনৈতিক দলের স্বার্থ বিবেচনা করবে।
অন্তর্ভুক্তি এবং নারীর অধিকার বজায় রাখার বিষয়ে তাদের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও তালেবান মন্ত্রিসভায় অল্পসংখ্যক সংখ্যালঘু প্রতিনিধি আছে, তবে কোনো নারীকে এখনও অন্তর্ভুক্ত করেনি গোষ্ঠীটি। এখন পর্যন্ত তালেবান অনুগতদের দিয়েই মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেন, এর (অনুগতদের দিয়েই মন্ত্রিসভা গঠন করার) ফলে তালেবানদের এগিয়ে যাওয়ায় সমস্যা হতে পারে।
অবশ্য তালেবানের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ আগে দেওয়া একটি প্রেস ব্রিফিংয়ে জানিয়েছিলেন, এটি একটি অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা, যা পরে পরিবর্তন করা যেতে পারে। তবে অন্যান্য তালেবান নেতাদের দেওয়া ইঙ্গিতে এই মতের প্রতি তাদের অনীহা রয়েছে বলে বোঝা যাচ্ছে।