পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, আমাদের আইনশৃঙ্খলার পেক্ষাপটে কিশোর গ্যাং বিশাল চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। দেশে কত প্রকার কিশোর অপরাধ বা অপরাধী আছে তাদের সংখ্যা কত, কারেকশন সেন্টার বা কিশোর সংশোধনাগারের সংখ্যা কত, কার ক্যাপাসিটি কত এগুলো নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। না হলে কিশোর অপরাধ দমন করা কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে।
বৃহস্পতিবার কিশোর অপরাধ দমনে সামাজিক প্রচারণার অংশ হিসেবে র্যাব নির্মিত একটি টেলিভিশন বিজ্ঞাপন বা টিভিসির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে পুলিশপ্রধান এসব কথা বলেন।
ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, দ্রূত এসব গ্যাপ পূরণ করতে হবে। না হলে কিশোর অপরাধ দমন করা কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে। আমার কিশোর সন্তানরা কোথায় কী করছে, সেটা দেখা বা কন্ট্রোল করতে হবে পিতা-মাতাকে।
পুলিশপ্রধান বলেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের গণতান্ত্রিক কাঠামোর আওতায় গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা দেশ উপযোগী, সময় উপযোগী আইন প্রণয়ন করছেন। আমাদের বিচার বিভাগ স্বাধীন। উচ্চ আদালত, হাইকোর্ট আপিল বিভাগ বিভিন্ন সময়ে গণতান্ত্রিক দেশের উপযোগী অনেক বিধান এবং নির্দেশনা দিচ্ছেন। ফলে সভ্য দেশের সমস্ত লক্ষণ ফুটে ওঠার বিষয় অনেক স্পষ্ট।
আমাদের কিশোর আইন হালনাগাদ করা হয়েছে। এই আইন হালনাগাদে যেটা হয়েছে, এখন আঠারো বছর পর্যন্ত বয়সের যে কেউ শিশু। যেটি বৃটিশ আমলের আইনে তাদেরকে ট্রিট করে না। ইতিপূর্বে কিশোর গ্যাংদের বিরুদ্ধে আমরা যেভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি, এখন সেভাবে করা সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমান আইন অনুযায়ী ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত বিচার পদ্ধতি, গ্রেপ্তার পদ্ধতি সব কিছু আলাদা। গ্রেপ্তার করার সঙ্গে সঙ্গে তাদেরকে প্রবেশন অফিসারের কাছে হস্তান্তর করতে হয়। আবার মুশকিল হচ্ছে যে, দেশে কোথায় কোন প্রবেশন অফিসার আছে আমরা জানি না। এই আইন বলবৎ করতে কত সংখ্যক অফিসার থাকতে হবে, বিস্তারিত বলা নেই। এসব অফিসার কাজ করেন সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণায়ের অধিনে। আর আমরা কাজ করি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধিনে। দুটি ভিন্ন মন্ত্রণালয়। এক্ষেত্রে সমন্বয় দরকার, আমরা সমন্বয়ের চেষ্টা করছি।
আইজিপি বলেন, যদি পর্যাপ্ত অফিসার না থাকে, তাহলে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে সে পরিমাণ অফিসার নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। আবার বললেও নিয়োগ হয় না। বর্তমানে একজন পিয়ন নিয়োগ করতে হলেও ১৩ টি ধাপ অতিক্রম করতে হয়। আর একধাপ যদি একমাস লাগে তাহলে ১৩ মাস। প্রচলিত পদ্ধিততে পিয়ন নিয়োগেও কোনোক্রমে দুই বছরের আগে আমাদের ক্ষমতা নেই। চাইলেও প্রবেশন্যাল অফিসার নিয়োগ হয়ে যাবে না। বর্তমানে এসব চ্যালেঞ্জ আমাদের রয়েছে। বর্তমানে আইন অনুযায়ী একজন কিশোর অপরাধীকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো যাবে না। পাঠাতে হবে কিশোর সংশোধানাগারে। আর সেগুলোর সংখ্যাও যথেষ্ট নয়। এখন বাংলাদেশে কত কিশোর অপরাধ বা অপরাধী আছে তাদের সংখ্য কত, কারেকশন সেন্টারের সংখ্যা কত, কার ক্যাপাসিটি কত এগুলো নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে।
পুলিশ প্রধান আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভিশন-২০৪০ বাস্তবায়নে কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। গণতান্ত্রিক দেশে উন্নয়নের ধারায় কিশোর গ্যাং কোনোভাবেই যেন বাধা না হয় সেদিকে আমাদের সবার নজর দিতে হবে।