পুঁজিবাজার চাঙ্গা রাখতে আরও কিছু উদ্যোগ বিএসইসির

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএসইসি
ফাইল ছবি

দেশের পুঁজিবাজার চাঙ্গা রাখতে আরও কিছু উদ্যোগ নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ আনার ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর আইপিও ইস্যু জমা দেওয়ার বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করতে যাচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী, মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর প্রতি বছর ন্যূনতম একটি আইপিও ইস্যু জমা দেওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু অনেক মার্চেন্ট ব্যাংক লাইসেন্স নিয়েও নিষ্ক্রিয় রয়েছে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে বিএসইসি।

এরই মধ্যে শেয়ার বাজারে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের তথ্য চেয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। গত তিন মাসে (জুন, জুলাই ও আগস্ট) মার্চেন্ট ব্যাংকের কত টাকা (কেনা দামে) বিনিয়োগ ছিল, তা জানাতে হবে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে। পাশাপাশি মার্চেন্ট ব্যাংক ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত চার বছরে কতগুলো কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) শেয়ার বাজারে এনেছে, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।

গত ১৬ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মো. কাওসার আলীর সই করা চিঠি সব মার্চেন্ট ব্যাংকের কাছে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনকেও (বিএমবিএ) এ চিঠি দেওয়া হয়েছে।

সূত্র মতে, পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিলের (সিএমএসএফ) জন্য আরও ১০০ কোটি টাকার চেক বা ব্যাংক ড্রাফট নিয়ন্ত্রক সংস্থার হাতে এসেছে।

বিএসইসির তথ্যমতে, গত ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিএসইসিতে ২১০ কোটি টাকার নগদ অবণ্টিত লভ্যাংশ জমা হয়েছে। তার সঙ্গে নতুন করে আরও প্রায় ১০০ কোটি টাকার চেক ও ব্যাংক ড্রাফট জমা হয়েছে। অর্থাৎ, নগদ ও বোনাস শেয়ার মিলে ৩১০ কোটি টাকা ফান্ডে জমা হয়েছে।

এদিকে বড় অঙ্কের মূলধন হারানোর পর গত সপ্তাহে দেশের প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন আড়াই হাজার কোটি টাকার ওপরে বেড়েছে। আগের সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছিল প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা।

গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৭৭ হাজার ৩৬ কোটি টাকা, যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল পাঁচ লাখ ৭৪ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ, সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে দুই হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। আগের সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছিল ১১ কোটি ৮৪৩ কোটি টাকা। বাজার মূলধন বাড়া বা কমার অর্থ, তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম সম্মিলিতভাবে ওই পরিমাণ বেড়েছে বা কমেছে। অর্থাৎ বাজার মূলধন বাড়লে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগকৃত অর্থের পরিমাণ বেড়ে যায়।

গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৬২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৯৮টির। আর ১৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

এতে গত সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ২২ দশমিক ২৯ পয়েন্ট বা দশমিক ৩১ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমেছিল ৩০ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট বা দশমিক ৪২ শতাংশ।

প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি গত সপ্তাহে ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক বেড়েছে। গত সপ্তাহজুড়ে সূচকটি বেড়েছে ৩ দশমিক ৯৫ পয়েন্ট বা দশমিক ২৫ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমেছিল ১৫ দশমিক ২১ পয়েন্ট বা দশমিক ৯৬ শতাংশ। আর বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক গত সপ্তাহে কমেছে। সপ্তাহজুড়ে এ সূচকটি কমেছে দশমিক ৯৯ পয়েন্ট বা দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। আগের সপ্তাহে এ সূচক বেড়েছিল ২৭ দশমিক ৪১ পয়েন্ট বা ১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ।

তথ্য বলছে, গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৯৪১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় দুই হাজার ২২৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ, প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ২৮২ কোটি ৫৮ লাখ টাকা বা ১২ দশমিক ৭০ শতাংশ।

এছাড়া গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৯ হাজার ৭০৯ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় ১১ হাজার ১২২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। সেই হিসাবে মোট লেনদেন কমেছে এক হাজার ৪১২ কোটি ৯০ লাখ টাকা বা ১২ দশমিক ৭০ শতাংশ।

গত সপ্তাহের ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৫৯৬ কোটি ৭২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা, যা মোট লেনদেনের ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩১৫ কোটি ৫৫ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। ২৪৬ কোটি ৯৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ওরিয়ন ফার্মা।

শেয়ার করুন