কর্মী সংকট কাটাতে ১০ হাজারের অধিক অস্থায়ী ভিসা দিচ্ছে যুক্তরাজ্য

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

যুক্তরাজ্য

লরিচালক ও পোল্টি খাতে কর্মী সংকট কাটাতে সাড়ে ১০ হাজারের অধিক অস্থায়ী ভিসা ইস্যুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাজ্য। গত শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) এ ঘোষণা দিয়েছে ব্রিটিশ সরকার। স্বল্পমেয়াদী এ ভিসার কার্যকারিতা থাকবে আগামী অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্ত।

ব্রেক্সিট পরবর্তী যুক্তরাজ্যকে আত্মনির্ভর করার কথা বলে সম্প্রতি কঠোর অভিবাসন নীতি গ্রহণ করে বরিস জনসনের সরকার। তাদের যুক্তি, দেশে বিদেশি কর্মীর নির্ভরতা অবশ্যই শেষ করতে হবে। কিন্তু হুট করে নেওয়া এমন সিদ্ধান্তে লরি, পোল্ট্রি, রেস্টুরেন্ট, জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতে মারাত্মক কর্মী সংকট দেখা দেয়। এর ফলশ্রুতিতেই অল্প সময়ের জন্য হলেও ফের বিদেশি কর্মী নিয়োগ দিতে শুরু করেছে তারা।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবর, যুক্তরাজ্যে আনুমানিক এক লাখ চালকের অভাব রয়েছে শুধু ভারী যানবাহনের ক্ষেত্রে। আরও কিছু খাতে কর্মী সংকটের জেরে যুক্তরাজ্যজুড়ে জ্বালানি সরবরাহে ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ট্যাংকার চালকের অভাবে পেট্রল পাম্পগুলোতে পৌঁছানো যাচ্ছে না পর্যাপ্ত জ্বালানি। ফলে গ্রাহকদের লম্বা লাইন লেগে গেছে সেখানে। আগামী দিনগুলোতে জ্বালানি সংকট আরও তীব্র হতে পারে আশঙ্কায় মানুষজন আগেভাগেই গাড়ির ট্যাংকি ভরতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।

এ অবস্থায় ব্রিটিশ পরিবহনমন্ত্রী গ্রান্ট শ্যাপস বলেছেন, তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পদক্ষেপ নিচ্ছেন। এসব পদক্ষেপে বড়দিনের আগেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আশা করছেন তিনি। শ্যাপস বলেছেন, সংশ্লিষ্ট খাতগুলোকেও নিজ নিজ ভূমিকা পালন করতে হবে। সেখানে কাজের অবস্থার উন্নতি ও নতুন চালকদের ধরে রাখতে বেতন বৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে হবে।

তবে দেশটির ব্যবসায়িক নেতারা মনে করছেন, যুক্তরাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপ সংকট কাটাতে যথেষ্ট নয়। ব্রিটিশ চেম্বারস অব কমার্সের সভাপতি রুবি ম্যাকগ্রেগর-স্মিথের মতে, এটি অগ্নিকুণ্ডের ওপর এক ফোঁটা পানি ফেলার সমান।

তিনি বলেছেন, নতুন ভিসার সংখ্যা একেবারেই অপর্যাপ্ত এবং সংকটের তীব্রতা মোকাবিলায় যথেষ্ট নয়। এছাড়া নতুন চালক নিয়োগে বাড়তি পরীক্ষার প্রভাব পড়তেও অনেক সময় লাগবে।

ব্রিটিশ সরকারের নতুন পদক্ষেপগুলোর লক্ষ্য দ্রুততম সময়ে স্থানীয় গাড়িচালকের সংখ্যা বৃদ্ধি করা। এর জন্য প্রয়োজনীয় বাড়তি পরীক্ষা নিতে সাহায্য করবে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। এছাড়া, ব্রিটিশ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সহযোগী সংস্থাগুলো চার হাজার মানুষকে ভারী যান চালনায় দক্ষ করতে তুলতে প্রশিক্ষণ দেবে। এসবের জন্য ব্যয় করা হচ্ছে লাখ লাখ পাউন্ড।

পাশাপাশি, যুক্তরাজ্যে বর্তমানে ভারী যান চালনায় লাইসেন্সধারী প্রায় ১০ লাখ মানুষের কাছে চিঠি পাঠানো হবে। যারা এখন আর গাড়ি চালাচ্ছেন না, তাদের কাজে ফিরতে অনুরোধ জানানো হবে এতে।

লরিচালকের অভাবে শুধু জ্বালানি সরবরাহেই নয়, সংকট দেখা দিয়েছে যুক্তরাজ্যের কারখানা, রেস্টুরেন্ট, সুপারমার্কেটগুলোতেও। গত মাসে ম্যাকডোনাল্ডসে মিল্কশেক ও বোতলজাত পানীয় ফুরিয়ে গিয়েছিল। ফাস্টফুড জায়ান্ট কেএফসি তাদের মেন্যু থেকে কিছু আইটেম বাদ দিতে বাধ্য হয়। মুরগির অভাবে বেশ কিছু আউটলেট বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে রেস্টুরেন্ট চেইন নান্দো’স।

সূত্র: এএফপি, ব্যাংকক পোস্ট

শেয়ার করুন