আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে। কিন্তু দেশের সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বলে কোনো সরকার নেই। বাংলাদেশে আর কোনোদিন তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবে না। তারা বলেন, অসাংবিধানিক কোনো দাবি মেনে নেওয়া হবে না। সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন উপলক্ষে মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনাসভায় তারা এসব মন্তব্য করেন।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত আলোচনাসভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী। উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিনের পরিচালনায় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
এতে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান ও শাজাহান খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সবুর, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খানসহ কেন্দ্রীয় এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নেতারা বক্তব্য দেন।
সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আজ একটি ব্র্যান্ডের নাম। তিনি নিজেই একটি ইতিহাস। ইতিহাসের প্রয়োজনে শেখ হাসিনার জন্ম হয়েছে। দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের মাধ্যমেই তিনি উঠে এসেছেন। দেশের সীমানা পেরিয়ে বিশ্বনেতার কাতারে তিনি পৌঁছেছেন। তার সাহসী নেতৃত্ব ও জাতিসংঘে তার দেওয়া বক্তব্য বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য ওবায়দুল কাদের আহ্বান জানান।
দলের মধ্যে দৃঢ় ঐক্য ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের শপথ নিতে হবে। দলের মধ্যে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। ত্যাগী কর্মীদের দিয়ে দল সাজাতে হবে। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন উপলক্ষে স্মার্ট আওয়ামী গড়ে তুলতে হবে। এজন্য দলের মধ্যে কোনো বসন্তের কোকিল নয়, ত্যাগীদের জায়গা করে দিতে হবে। যারা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত, তারা আগামী দিনে আওয়ামী লীগের টিকিট পাবে না।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, গতবার তো কামাল হোসেনকে এনে আপনারা নির্বাচনে নেতা বানিয়েছিলেন। আমার দলের পক্ষে, জোটের পক্ষে আমি বলতে চাই- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনে আমাদের নেতা। আপনাদের নেতা কে? টেমস নদীর পার থেকে পলাতক দণ্ডিত ব্যক্তি কি নির্বাচনে আপনাদের নেতা! পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী এ পরিচয় বহন করলে বাংলাদেশে আপনাদের (বিএনপি) অপ্রাসঙ্গিক রাজনীতি আরও অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবে। জনগণ দণ্ডিত পলাতক নেতাকে (তারেক রহমান) কোনোদিনই এদেশের নির্বাচনে নেতা হিসাবে মেনে নেবে না।
সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, অন্য সব গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে নির্বাচন হয়, বাংলাদেশেও সংবিধান অনুযায়ী সেভাবে নির্বাচন হবে। সময়মতোই নির্বাচন হবে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন নিয়ে আজ মাঠ গরম করবেন, পানি ঘোলা করবেন, দেশে বিশৃঙ্খলা করবেন, পরিবেশ নষ্ট করবেন, অগ্নিসন্ত্রাস করবেন, জ্বালাও-পোড়াও করবেন? কিন্তু পরিষ্কারভাবে বলে দিতে চাই- শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ। যে কোনো বিশৃঙ্খলা-সহিংসতার জবাব দিতে তারা প্রস্তুত।
বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি নাকচ করে দিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, বিএনপি আবারও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে। বাংলাদেশের সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বলে কোনো সরকার নেই। বাংলাদেশে আর কোনোদিন এ সরকার হবে না। কোনো গণতান্ত্রিক দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার হয় না, কোনো নিরপেক্ষ সরকার হয় না। ক্ষমতাসীন সরকারের নেতৃত্বেই নির্বাচন হয়। আর তা পরিচালনা করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। তাদের কাজ হলো সুষ্ঠু নির্বাচন করা।
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যকর করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেখিয়েছেন- দেশদ্রোহীদের বাংলার মাটিতে কোনো ঠাঁই নেই। মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে একটি অসাম্প্রদায়িক, লড়াকু এবং সম্প্রীতিময় বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকারকে প্রতিষ্ঠা করতে সংকল্পবদ্ধ।
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে, তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবিরাম পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তার জীবনে কোনো লোভ বা মোহ নেই। কোনো কিছু পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা নেই। তিনি অত্যন্ত সাদামাটা জীবনযাপন করেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি লড়াই করে যাচ্ছেন।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, দেশের জন্য কাজ করতে গিয়ে শেখ হাসিনাকে বারবার কারাবরণ করতে হয়েছে। হতে হয়েছিল অনেক মিথ্যা মামলার আসামি। কিন্তু কোনো কিছুই তাকে দমাতে পারেনি। অশুভ শক্তির সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে তিনি অবিচল লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। দেশের মানুষ বিশ্বাস করে শেখ হাসিনা স্বপ্ন দেখান এবং তা বাস্তবায়নও করেন।
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণের পথে তারই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। যে স্বপ্নে আমাদের পূর্বসূরিরা তাদের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে বিশ্বমানচিত্রে বাংলাদেশের জন্ম দিয়ে গেছেন, সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন করতে হলে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে বারবার দরকার।
কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের মানুষের ভাগ্যবদলের জন্য কাজ করছেন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজকে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। তার সফল নেতৃত্বে জনগণের মন জয় করে আওয়ামী লীগ বারবার ক্ষমতায় এসেছে।