মহামারি করোনাভাইরাদের প্রকোপ অনেকটা কমে এলেও উদ্বেগ কাটছে না মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু নিয়ে। চলতি বছরে সর্বোচ্চ ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে সেপ্টেম্বর মাসে। ৩০ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই মাসে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন সাত হাজার ৮৪১ জন।
গত আগস্ট মাসে সাত হাজার ৬৯৮ জন রোগী ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। সে হিসেবে গত মাসের তুলনায় ১৪৩ জন বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। এটি চলতি বছরে মাসের হিসাবে সর্বাধিক।
সম্প্রতি মশা বিষয়ে জাপানের কানাজোয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেছিলেন, এই বছর এপ্রিল ও মে মাস থেকেই বেশ বেশি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা, এই তিনটা এডিস মশার বংশ বৃদ্ধির জন্য সহায়ক। ফলে জুন মাস থেকেই আমরা আশঙ্কা করছিলাম যে, এবার ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেশি হতে পারে। এসব মিলিয়ে আমাদের ধারণা, সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবটা বেশি থাকবে।
এই বিশেষজ্ঞ বলেছিলেন, আরেকটি কারণ হলো, আমাদের দেশে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বেশ দুর্বল। যেমন কোনো একটা এলাকায় সংক্রমিত এডিস মশা দেওয়া যায়, তখন যদি সেই সংক্রমিত এডিস মশা ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তাহলে জ্যামিতিক হারে রোগটির বিস্তার দেখা যায়।
কবিরুল বাশার বলেছিলেন, আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ডেঙ্গুর যে রিপোর্টটি পাচ্ছি, আসলে কিন্তু তার চেয়ে সংক্রমণ অনেক বেশি। কারণ অনেক বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিক থেকে বা বাসায় চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু আক্রান্তের তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুমে যায় না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ডেঙ্গুতে কোনো রোগীর মৃত্যু হয়নি। জুলাই থেকে রোগী বাড়তে থাকে। গত আড়াই মাসেই ৬৭ জনের প্রাণ গেছে মশাবাহিত এই রোগে।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ১৯০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। মশাবাহিত রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে সর্বমোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ১৯৭ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন ১৯০ জন। এর মধ্যে ঢাকাতে ১৪৯ জন এবং ঢাকার বাইরের সারাদেশে ভর্তি হয়েছেন ৪১ জন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে সর্বমোট ৯৬০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। এরমধ্যে ঢাকার ৪৬টি হাসপাতালে ৭৫৬ জন এবং অন্যান্য বিভাগে বর্তমানে ২০৪ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হাসপাতালে সর্বমোট রোগী ভর্তি হয়েছেন ১৮ হাজার ১৯৭ জন। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ১৭ হাজার ১৭০ জন রোগী।
২০১৯ সালে দেশে ডেঙ্গু মারাত্মক আকার ধারণ করে। সে বছর এক লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেই বছর সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল এই ভাইরাস জ্বরে।সে বছর বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে আসা ২৬৬টি মৃত্যু পর্যালোচনা করে ১৪৮ জনের ডেঙ্গুতে মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছিল আইইডিসিআর।