আইওটি ও আগামীর বাংলাদেশ

শারমিন আকতার সাজ

আইওটি
আইওটি। প্রতীকী ছবি

ইন্টারনেট অফ থিংস (আইওটি) বলতে পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত ও ইন্টারনেট-সংযুক্ত বস্তুর একটি সিস্টেমকে বোঝায়, যা কোনো মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই একটি ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কে ডেটা বা তথ্য সংগ্রহ ও স্থানান্তর করতে সক্ষম। আইওটি ডিভাইসে সেন্সর ও মিনি-কম্পিউটার প্রসেসর থাকে, যা মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে সেন্সর দ্বারা সংগৃহীত ডেটাগুলোতে কাজ করে। মেশিন লার্নিং হচ্ছে-কম্পিউটার যখন মানুষের কাছ থেকে তার আশপাশের তথ্য সংগ্রহ করে একইভাবে শেখে। মূলত এটিই আইওটি ডিভাইসগুলোকে স্মার্ট করে তোলে। আইওটির মৌলিক উপাদান হচ্ছে কানেকটেড ডিভাইসেস, সেন্ট্রাল কন্ট্রোল হার্ডওয়্যার, ডেটা ক্লাউড, ইউজার ইন্টারফেস, নেটওয়ার্ক ইন্টারকানেকশন, সিস্টেম সিকিউরিটি এবং ডেটা অ্যানালিটিক্স। আইওটি মূলত এমবেডেড সিস্টেমগুলোকে আন্তঃসংযোগ করে ওয়্যারলেস কানেকটিভিটি ও সেন্সর এই দুটি বিকশিত প্রযুক্তিকে একত্রিত করে। এই সংযুক্ত এমবেডেড সিস্টেমগুলো স্বাধীন মাইক্রো-কন্ট্রোলারভিত্তিক কম্পিউটার, যা ডেটা বা তথ্য সংগ্রহের জন্য সেন্সর ব্যবহার করে থাকে। এই আইওটি সিস্টেমগুলো ওয়াইফাই, ব্লুটুথ বা একটি কাস্টম কমিউনিকেশন সিস্টেমের মতো ওয়্যারলেস প্রটোকল দ্বারা যৌথ সম্প্রচার ব্যবস্থা করা হয়। নোড বিতরণ এবং সংগৃহীত তথ্যের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে নেটওয়ার্কিং প্রটোকল নির্বাচন করা হয়। এ তথ্যটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে মূল কেন্দ্র বা কম্পিউটারে পাঠানো হয়। এই প্রধান কম্পিউটার তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে এটিকে মেমোরিতে সংরক্ষণ করে। এমনকি এই বিশ্লেষণের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে সিস্টেম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে।

ইন্টারনেট অফ থিংস বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, নাম ইন্টারনেট অফ থিংস হওয়া সত্ত্বেও আইওটির আসলে সবসময় ইন্টারনেটের প্রয়োজন হয় না। আজকের ডিজিটাল ল্যান্ডস্কেপে ডিভাইস, মেশিন এবং যে কোনো আকারের বস্তু স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেটা ট্রান্সফার করতে পারে, একে অপরের সঙ্গে কার্যকরভাবে রিয়েল টাইমে কথা বলতে পারে। আইওটির সুবিধার মাঝে রয়েছে খরচ কমানো, দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা, ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি করা, গ্রাহকের অভিজ্ঞতা, সক্রিয়তা ও দ্রুততা। আইওটি ডিভাইসের চমৎকার কিছু উদাহরণ হলো স্মার্ট হোম সিকিউরিটি সিস্টেম, অটোনোমাস ফার্মিং ইকুইপমেন্ট, ওয়্যারেবল হেলথ মনিটর, স্মার্ট কারখানার সরঞ্জাম, ওয়্যারলেস ইনভেন্টরি ট্র্যাকার, অতি উচ্চ গতির ওয়্যারলেস ইন্টারনেট, বায়োমেট্রিক সাইবার সিকিউরিটি স্ক্যানার ইত্যাদি। মানুষের জীবনযাপনকে সহজ করেছে আইওটির ভূমিকা অপরিসীম। এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে পৃথিবীর এক প্রান্তে বসে অন্য প্রান্তের ব্যবহার্য বিভিন্ন ডিভাইস যেমন-লাইট-ফ্যান, ওয়াশিং মেশিন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, সিসিটিভি ক্যামেরা ইত্যাদি স্মার্টফোনের সাহায্যে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

universel cardiac hospital

বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট অফ থিংস এখন অনেক বড় ও সম্ভাবনাময় একটি প্রযুক্তি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আইওটির গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। কারণ, ভোক্তা ও সংস্থাগুলো ইতোমধ্যেই এর সুফল ভোগ করতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে বিশ্বের সংযুক্ত আইওটি ডিভাইসের সংখ্যা ৩০ বিলিয়নেরও বেশি। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বের সংযুক্ত আইওটি ডিভাইসের সংখ্যা ৭৫ বিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে। বাংলাদেশ সরকার আইওটির গুরুত্ব অনুধাবন করে ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও গ্রহণ করছে নানা ধরনের উদ্যোগ। আইওটি নিয়ে কাজ করছে এমন স্টার্টআপ, এ প্রযুক্তি সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রকল্পসহ মিরপুরে আইওটি ল্যাব নির্মাণের জন্য অনুদান দিয়েছে সরকার, যা নতুন নতুন দেশীয় আইওটি ডিভাইস তৈরিসহ এ সেক্টরে গবেষণার নতুন নতুন সুযোগ ও সম্ভাবনা তৈরি করবে।

শারমিন আকতার সাজ : পরামর্শক, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল

শেয়ার করুন