‘ছাত্র ও স্বল্প বেতনের চাকরিজীবীরা ছিল এসপিসি’র টার্গেট’

নিজস্ব প্রতিবেদক

এসপিসি

বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে চটকদার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বেকার ও ছাত্রসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষকে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র। এই চক্রটি ছাত্র, স্বল্প বেতনের চাকরিজীবীদের টার্গেট করে থাকে বলে জানিয়েছেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফিনান্সিয়াল ক্রাইমের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. হুমায়ুন কবীর।

আজ সোমবার দুপুরে সিআইডির সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

universel cardiac hospital

এর আগে সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার খায়রুল আমিনের সার্বিক দিক নির্দেশনায় এলআইসির একটি চৌকস দল এই চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। রোববার রাতে রাজধানীর রমনা থানার বেইলি রোড থেকে এসপিসি ওয়ার্ল্ড এক্সপ্রেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও মো. আল আমিন এবং তার স্ত্রী শারমিন আক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময়ে তাদের কাছ থেকে একটি সাদা রঙের এক্সিট ফিল্টার প্রাইভেট কার জব্দ করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে হুমায়ুন কবীর বলেন, সম্প্রতি কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের প্রতারণাকাণ্ডে উৎকণ্ঠায় রয়েছে গ্রাহক, ব্যবসায়ী এবং ওইসব খাতে জড়িত সংশ্লিষ্টরা। ই-কমার্স সাইটগুলো ঈদ ধামাকা, সাইক্লোন অফার, ডাবল অফারসহ বিভিন্ন চটকদার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সাধারণ গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে। এক্ষেত্রে ক্রীড়া ও শোবিজ জগতের সেলিব্রোটিদের মাধ্যমে বিভিন্ন মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন প্রচার করে তাদের ভক্ত ও তরুণদের আকৃষ্ট করে।

সেলিব্রেটিদের মাধ্যমে বিভিন্ন মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন প্রচার করে মুঠোফোন, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ফ্রিজ, ওভেনসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স পণ্য স্বল্পদিনের মধ্যে ডেলিভারি এবং শর্ত সাপেক্ষ ৮০% থেকে ১৫০% পর্যন্ত ক্যাশ ব্যাক দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েও শর্তভঙ্গ করার প্রেক্ষিতে দেশের বিভিন্ন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও মানিলন্ডারিং আইনে মামলা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এরআগেও ২৬৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন আল আমিন। তিনি মূলত ডেসটনি ২০০০ এর উচ্চ পর্যায়ের টিম লিডার এবং প্রশিক্ষক ছিলেন। ডেসটিনি ও যুবকের আদলেই গড়ে তুলেছিলেন এসপিসি ওয়ার্ল্ডকে। তাদেরকে ডিএমপির কলাবাগান থানার মামলায় (নম্বর-১৪ ,তারিখ ২৬.০৮.২০২১ ইং ধারা ৪ (২)) ২০১২ সালের মানিলান্ডারিং প্রতিরোধ আইনে গ্রেপ্তার করা হয়।

প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন পেশার মানুষের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে ১ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা বক্তিগতভাবে ব্যবহার করে প্রতরণামূলক বিশ্বাস ভঙ্গ করে আত্মসাৎ করার বিষয়টি প্রাথমিকভাবে সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃত এসপিসি ওয়ার্ল্ডের সিইওর বরাত দিয়ে হুমায়ুন কবীর জানান, তার প্রতিষ্ঠানে গ্রাহকের সংখ্যা এক কোটি। এক মাসের মধ্যে তারা পাঁচ থেকে ছয় কোটি টাকার অর্ডার পায়। তাদের বেশিরভাগ গ্রাহক ছাত্র ও স্বল্প বেতনের চাকরিজীবী। প্রাথমিক অবস্থায় এসপিসি ওয়ার্ল্ড কিছু পণ্য ডেলিভারি করে সেই গ্রাহকদের দিয়ে তাদের ফেইসবুক পেইজে ইতিবাচক রিভিউ পোস্ট করিয়ে সাধারণ গ্রাহকদের মধ্যে বিশ্বাস স্থাপন করে। পরবর্তীতে অধিক সংখ্যায় অর্ডার ও অগ্রিম টাকা পেয়ে তারা পণ্য ডেলিভারি না দিয়ে গ্রাহকদের সাথে প্রতারণা শুরু করে। অনেকদিন পেরিয়ে গেলেও গ্রাহকরা যখন বুঝতে পারেন,তারা প্রতারণার শিকার হয়েছেন, তখন বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সংবাদ মাধ্যমে প্রতিকার দাবি বক্তব্য দিতে থাকেন। যারা যখন খুব চাপ প্রয়োগ করেন, তাদের টাকা ফেরতের মিথ্যা আশ্বাস হিসেবে চেক দেওয়া হয়। কিন্তু অপর্যাপ্ত বালেন্স থাকায় চেক ডিজঅনার হওয়ায় গ্রাহকদের সাথে সকল যোগাযোগ বন্ধ করে লাপাত্তা হয়ে যায়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, মানিলান্ডারিং আইনে প্রায় চারটি মামলার তথ্য রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে অর্গানইজড ক্রাইমের অতিরিক্ত ডিআইজি মাসুদুল হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান, খায়রুল আমিন উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন