করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘ ১৮ মাস বন্ধ থাকার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সব আবাসিক হল শিক্ষার্থীদের জন্য আজ (৫ অক্টোবর) খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে প্রথম ধাপে অগ্রাধিকারভিত্তিতে কেবল স্নাতক শেষবর্ষ ও স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীরা পরিচয়পত্র ও টিকা কার্ড দেখিয়ে হলে উঠতে পেরেছেন। এরপর ১০ অক্টোবর থেকে ঢাবির আবাসিক হলে উঠতে পারবেন অন্য বর্ষের শিক্ষার্থীরাও।
দেড় বছর পর হলে উঠে শিক্ষার্থীদের সারাদিন কুশল বিনিময়, কক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও গোছানোর কাজেই কেটে যায়। তাই সন্ধ্যা নামতে না নামতেই বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা ঢাবি ক্যাম্পাসের পছন্দের আড্ডাস্থল টিএসসিতে ছুটে আসেন। শত শত শিক্ষার্থীর পদচারণায় আগের মতো মুখরিত হয়ে ওঠে টিএসসির চৌহদ্দি। এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ম্যারাথন আড্ডা চলতে থাকে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে অন্য দিনের চেয়ে আজ শিক্ষার্থীসহ মানুষের আনাগোনা বেশি। টিএসসিসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য শিক্ষার্থীকে রাস্তার পাশে আইল্যান্ড বা হলের সামনে গোল করে চেয়ার পেতে আড্ডা দিতে দেখা গেছে। অনেকদিন পর শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে টিএসসির চৌহদ্দিতে খাবারের দোকান ও বিভিন্ন পসরা সাজিয়ে বসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ব্যস্ত সময় কাটান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্ট ক্যান্টিন (ডিইউএসসি) ও ফুটপাতে চা-সিগারেট এবং চটপটি-ফুচকার দোকানের সামনে বেশ ভিড় দেখা গেছে। শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ আবার রাস্তার পাশে বসে চুড়ি বিক্রেতা নারীর কাছ থেকে রং-বেরঙের চুড়ি হাতে পরে দেখছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের স্নাতক চূড়ান্ত বর্ষের শিক্ষার্থী আফসানা নুর বলেন, অনেকদিন পর প্রাণের ক্যাম্পাসে ফিরে আগের মতো আড্ডা দিতে পেরে ভীষণ ভালো লাগছে। তারা কয়েকজন বন্ধু মিলে আড্ডার ফাঁকে কেউ কবিতা আবৃত্তি, আবার কেউ গান গাইছিলেন, কেউ পাশে দাঁড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছিলেন।
এফ রহমান হলের আবাসিক ছাত্র সোহানুর রহমান বলেন, প্রথমদিনই টিএসসি তথা গোটা ঢাবি ক্যাম্পাসে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এলেও করোনার সংক্রমণ কমে যাওয়ায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
জানা গেছে, ঢাবি সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অনার্স চতুর্থ বর্ষ এবং মাস্টার্সের যেসব আবাসিক শিক্ষার্থী অন্তত করোনার প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন, তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে টিকা কার্ড/সনদ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈধ পরিচয়পত্র সংশ্লিষ্ট হল কর্তৃপক্ষকে দেখিয়ে নিজ হলে উঠছেন। আবাসিক হলে থাকার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১১টি নির্দেশনা দিয়েছে।
দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হলে ২০২০ সালের মার্চে ঢাবি কর্তৃপক্ষ শ্রেণি কার্যক্রম ও আবাসিক হল বন্ধ করে দেয়। এরপর চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার জন্য ১৩ মার্চ থেকে আবাসিক হল খোলার সিদ্ধান্ত নেয় ঢাবির একাডেমিক কাউন্সিল। পরে করোনা সংক্রমণ আবার বৃদ্ধি পেলে সেই দফায় হল খোলা সম্ভব হয়নি। এখন করোনা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হওয়ায় হল খুললো ঢাবি কর্তৃপক্ষ।