চুড়িহাট্টা ট্রাজেডি : আড়াই বছরেও শেষ হয়নি তদন্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

চুড়িহাট্টায় আগুন
চুড়িহাট্টায় আগুন। ফাইল ছবি

‘আমার ছেলে রাস্তায়ই আগুনে পুইড়া মারা গেলো। রাস্তায় আগুন দাউ দাউ করে জ্বলতাছে। কেউ বের হতে পারি নাই। মানুষগুলো মরছে, দোষীদের এখনো বিচারই হইলো না। সবই আগের মতো চলতাছে।’

ক্ষোভে-দুঃখে কথাগুলো বলছিলেন পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া মো. পারভেজের বাবা আলমগীর। তিনি এখন ভবনটির সামনে পান বিক্রি করেন।

universel cardiac hospital

ছেলের মৃত্যুর আড়াই বছর পেরিয়ে গেলেও কবে বিচার হবে তা জানেন না আলমগীর। অন্য ভুক্তভোগী পরিবারগুলোরও একই অবস্থা।

২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে চুড়িহাট্টায় ওয়াহেদ ম্যানশনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ভবনটির নিচতলায় কেমিক্যালের গোডাউন থাকায় মুহূর্তে আগুন ভয়াবহ রূপ নেয়। এতে ঘটনাস্থলেই পুড়ে মারা যান ৬৭ জন। এরপর আরও চারজন মারা যান চিকিৎসাধীন অবস্থায়। এতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৭১ জনে।

সেদিনের আগুনে বাবা হারান আসিফ আহমেদ। বাবা মো. জুম্মনের মৃত্যুতে চকবাজার মডেল থানায় মামলা করেন তিনি। এতে আসামি করা হয় ভবনের দুই মালিক হাসান ও সোহেলকে। এরপর কেটে যায় আড়াই বছর। কিন্ত এখনো কোনো বিচার হয়নি সে ঘটনার।

মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে বাদী আসিফ আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার পর হাসান ও সোহেল গ্রেফতার হলেও তিন মাস পরই জামিন পান তারা। প্রায় তিন বছর হতে চললো এখনো তদন্তই শেষ হয়নি। তদন্ত করতে এতদিন লাগে? প্রশ্ন বাবা হারানো এই ছেলের।

বিচারের বিষয়ে তিনি বলেন, সুষ্ঠু বিচার পাইনি এখনো। বিচার হবে বলে মনে হচ্ছে না। স্থানটিতে নতুন বিল্ডিং দাঁড়িয়ে গেছে। ভাড়াও হয়ে গেছে, কিন্তু বিচারের নাম নেই। তদন্ত কর্মকর্তারা এখন আর আমার সঙ্গে যোগাযোগই করেন না।

চুড়িহাট্টার আগুনে স্বজন হারানো আরেক ব্যক্তি স্থানীয় বাসিন্দা এম এ রহিম। তিনি তার দুই ভাতিজাকে হারান। ঘটনার পর থেকেই বিচারের দাবি জানিয়ে আসছেন তিনি।

তিনি বলেন, এত মানুষের মৃত্যু হলো কোনো ব্যবস্থা নেই। কোনো বিচার হয় না। প্রায় তিন বছর হতে চললো মামলার তদন্ত চলে এখনো। যারা কেমিক্যাল রাখছে তাদের বিচার চাই।

এদিকে মামলার দুই আসামি হাসান ও সোহেল জামিনে থাকলেও পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ। তবে গ্রেফতার হলেও আড়াই বছরেও শেষ হয়নি তদন্তের কাজ। ফলে আদালতে চার্জশিট কবে দেওয়া হবে তা বলতে পারছে না পুলিশ।

মামলার বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল কাইউম বলেন, মামলায় পাঁচজন গ্রেফতার রয়েছে। এখনো চলছে তদন্ত কাজ। তদন্তের স্বার্থে এর বেশি কিছু বলতে পারবো না।

কবে চার্জশিট দিতে পারবেন এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, এটা বলতে পারবো না। আমাদের ঊর্ধ্বতন স্যারেরা যেটা বলবেন সেই অনুযায়ী আমরা কাজ করবো।

চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সংস্থার সভাপতি মো. নাসির উদ্দিন বলেন, আমরা খুবই মর্মাহত ওয়াহেদ ম্যানশনে আবার নতুন করে বিল্ডিং হয়েছে। সেটি আবার উদ্বোধন করতে এলেন ডিএসসিসি মেয়র (শেখ ফজলে নূর তাপস) সাহেব।

মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, শুনেছি কয়েকজন গ্রেফতার হয়েছেন। কিন্তু এখনো তদন্ত শেষ হয়নি। বিচারও হয়নি। আমরা চাই দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চুড়িহাট্টা এলাকার এক বাসিন্দা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, বিচার হলে মামলার তদন্ত এখনো আটকে থাকতো না। দোষীরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকে বলেই তদন্ত এগোয় না।

এদিকে প্রায় দুই বছর আগে ৬৭ জনের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ থেকে পুলিশকে দেওয়া হয়। কিন্তু এখনো তদন্ত শেষ করতে পারেননি কর্মকর্তা। এতে হতাশা প্রকাশ করে স্বজনহারা পরিবারগুলো। তাদের দাবি দ্রুত তদন্ত শেষ করে বিচার করার।

শেয়ার করুন