ভাসানচরে পুনর্বাসন করা রোহিঙ্গারা সব সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার পরও সেখান থেকে পালিয়ে যাচ্ছে। এটা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের সরকার দাওয়াত করে আনেনি। তারা যেতে চাইলে যাক।
আজ বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা রোহিঙ্গাদের জন্য ইন্টারনেট খুলে দিয়েছি। তারা এখন সেই ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। ইন্টারনেটে তারা বিদেশে তাদের আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে কথা বলে। এখানে (বাংলাদেশে) তারা কেন থাকে, তা নিয়ে তাদের আত্মীয়রা রাগারাগি করে। সে কারণে তারা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা তো আর রোহিঙ্গাদের দাওয়াত করে আনিনি। তারা নিজের দেশে বা অন্য কোথাও যেতে চাইলে, যাক। সেটা আমাদের সমস্যা নয়।
সম্প্রতি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিহত মুহিবুল্লাহর হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার আশ্বাস দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, যারা তাকে মেরেছেন, তাদের আমরা বের করব, আইডেন্টিফাই করব, তাদের শাস্তি দেব। যাতে এ ধরনের দুর্ঘটনা আর না ঘটে।
এম এ মোমেন বলেন, একজন লোক মারা পড়েছে। আমরা সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকশন নিয়েছি। তিনজন ধরা পড়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ নিয়ে কাজ করছে।
ড. মোমেন সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, কেউ কেউ রাখাইনে নিজ ভূমিতে ফিরে যাবার জন্য মুহিবুল্লাহর আগ্রহকে পছন্দ নাও করে থাকতে পারে।
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে মানবপাচারের পাশাপাশি অবৈধ অস্ত্র ও মাদক পাচারের কিছু প্রতিবেদনের কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যেই এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আমরা বসে নেই। এগুলো বন্ধে আমরা সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করব। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আফগানিস্তানকে ঘিরে চলমান বৈশ্বিক সংকট সত্ত্বেও সদ্য সমাপ্ত জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে রোহিঙ্গা ইস্যুটিও বেশ ভালোভাবেই আলোচিত হয়েছে।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ আইনপ্রণেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিকের গাড়িতে হামলার ঘটনা দুঃখজনক আখ্যা দিয়ে মন্ত্রী বলেন, আশা করছি ব্রিটিশ সরকার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।
ড. এম এ মোমেন বলেন, অনেক সময় বলা হয়ে থাকে এসব হামলা শুধু আমাদের দেশেই হয়। দেখেন, ব্রিটেনের মতো উন্নত দেশ যেখানে তাদের ইলেকট্রনিক সফিস্টিকেশন অনেক ভালো, পুলিশরা অনেক ওয়েল ট্রেইন্ড। সে সমস্ত জায়গায় একজন জনপ্রতিনিধির ওপর হামলা, গাড়ির গ্লাস ভেঙে দেওয়া এটা খুব দুঃখজনক। তবে আমি বিশ্বাস করি, ব্রিটিশ সরকার তাদের দায়দায়িত্ব যা যা করার দরকার তারা করবেন।
এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, তিন দিনের সফরে বুধবার রাতে দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের দেশ রোমানিয়া সফরে যাচ্ছেন তিনি। এই সফরে রোমানিয়া ছাড়াও পাশের দেশ সার্বিয়ায় জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের (ন্যাম) ৬০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন মন্ত্রী
রোমানিয়া সফর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রোমানিয়ায় বাংলাদেশিদের জন্য শ্রমবাজার খুলেছে। এটা আমাদের জন্য নতুন দুয়ার। সেখানে কয়েক হাজার বাংলাদেশি নাগরিক কাজ করছেন, আরও কিছু যাচ্ছেন। তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাকে দাওয়াত দিয়েছেন, সেজন্য যাচ্ছি। এ সফরে দেশটিতে শ্রমবাজারে লোকবল সরবরাহ ও বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে কথা বলব।
ন্যামের ৬০ বছর পূর্তিতে যোগ দেওয়া প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোমানিয়া সফরের পাশাপাশি ন্যামের ৬০ বছর পূর্তি হবে। সেখানে ন্যামের সঙ্গে আমরা সম্পর্ক তৈরি করব। বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালে প্রথম যোগদান করেন, সেদিন থেকে আমরা ন্যামের সঙ্গে আছি।