ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর জন্য আবাসিক হল খুলছে আজ। এর আগে শুধু স্নাতক শেষ বর্ষ ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের হলে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। যেসব শিক্ষার্থী অন্তত ‘কোভিড-১৯’-এর প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন তারা হলের বৈধ পরিচয়পত্র দেখিয়ে আজ সকাল ৮টা থেকে হলে প্রবেশ করতে পারবেন। এদিকে স্নাতক শেষ বর্ষ ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের পর এবার অনার্স ১ম বর্ষ, ২য় বর্ষ ও ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে হল প্রশাসন।
দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে ২০২০ সালের মার্চে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে শ্রেণি কার্যক্রম এবং আবাসিক হল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার জন্য এ বছরের ১৩ মার্চ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খোলার সিদ্ধান্ত নেয় একাডেমিক কাউন্সিল। যদিও করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে পরে ওই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়। ৫ অক্টোবর থেকে স্নাতক শেষ বর্ষ ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক হল খুলে দেওয়া হয়।
সব শিক্ষার্থীর জন্য আবাসিক হল খুলে দেওয়ায় উচ্ছ্বসিত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। শামসুন্নাহার হলের আবাসিক শিক্ষার্থী শাহিদা আক্তার বলেন, দীর্ঘদিন পর সবার জন্য ক্যাম্পাস খোলার সংবাদ সত্যিই অনেক আনন্দের। আবার বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হবে, সেই ক্লাস রুমে ক্লাস করব, আমাদের আবাসিক হলে আবার ফিরে যাব-এসব ভাবতেই অনেক ভালো লাগছে। কিন্তু অনেকদিন বাড়িতে থাকায় বাবা-মা, ভাই-বোনের সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলোও অনেক মনে পড়বে।
রোকেয় হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ইসমত আরা চৈতি বলেন, এতদিন পর হল খোলায় আনন্দিত। একই সঙ্গে আমার এবং আমাদের সবার যে প্রায় দুই বছরের শিক্ষার ক্ষতি হলো, এজন্য যত দ্রুত সম্ভব বাকি সেমিস্টারের রেজাল্ট দিয়ে দিলে বাঁচি।
হল খোলার বিষয়ে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ঢাবির শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, আমরা শিক্ষকরাও সবাই উন্মুখ হয়ে আছি কবে আবাসিক হল খুলে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হবে। শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠবে ঢাবিসহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তাই আবাসিক হল খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে আমি স্বাগত জানাই।
স্বাস্থ্যবিধি মানা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আজ একসঙ্গে তিনটি শিক্ষাবর্ষের জন্য আবাসিক হল খুলে দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের বড় ধরনের একটা চাপ পড়বে হলগুলোতে। ফলে তাদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা একটু চ্যালেঞ্জিং হবে। একসঙ্গে সবার জন্য হল না খুলে পর্যায়ক্রমে খুলে দেওয়া হলে এই সমস্যাটা হতো না বলে মনে করেন তিনি।
এদিকে করোনা-পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা, আবাসিক হলের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ব্যাপক সংস্কার কর্মসূচি হাতে নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে রয়েছে-ওয়াশ রুম, পানির লাইন, বিদ্যুতের লাইন ও ঝরাজীর্ণ দেওয়ালের সংস্কার এবং নতুন করে রংয়ের কাজ। ইতোমধ্যে এসব সংস্কার কাজ সম্পন্ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় হল প্রশাসন।
আবাসিক হলের প্রস্তুতি বিষয়ে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের প্রভোস্ট ড. মু. জাবেদ হোসেন বলেন, আমরা আমাদের সাধ্যমতো হলের সব সংস্কার কাজ সম্পন্ন করেছি। ৫ অক্টোবর স্নাতক শেষ বর্ষ ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের যেভাবে বরণ করে নিয়েছি ঠিক একইভাবে অপর শিক্ষার্থীদেরও বরণ করা হবে।