চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের হার ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ। যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এসময়ে এক হাজার ৫৯১ প্রকল্পের বিপরীতে এডিপি বাস্তবায়নে খরচ হয়েছে ১২ হাজার ৫৬৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
বুধবার (১৩ অক্টোবর) পরিবীক্ষণ মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার দুই লাখ ৩৬ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা।
করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময়ে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) এই তিন মাসের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন হার ভালো ছিল। ২০২০-২১ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরের সেসময়ে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ৮ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। ২০১৮-১৯ ও ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল যথাক্রমে ৮ দশমিক ২৫ ও ১০ দশমিক ২১ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাস (জুলাই-সেপ্টেম্বর) শেষে উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন হার করোনার ওই সময়ের চেয়েও কম। প্রকল্প বাস্তবায়ন হার গত সেপ্টেম্বরে ছিল মাত্র ১ দশমিক ৪৮ শতাংশ। যেখানে আগের বছর একই সময়ে বাস্তবায়ন হার ছিল চার দশমিক ১৭ শতাংশ।
আইএমইডি সূত্রে জানা গেছে, করোনা মোকাবিলায় সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হলেও অর্থ ব্যয় করতে পারছে না স্বাস্থ্যখাত। জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে এ খাতে প্রকল্প বাস্তবায়ন হার মাত্র ১ দশমিক ৩১ শতাংশ। সর্বোচ্চ বরাদ্দপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে চলতি এডিপিতে সবচেয়ে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয় হলো স্বাস্থ্যখাত। ৪৬ প্রকল্পের জনস্বাস্থ্য সেবাখাতে বরাদ্দ ১৩ হাজার কোটি ১৯ লাখ টাকা। প্রথম তিন মাসে খরচ করতে পেরেছে মাত্র ১৭০ কোটি ১৬ লাখ টাকা। যা মোট বরাদ্দের ১ দশমিক ৩১ শতাংশ। আর স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের বরাদ্দ ছিল ২ হাজার ৫৫৮ কোটি ৩ লাখ টাকা। তিন মাসে ব্যয় হয়েছে ৬ দশমিক ১৮ শতাংশ বা ১৫৮ কোটি ১ লাখ টাকা। ২১৪টি প্রকল্পের বিপরীতে স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্য থোক বরাদ্দসহ রয়েছে ৩৩ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। ব্যয় হয়েছে মাত্র ৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ বা ২ হাজার ৫৩২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।
বিদ্যুৎখাতের ৭৫টি প্রকল্পের বিপরীতে এ বছর বরাদ্দ আছে ২৮ হাজার ৫৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা। তিন মাসে তাদের খরচ হয়েছে ২ হাজার ৩৫১ কোটি ২৪ লাখ টাকা বা ৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
দেশের সড়ক উন্নয়নে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ১৮২টি প্রকল্পের জন্য ২৮ হাজার ৪১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা বরাদ্দের বিপরীতে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ১৪৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা। যা বরাদ্দের মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ।
পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ২১ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ২০ হাজার ৬৩৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা কিন্তু গত তিন মাসে তারা খরচ করেছে এক হাজার ১১২ কোটি ২৪ লাখ টাকা, যা ৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ৩৬ প্রকল্পের বিপরীতে ১১ হাজার ৯১৯ কোটি ৫১ লাখ টাকা বরাদ্দ। তিন মাসে খরচ করেছে মাত্র ৫৪৪ কোটি ১৭ লাখ টাকা বা ৪ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ।
আইএমইডির তথ্যানুযায়ী, গুরুত্বপূর্ণ ও বরাদ্দপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে অগ্রগতি দুই শতাংশের নিচে রয়েছে- মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, জননিরাপত্তা বিভাগ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, মহিলা ও শিশু-বিষয়ক মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, আইন ও বিচার বিভাগ, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়।
এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ এই তিন মাস কোনো টাকা খরচ করতে পারেনি। ৪ প্রকল্পে তাদের জন্য বরাদ্দ আছে ৩৮৭ কোটি টাকা। একই অবস্থা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। ৭ প্রকল্পে ১২৯ কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও গত তিন মাসে মন্ত্রণালয়ে কোনো টাকা ব্যয় হয়নি।
জুলাই-সেপ্টেম্বর এই তিন মাসে সরকারি কর্ম কমিশনের অগ্রগতি শূন্য দশমিক ১৮ শতাংশ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের শূন্য দশমিক ৯৪ শতাংশ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শূন্য দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের শূন্য দশমিক ৬৫ শতাংশ, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের শূন্য দশমিক ৬৫ শতাংশ ও পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের শূন্য দশমিক ৪৯ শতাংশ।