মোস্তফা (সা.) পুরস্কার পেলেন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ড. জাহিদ

বিশেষ প্রতিনিধি

বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ড. জাহিদ হাসান
বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ড. জাহিদ হাসান। সংগৃহীত ছবি

ইরানের মোস্তফা (সা.) পুরস্কার জিতেছেন বাংলাদেশের পদার্থবিজ্ঞানী ড. এম জাহিদ হাসান। ১২ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে এবারের বিজয়ী পাঁচ বিজ্ঞানীর নাম ঘোষণা করা হয়। দেশটির মোস্তফা (সা.) ফাউন্ডেশন দুই বছর পরপর বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মুসলিম বিজ্ঞানী ও গবেষকদের পুরস্কৃত করে থাকে। মোস্তফা (সা.) পুরস্কার শিক্ষা ও গবেষণাকে উৎসাহিত করতে এবং ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সদস্য দেশগুলোতে কর্মরত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আঞ্চলিক সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে চায়। ২০১৫ সালে এ পুরস্কার চালু হয়।

জাহিদ হাসান বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছেন। তার কাজ ‘ওয়েল ফার্মিয়ন সেমিমেটাল’-এর জন্য তাকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়।

universel cardiac hospital

এর আগে আর্নেস্ট অরল্যান্ডো লরেন্স অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন জাহিদ হাসান। যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব এনার্জি (DOE) তাদের জাতীয়, অর্থনীতি ও শক্তি বিষয়ে অসাধারণ অবদানের জন্য বিজ্ঞানীদের এই পুরস্কার দেয়। গত ১২ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের শক্তি বিষয়ক সচিব ড্যান ব্রাউলেতি (Dan Brouillette) পুরষ্কারপ্রাপ্ত ৮ বিজ্ঞানীর নাম ঘোষণা করেন। এই বিজ্ঞানীদের সবাই নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদান রেখেছেন।

জাহিদ হাসান মূলত কনডেন্সড ম্যাটার অ্যান্ড ম্যাটেরিয়াল সায়েন্সেস, অর্থাৎ ঘনপদার্থ ও বস্তু সংক্রান্ত বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণার জন্য এই পুরষ্কার পেয়েছেন। পদার্থবিজ্ঞানের এই শাখাটি বিভিন্ন ঘন পদার্থের ধর্ম, যেমন অতিপরিবাহিতা, অর্ধপরিবাহিতা এবং পদার্থের ভৌতধর্ম, পদার্থের দশান্তর ইত্যাদি নিয়ে কাজ করে।

গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান অধ্যাপক ড. জাহিদ হাসান। তিনি শ্রীপুর আসন থেকে ছয়বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. রহমত আলীর পুত্র। ড. জাহিদের মা নাদিরা আলী তালুকদার। ১৯৭০ সালের ২২ মে ঢাকার সেন্ট্রাল রোডের নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন জাহিদ।

১৯৮৬ সালে ধানমণ্ডি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। এসএসসিতে ঢাকা বোর্ডে সম্মিলিত মেধা তালিকায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। আর ১৯৮৮ সালে ঢাকা কলেজ থেকে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে সম্মিলিত মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করে এইচএসসি পাস করেন। এরপর গণিতে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। চার দিন ক্লাস করার পর আর তিনি বিশ্ববিদ্যালয়েই যাননি।

তখন বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রায় সময়ই মারামারি হতো বলেই জানা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারামারির এই বিষয়টা জাহিদ একদমই পছন্দ করতেন না। ওই বছরই স্কলারশিপ নিয়ে চলে যান আমেরিকা। অস্টিনের টেক্সাস ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন পদার্থবিজ্ঞানে। সুযোগ হয় নোবেল বিজয়ী তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন ভাইনভার্গের কাছে শিক্ষা গ্রহণের। এরপর মাস্টার্স ও পিএইচডি করতে চলে যান স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে।

মূলত তখন থেকেই পদার্থবিজ্ঞানের জগতে তার নাম ছড়িয়ে পড়ে। কাজ করেন অসংখ্য খ্যাতিমান ও নোবেল বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানীর সঙ্গে। এরই মধ্যে বিশেষ আমন্ত্রণে গেস্ট হয়ে লেকচার দিতে যান প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার লেকচার শুনে মুগ্ধ হন বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসি। অতঃপর প্রস্তাব আসে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগদানের।

পদার্থবিজ্ঞানী ড. জাহিদ হাসান ১৯৯০ সালে স্নাতকে কৃতিত্বের জন্য আমেরিকার প্রেসিডেন্সিয়াল অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। এছাড়া তিনি কোয়ান্টাম মেথডের ওপর ২০০৮ সালে ক্রিয়েটিভিটি এক্সটেনশন অ্যাওয়ার্ড, ফেলোশিপ অ্যাওয়ার্ডসহ বিভিন্ন সম্মানেও ভূষিত হন।

পিএইচডি শেষ করে ২০১২ সালে আইনস্টাইন, নিলস বোর, ওপেন হাইমারের বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষকতা করেন। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়াতেও শিক্ষকতা করেন কিছুদিন। তার অধীনে এখন পর্যন্ত বহু শিক্ষার্থী পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।

১৯৯৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বের অন্তত একশটি দেশে প্রায় আড়াইশত আন্তর্জাতিক সেমিনারে লেকচার দেন ড. জাহিদ। সুইডেন, ফ্রান্স, ভারত, ইতালি, জাপান, চীন, ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আন্তর্জাতিক নানা সেমিনারে নিয়মিত লেকচার দিচ্ছেন তিনি।

বিশ্বখ্যাত ল্যাবরেটরি সার্ন (সিইআরএন), লরেন্স বার্কলে, ব্রোকহেভেন ন্যাশনাল ল্যাবে কাজ করার সুযোগও হয়েছে ড. জাহিদ হাসানের। সৌদি আরবের কিং আবদুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তার সম্পৃক্তা রয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশের নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটির সঙ্গেও তিনি সম্পৃক্ত রয়েছেন।

মাত্র ১৬ বছর বয়সে ১৯৮৬ সালে জাহিদ হাসান লিখে ফেলেন ‘এসো ধূমকেতুর রাজ্যে’ শিরোনামে বিজ্ঞানের একটি বই। সে সময় বইটি ব্যাপক সাড়া ফেলে। বইটি পড়ে বাংলা ভাষার বিজ্ঞান সাহিত্যের পথিকৃৎ আবদুল্লাহ্ আল-মুতী শরফুদ্দীন ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। আশীর্বাদ করেছিলেন ‘তুমি অনেক বড় হবে।’

শেয়ার করুন