দেশে প্রতিবছর বজ্রপাতে যত মানুষ মারা যায় তার মধ্যে বেশিরভাগই কৃষক। তাই কৃষকের জীবন রক্ষায় হাওর অঞ্চলের পাশাপাশি সারাদেশে বজ্র নিরোধক টাওয়ার স্থাপনসহ নানা উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান জানিয়েছেন, হাওরের কৃষকদেরকে জানমালের কথা চিন্তা করে সরকার ৪৩০ কোটি টাকা প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে। খুব শিগগিরই এর কাজ শুরু হবে।
বৃহস্পতিবার আইডিবি রিসার্চ ও টেকনোলজিক্যাল ইনস্টিটিউট কর্তৃক আয়োজিত ‘বজ্রপাত জনিত জাতীয় দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি থেকে জানমাল রক্ষায় করণীয়’ শীর্ষক এক সেমিনারে এ তথ্য জানান প্রতিমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে বজ্রপাতের হাত থেকে কৃষকের জীবন বাঁচাতে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান বক্তারা।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী চলতি বছরের সাড়ে ৯ মাসে বজ্রপাতে ৩৪৯ জন লোকের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। তবে নিহতদের বেশিরভাগই কৃষক। কারণ তারা মাঠে কাজ করতে গিয়ে বৃষ্টিতে ভেজে।
ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ এর সভাপতি একেএমএ হামিদের সভাপতিত্বে আয়োজিত সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন, সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টোর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরামের সভাপতি প্রফেসর ড. কবিরুল বাশার।
সেমিনারে পূর্বাভাস ও সুরক্ষার কৌশল শীর্ষক একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকৌশলী মো. মনির হোসেন।
প্রবন্ধে বাংলাদেশের বজ্রপাত প্রবণতার মূল কারণ হিসেবে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বন জঙ্গল উজাড়, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর থেকে সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রবাহ, উত্তরের হিমালয়ের পাদদেশে পুঞ্জীভূত মেঘ, মেঘ সৃষ্টির প্রক্রিয়া কিউমোলো নিম্বাস, মোবাইল টাওয়ার হতে উৎপন্ন অতি মাত্রার ম্যাগনেটিক ফিল্ড ও ওয়েবকে দায়ী করা হয়। এছাড়া, প্রবন্ধে মৃত্যুর হার অনুযায়ী দেশের শীর্ষ ১০টি জেলার কথা উল্লেখ করা হয়। এগুলো হলো সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, দিনাজপুর, সিরাজগঞ্জ, হবিগঞ্জ, শেরপুর ও জামালপুর।
এনামুর রহমান বলেন, কৃষকদের জান-মাল রক্ষায় খুব শিগগিরই হাওরে আশ্রয়ণ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। সেখানে কৃষক সুপেয় পানিপানসহ বিশ্রাম নিতে পারবেন। সেমিনারের বক্তাদের আশ্বস্ত করে বলেন, আপনাদের দাবির সঙ্গে আমি একমত। হাওরের কৃষকদেরকে জানমালের কথা চিন্তা করে সরকার ৪৩০ কোটি টাকা প্রজেক্ট রেডি করা হয়েছে। খুব শিগগিরই কাজ শুরু হবে।
কিশোরগঞ্জ ৪ আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক বলেন, বাংলাদেশের হাওর অঞ্চলে বজ্রপাতের সংখ্যা বেশি। বিদ্যুৎ সব সময় পরিবাহী চায়। তাই আকাশের এই বজ্র যখন মাটির দিকে আসে তখন সবার ওপরে থাকা বিদ্যুৎবাহী বস্তুর ওপর পড়ে। এক্ষেত্রে বড় কোনো গাছ থাকলে তার ওপর পড়ে। বজ্রপাত মোকাবিলায় লম্বা প্রজাতির গাছ লাগানোর আহ্বান জানান। বজ্রনিরোধক টাওয়ার নির্মাণ করতে গিয়ে যেন হাওরের সৌন্দর্য্যে ব্যাঘাত না ঘটে। হাওর এখন পর্যটক কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টোর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরামের প্রেসিডেন্ট জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. কবিরুল বাশার বলেন, দেশের হাওর অঞ্চলগুলোতে বেশি বজ্রপাত হওয়ায় দ্রুত ওইসব অঞ্চলে আগাম বার্তা ও বজ্রনিরোধক টাওয়ার নির্মাণের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন, সরকারি হিসাব অনুযায়ী চলতি বছরের সাড়ে ৯ মাসে বজ্রপাতে ৩৪৯ জন লোকের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। তবে নিহতদের বেশিরভাগই কৃষক। কারণ তারা মাঠে কাজ করতে গিয়ে বৃষ্টিতে ভেজে। কাছাকাছি বড় গাছ না থাকায় কৃষকের ওপর পড়ে মৃত্যু হয়। এমতাবস্থায় দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ রাখতে যারা নিরলস পরিশ্রম করেন সেই কৃষক ভাইদের জানমাল রক্ষায় প্রতিটি হাওরে সরকারি বা বেসরকারিভাবে বজ্রনিরোধক টাওয়ার নির্মাণ খুবই জরুরি। বজ্রপাতের চলতি বছরের ৩১শে মার্চ থেকে ৭ই জুন পর্যন্ত ১৭৭ জনের মধ্যে ১২২ জনই কৃষি কাজ করা অবস্থায় মারা যান।