সিসিটিভি ফুটেজ দেখে কুমিল্লার পূজামণ্ডপে পবিত্র কুরআন রাখা ব্যক্তিকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, তার নাম ইকবাল হোসেন (৩৫)। পেশায় রাজমিস্ত্রি ইকবাল কুমিল্লার সুজানগর এলাকার নূর আহমেদ আলমের ছেলে।
কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ইকবাল হোসেনকে চিহ্নিত করার বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন।
প্রকাশ হওয়া সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, এক যুবক রাত ২টার পর কুমিল্লা শহরের নানুয়া দীঘির পাড়ের দর্পন সংঘের পূজামণ্ডপের দিকে যাচ্ছেন। মণ্ডপটিতে কোনো সিসি ক্যামেরা ছিল না। তবে মণ্ডপ সংলগ্ন রোগাবাড়ী শাহ আব্দুল্লাহ গাজীপুরী (রহ.)-এর মাজার এবং দীঘির পাড়ের একটি বাড়ির সিসি ক্যামেরার ফুটেজে এই দৃশ্য পেয়েছে পুলিশ।
ফুটেজে আরও দেখা যায়, ওই যুবক মণ্ডপের দিকে যাওয়ার সময় তার হাতে বই জাতীয় কিছু ছিল। এরপর ৩টা ১২ মিনিটের দিকে তাকে পূজামণ্ডপের দিক থেকে ফিরে আসতে দেখা যায়, তখন তার হাতে ছিল একটি ‘গদা’।
স্থানীয়রা জানায়, বুধবার ভোরে ওই পূজামণ্ডপে থাকা হনুমানের মূর্তির কোলে মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কুরআন রাখা ছিল। তখন হনুমানের হাতে থাকা গদাটি পাওয়া যায়নি।
কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ মনে করছেন, এই যুবককে গ্রেফতার করতে পারলেই আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে।
সূত্র জানিয়েছে, সিসিটিভি ফুটেজে শনাক্তকৃত যুবককে গ্রেফতার করতে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে।
এদিকে ঘটনার দিন সকালে ‘৯৯৯’ এ খবর পেয়ে কোতোয়ালি থানার ওসি নানুয়া দীঘির পাড়ের মণ্ডপ গিয়ে কুমিল্লা কুরআন উদ্ধার করেছিলেন। তখন ফেসবুকে তা লাইভ করে ঘটনা বর্ণনা দিয়েছিলেন যিনি, সেই ফায়েজকে পুলিশ সেদিনই গ্রেফতারের কথা জানিয়েছে।
ফেসবুকে ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়ার কুমিল্লাসহ সারাদেশে উত্তেজনা দেখা দেয়। ওই পূজামণ্ডপসহ কুমিল্লার অন্তত আটটি মন্দির ভাঙচুর এবং চাঁদপুর, নোয়াখালী, কক্সবাজার, ফেনীসহ বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।
প্রসঙ্গত, গত ১৩ অক্টোবর কুমিল্লা মহানগরীর নানুয়া দিঘিরপাড় পূজামণ্ডপে কোরআন রাখা নিয়ে মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বিভিন্ন থানায় আট মামলায় ৭৯১ জনকে আসামি করা হয়ে। এরমধ্যে কোতোয়ালী মডেল থানায় পাঁচটি, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানায় দুটি ও দাউদকান্দি থানায় একটি মামলা হয়েছে। ৯১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলায় ৭০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৪৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
কুমিল্লার ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই চাঁদপুর, চট্টগ্রামসহ কয়েকটি জেলায় উপাসনালয় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। চাঁদপুরে পুলিশের সঙ্গে মিছিলকারীদের সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে।