শারদীয় দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে ১২ অক্টোবর (২০২১) থেকে এদেশে যখন অনাবিল আনন্দযজ্ঞ চলছিল তখন ১৩ অক্টোবর কুমিল্লা মহানগরীর নানুয়া দিঘিরপাড় পূজামণ্ডপে কোরআন রাখা নিয়ে মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। সেদিন কুমিল্লার ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই চাঁদপুর, নোয়াখালী, কক্সবাজার, ফেনী ও চট্টগ্রামসহ কয়েকটি জেলায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। চাঁদপুরে পুলিশের সঙ্গে মিছিলকারীদের সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে।
বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করার কোন সুযোগ এখানে নেই। প্রতিটি ধর্মই মানুষের মধ্যে সাম্য, একতা, মানবতা এবং সহমর্মিতা প্রকাশের মাধ্যমে সহাবস্থানে বসবাসের শিক্ষা দেয়। এক ধর্মাবলম্বী অন্য ধমার্বলম্বীকে সম্মান করার আদেশ বিদ্যমান। বাংলাদেশের সংবিধানেও প্রত্যেক ব্যক্তির ধমীর্য় স্বাধীনতার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। ধর্মপালন কিংবা বর্জন ব্যক্তির নিজস্ব অধিকার। এমতাবস্থায় ‘ধর্মীয় বিষয়ে গুজব ছড়িয়ে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা’ আমাদের মতো অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের জন্য সত্যিই উদ্বেগজনক ঘটনা। তাছাড়া শেখ হাসিনা সরকারের সম্প্রীতি রক্ষার শত চেষ্টা এবং সম্প্রীতি বাংলাদেশের একাধিক ইতিবাচক কর্ম তৎপরতা সত্ত্বেও এদেশে ধর্ম নিয়ে খেলা চলবে- এমনটি মেনে নেওয়া যায় না।
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া প্রায় সব সহিংসতা বন্ধেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদাসীনতা ও অপেশাদারিত্বের বিষয়টি আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, বিশেষ করে সহিংসতা বন্ধে তাদের উদাসীন আচরণকে কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না। রাষ্ট্রে ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখতে তাদের আরও বেশি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা উচিত। তবে কুমিল্লার ঘটনায় অবশেষে ২০ অক্টোবর সিসিটিভি ফুটেজ দেখে কুমিল্লার পূজামণ্ডপে পবিত্র কুরআন রাখা ব্যক্তিকে পুলিশ শনাক্ত করেছে বলে গণমাধ্যম সূত্রে জানতে পেরেছি; যা অবশ্যই আমাদেরকে কিছুটা হলেও স্বস্তি এনে দিয়েছে।এবার তাকে যতটা দ্রুত সম্ভব গ্রেফতার করা হোক। সেইসঙ্গে এটি কোনো স্বার্থান্বেষী মহলের উদ্দেশ্যমূলক কাজ কি না তা নিশ্চিত হতে হবে। জড়িত প্রত্যেকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। কেউ উসকানি দিলে তাকেও আইনের আওতায় আনতে হবে।
এদিকে সম্প্রতি দেশের কোনো কোনো স্থানে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) ও জশনে জুলুসের বিরোধীতা করে সংবাদ সম্মেলন করেছে কওমি মাদ্রাসা ভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের নেতারা। এ ধরনের কর্মকাণ্ডও উসকানিমূলক বলে আমরা মনে করি। কারণ কারো ধর্মীয় কাজে বাধা সৃষ্টি না করে নিজের ধর্ম-কর্ম যথাযথভাবে পালন করাটাই প্রকৃত ধার্মিকের কাজ। তাই প্রশাসনকে এসব বিষয়েও সতর্ক থাকা প্রয়োজন বলে মনে করি।
‘সম্প্রীতি রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের বিকল্প নেই’ বলা হচ্ছে বারবার। সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এই ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ হতে হবে দল-মত নির্বিশেষ মানুষের দ্বারা; তাহলে বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্যে জাতি-ধর্ম-বর্ণ সম্মিলিতভাবে বেঁচে থাকার প্রয়াস সফল ও সার্থক হয়ে উঠবে। ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্য যারাই চেষ্টা করবে তাদের বিষয়ে সরকারকে যেমন আরো কঠোর হতে হবে তেমনি সমগ্র দেশবাসীকেও ঐক্যবদ্ধ হয়ে তা প্রতিহত করতে হবে।