মানুষের চিন্তার স্বাধীনতা, ভাবনার স্বাধীনতায় সৈয়দ আবুল মকসুদ বিশ্বাস করতেন বলে মন্তব্য করছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনের সংসদ সদস্য, বিশিষ্ট কলামিস্ট এবং মত ও পথ সম্পাদক, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। আজ শনিবার (২৩ অক্টোবর) রাজধানীর কাওরানবাজারে দ্য ডেইলি স্টার সেন্টারে সৈয়দ আবুল মকসুদ স্মৃতি সংসদ আয়োজিত সৈয়দ আবুল মকসুদ এর ৭৫ তম জন্মবার্ষিকীর এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, আমার সঙ্গে সৈয়দ আবুল মকসুদ ভাইয়ের সম্পর্কটা হঠাৎ করেই গড়ে উঠেছিল। মাঝে মাঝেই দেখা হতো। আমার জীবনের একটি বড় দুর্ঘটনার সময় আমি দেখেছি তিনি সত্যকে ধারণ করেছেন। তিনি তার অবস্থান থেকে সরে যাননি, বরং সঠিক পথে ছিলেন। নাসিরনগরের ঘটনায় আমাকে সাম্প্রদায়িক বানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অনেক তথাকথিত বাম নেতারা লিখিতভাবে আমাকে সাম্প্রদায়িক বানিয়ে দিয়েছিল। সে সময় মকসুদ ভাই আমাকে প্রেরণা দিয়েছিলেন, সাহস যুগিয়েছিলেন। বলেছিলেন, তিনি সত্য অনুসন্ধান করে জেনেছেন আসলে আমি সাম্প্রদায়িক না।
উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেন, আমাদের ভেতরে যে একটা প্রবণতা আছে, শোনা কথায় কান দেওয়ার। এই প্রবণতাটা তার মধ্যে ছিল না। শোনা কথা নিয়ে তিনি চলতেন না। চিন্তার স্বাধীনতা, মানুষের ভাবনার স্বাধীনতায় মকসুদ ভাই বিশ্বাস করতেন বলে আমি বিশ্বাস করি। সাধারণ দশটা মানুষের মতো উনি চিন্তা করতেন না। আমি আর দশটা মানুষের মতো চিন্তা করলেও আমি ওনার চিন্তাটাকে পছন্দ করতাম। আগ্রহভরে ওনার চিন্তাটাকে বোঝার চেষ্টা করতাম।
তিনি আরও বলেন, আমি যে সাম্প্রদায়িক না, তার একটি উদাহরণ আপনারা সাম্প্রতিক সময়ের এক ঘটনার মধ্যে পাবেন। ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবের কথা আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে। তারা সে ঘোষণা দিয়েছিল উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর জানাজা তারা পড়বে না। মকসুদ ভাই যদি থাকতেন, উনি হয়তো বলতেন, আপনার জানাজা আমি পড়বো।
দ্য ডেইলি স্টার সেন্টারের এই আলোচনা সভায় অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সভাপতিত্বে প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এবং র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি। অন্যান্য আলোচকের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সুভাষ সিংহ রায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস, জোনায়েদ সাকী, আরিফ খান প্রমুখ।
সৈয়দ আবুল মকসুদের জন্ম ১৯৪৬ সালের ২৩ অক্টোবর মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার এলাচিপুর গ্রামে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং সাংবাদিকতায় উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন জার্মানির বার্লিনস্থ ‘ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিউট ফর জার্নালিজম’ থেকে।
ছাত্র জীবনে আবুল মকসুদ ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের সক্রিয় কর্মী ও বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। একাত্তরের ২৫ মার্চের পরে মস্কোপন্থী ন্যাপের নেতা আব্দুল হালিম চৌধুরীর গঠিত মুক্তিবাহিনীর সদস্য হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা রাখা ছাড়াও কলকাতা থেকে প্রকাশিত আব্দুল মান্নান সম্পাদিত জয়বাংলায় যুক্ত ছিলেন। ১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বরের পর বাংলাদেশ সরকারের ইনফর্মেশন সেল-এ যোগদান করেন। বাহাত্তরের জানুয়ারি থেকে বার্তা সংস্থা বাংলাদেশ প্রেস ইন্টারন্যাশনাল (সাবেক পিপিআই) –এ যোগ দেন, যা পরে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার সাথে অঙ্গীভূত করা হয়। বাসস-এ ছিলেন বার্তা সম্পাদক ও উপ-প্রধান বার্তা সম্পাদক। চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ’র প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন।
সাহিত্য অঙ্গনে সৈয়দ আবুল মকসুদের যাত্রা ষাটের দশকে। শুরু থেকেই থেকেই কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ সহ সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় কাজ করেন। একজন গবেষক হিসেবে তিনি বহু মৌলিক আঁকর গ্রন্থের প্রণেতা – সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর জীবন ও সাহিত্য, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, পথিকৃত নারীবাদী খয়রুন্নেসা খাতুন প্রভৃতি। বাংলাদেশে মহাত্মা গান্ধী বিষয়ে গবেষণার পথিকৃত সৈয়দ আবুল মকসুদ। গবেষণায় আবুল মকসুদের আরেকটি অনন্য অবদান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা, সলিমুল্লাহ মুস্ লিম হল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস চর্চায় অবশ্যপাঠ্য হয়ে উঠেছে। তাঁর রচিত গ্রন্থের সংখ্যা চল্লিশটির অধিক।