আগামীকাল পায়রা সেতুর উদ্বোধন

পটুয়াখালী প্রতিনিধি

পায়রা সেতু
দৃষ্টিনন্দন পায়রা সেতু। সংগৃহীত ছবি

আগামীকাল উদ্বোধন হতে যাচ্ছে দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের পায়রা সেতু। রোববার (২৪ অক্টোবর) সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতুর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতোমধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।

সেতু উদ্বোধন কেন্দ্র করে এলাকায় ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। পায়রা নদীর ওপরে নির্মিত এই সেতু উদ্বোধন করলে ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে নির্বিঘ্নে আরামদায়কভ্রমণের মূল কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠবে সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটা।

স্থানীয় ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘পায়রা সেতুর কারণে আমাদের সরাসরি ঢাকা থেকে পটুয়াখালী আসতে মাত্র ৬ ঘণ্টা সময় লাগবে। যার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।’

পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক আবদুল মান্নান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ অঞ্চলের জন্য চাওয়ার আগে সব দিয়েছেন। পায়রা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। আগামীকাল তিনি নিজেই উদ্বোধন করবেন। যার কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।’

পটুয়াখালী পৌর মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। পায়রা পোর্ট, পায়রা সেতুর ফলে বাংলাদেশের শিল্প প্রতিষ্ঠান আমাদের এখানে জমি ক্রয় করে স্থাপনা স্থাপন করছে। পায়রা সেতুর উদ্বোধন হলে মানুষের পদচারণ বাড়বে। যার ফলে এখানকার মানুষের জীবনমান বৃদ্ধি পাবে।

জানা গেছে, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী সেতুর আদলেই এক্সট্রা ডোজ ক্যাবল পদ্ধতিতে পায়রা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুতে থাকা ১৬৭টি বক্স গার্ডার সেগমেন্টের কারণে দূর থেকে দেখলে মনে হবে এটি শূন্যে ভেসে আছে। ১ হাজার ৪৭০ মিটার দৈর্ঘ্য সেতুটি নির্মাণে বসানো হয়েছে ১৩০ মিটার দৈর্ঘ্যের বেশ কিছু পাইল।

এসব পাইল পদ্মা সেতুতে বসানো পাইলের থেকেও অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক। ৩২টি স্প্যানের মূল সেতুটি বিভিন্ন মাপের ৫৫টি টেস্ট পাইলসহ ১০টি পিয়ার পাইল ও পিয়ার ক্যাপের ওপর নির্মিত।

পায়রা সেতু প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, এই সেতু নির্মাণে ১ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এর মধ্যে ৮২ শতাংশ অর্থায়নে ছিল কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড এ্যাপেক্স ফান্ড। ২০১৩ সালের ১৯ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পটুয়াখালী-বরিশাল মহাসড়কের লেবুখালী ফেরিঘাটের দক্ষিণ পাশে এই সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন।

২০১৬ সালের ২৪ জুলাই সেতুর কাজ শুরু হয়। ৩ দফা সময় বাড়ানোর ফলে সেতুটি নির্মাণে সময় লেগেছে ৮ বছর। জয়েন্ট ভেঞ্চারে সেতু নির্মাণে লিডিং ঠিকাদার চীনের লো ঝিয়াং কোম্পানি। সেতুর অধিকাংশ মালামালও এসেছে চীন থেকে। সেতু উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে এলাকায় সাধারণ মানুষসহ গাড়ি চালকদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে।

সেতু নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী আব্দুল হালিম বলেন, সর্বোচ্চ জোয়ারেও নদীর উপরিভাগ থেকে ১৮.৩০ মিটার উঁচুতে থাকবে এ সেতুটি। ৪ লেনবিশিষ্ট এই সেতুর উভয় পাশে নির্মিত হয়েছে ১ হাজার ২৬৮ মিটার দৈর্ঘ্যের অ্যাপ্রোচ সড়ক। সেতুতে মনোরম আলোকসজ্জা করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সেতুর আলোতে ঝলমল করছে পায়রা নদী-সংলগ্ন এলাকা। দেশে এই প্রথম পায়রা সেতুতে বসানো হয়েছে হেলথ মনিটরিং সিস্টেম। ভূমিকম্প, বজ্রপাত এবং ওভারলোডেড গাড়ির ক্ষেত্রে এই সিস্টেম আগাম সংকেত দেবে। ফলে বড় ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে সেতুটি।

শেয়ার করুন