গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণের কারণে দূষণ যেভাবে হচ্ছে তাতে চলমান শতাব্দীতে পৃথিবীর তাপমাত্রা ২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে। মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) এক রিপোর্টে এই তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘ। তাপমাত্রা বৃদ্ধির বিষয়টিকে ‘বিপর্যয়কর’ বলেও উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।
গ্ল্যাসগোতে আগামী রোববার থেকে জলাবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন কপ-২৬ শুরুর আগে জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) এশিয়ায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে বার্ষিক এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। কপ-২৬ সম্মেলন রোববার শুরু হয়ে চলবে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত।
সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে জানিয়েছে, জলাবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সম্মেলন কপ-২৬ এ পরিবেশ রক্ষায় নতুন টার্গেট নির্ধারণ করা হবে। কিন্তু প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে ১২০টি দেশ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তা পূরণ হয়নি। জাতিসংঘের রিপোর্টেই তা স্পষ্ট।
রিপোর্ট বলছে, বিশ্বজুড়ে দূষণের যে মাত্রা, তাতে এই শতাব্দীতে পৃথিবীর তাপমাত্রা দুই দশমিক সাত ডিগ্রি বাড়তে পারে। অথচ প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে ঠিক হয়েছিল, তাপমাত্রা এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধির মধ্যে আটকে রাখতে হবে।
জাতিসংঘের রিপোর্টে বলা হয়েছে, কার্বন ফুটপ্রিন্টই তাপমাত্রা বৃদ্ধির সবচেয়ে বড় কারণ। তথ্য দিয়ে তাদের বক্তব্য প্রমাণ করা হয়েছে রিপোর্টে। বলা হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রিন হাউস গ্যাসের দূষণ সাত দশমিক পাঁচ শতাংশ কমার সম্ভাবনা আছে।
কিন্তু প্যারিস সম্মেলনে স্থির হয়েছিল তা ৫৫ শতাংশ কমানো হবে। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, লক্ষ্যমাত্রা থেকে বহু দূরে দাঁড়িয়ে আছে দেশগুলো। দ্রুত লক্ষ্যপূরণ করতে না পারলে বিশ্বজুড়ে আবহাওয়া এবং পরিবেশের অবস্থা আরও খারাপ হবে বলে সতর্ক করা হয়েছে রিপোর্টে।
বলা হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে তাপমাত্রা বৃদ্ধি রোধ করতে হলে প্রতি বছর গোটা পৃথিবীতে কার্বন নিঃসরণ ২৮ গিগাটন কমাতে হবে। অর্থাৎ, প্রতিটি দেশকে বাৎসরিক কার্বন ফুটপ্রিন্ট ৩০ শতাংশ হারে কমাতে হবে।
জাতিসংঘের জলবায়ু সংক্রান্ত সংস্থার প্রধান ইংগার অ্যান্ডারসন বলেছেন, ‘সময় অত্যন্ত দ্রুত চলে যাচ্ছে। হাতে মাত্র আট বছর সময় আছে। এর মধ্যে পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়িত করতে না পারলে ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহতার সামনে দাঁড়াতে হবে বিশ্বকে।’
প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য প্রতিটি দেশকে নিজের মতো টার্গেট তৈরি করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতে যে বিশেষ লাভ হয়নি, তা এখন স্পষ্ট। এর ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণ দুই দশমিক সাত ডিগ্রি সেলসিয়াসে গিয়ে পৌঁছেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবারের সম্মেলনে কড়া ব্যবস্থা না নিলে আগামী দিনে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে।
বস্তুত, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে গোটা বিশ্বে এবছর তাপপ্রবাহ দেখা গেছে। দাবানল, তাপপ্রবাহ, বন্যায় ক্ষতি হয়েছে অনেক। আবহাওয়ার খামখেয়ালি রূপ দেখা যাচ্ছে সর্বত্র। এবারের জলবায়ু সম্মেলনে এই সমস্ত বিষয়গুলোকেই আলোচনায় রাখা হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
অবশ্য করোনাভাইরাস মহামারি এবং লকডাউনের কারণে গোটা বিশ্বেই আবহাওয়ার সামান্য উন্নতি দেখা গেছিল। কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ বেশ খানিকটা কমেছিল। কিন্তু লকডাউন উঠে যাওয়ার পরে সেই গ্রাফ ধরে রাখা যায়নি।
ফের কার্বন নিঃসরণের গ্রাফ ওপরের দিকে উঠতে শুরু করেছে। জাতিসংঘের রিপোর্টে বলা হয়েছে, লকডাউনের সময়ের গ্রাফ যদি বেধে ফেলা যেত, তাহলে পরিবেশের পক্ষে তা ভালো হতো।
ডব্লিউএমও বলছে, চরম বৈরী আবহাওয়া এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ২০২০ সালে এশিয়াজুড়ে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি, লাখ লাখ মানুষ বাস্ত্যুচুত এবং অবকাঠামো ও বাস্ত্যুসংস্থানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় শত শত বিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে হয়েছে।
‘খাদ্য ও পানির নিরাপত্তাহীনতা, স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং পরিবেশের অবনতির কারণে টেকসই উন্নয়ন হুমকির সম্মুখীন হয়েছে।’
প্রতিবেদনে জলবায়ু-সম্পর্কিত বিপদের কারণে মোট বার্ষিক গড় ক্ষয়ক্ষতির তথ্যও উল্লেখ করা হয়েছে। ডব্লিউএমও বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে চীনের আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এরপরই ভারত ৮৭ বিলিয়ন, জাপান ৮৩ বিলিয়ন এবং দক্ষিণ কোরিয়া ২৪ বিলিয়ন ডলার ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে।
সূত্র: ডয়চে ভেলে