টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ: আসিফ আলির চার-ছক্কায় আফগানদের হারালো পাকিস্তান

ক্রীড়া প্রতিবেদক

আবারও সেই আসিফ আলি। আবারও ছক্কার ঝড় এবং আবারও পাকিস্তানের জয়। আফগানিস্তানের বিপক্ষে যখন দারুণ চাপে, তখন ১৯তম ওভারে চারটি ছক্কা মেরে পাকিস্তানকে ৫ উইকেটের দারুণ এক জয় এনে দিলেন আসিফ আলি।

আফগানদের ছুঁড়ে দেয়া ১৪৮ রানের জবাবে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে যখন ধুঁকতে শুরু করেছিল পাকিস্তান এবং শেষ মুহূর্তে জয়টা কঠিন হয়ে পড়েছিল, তখনই মাঠে নামেন আসিফ আলি।

universel cardiac hospital

এরপর মাত্র ৭টি বল মোকাবেলা করলেন। করিম জানাতের করা ১৯তম ওভারে ৪টি ছক্কা মারলেন আসিফ। তাতেই জয় নিশ্চিত হয়ে গেলো পাকিস্তানের।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও এই আসিফ আলি বাঁচিয়েছিলেন পাকিস্তানকে। কিউইদের কঠিন ফিল্ডিং আর নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সামনে যখন পাকিস্তান জয়ের দ্বারপ্রান্তে গিয়েও থেমে যাবে মনে হচ্ছিল, তখন তিনটি ছক্কায় দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন আসিফ।

কিন্তু আফগানিস্তানের বিপক্ষে এই ম্যাচে ছিলেন আরও বজ্রকঠিন। ১৮তম ওভারে আফগান পেসার নাভিন-উল হক ছিলেন খুবই ক্লিনিক্যাল। মাত্র ২ রান দিয়েছিলেন। তুলে নিয়েছিলেন শোয়েব মালিকের গুরুত্বপূর্ণ উইকেট।

আগের ওভারে রশিদ খানের শেষ বলে বোল্ড হয়েছিলেন বাবর আজম। বাবরের আউট হওয়াটাই যেন সাপে বর হয়ে এলো পাকিস্তানের জন্য এবং আফগানদের জন্য হলো কাল। কারণ বাবর আউট না হলে হয়তো মাঠে নামা হতো না আসিফের। তাতে বরং, চাপে পড়ে অল্প কয়েক রানে হেরে যেতে হতো পাকিস্তানকে।

তবুও ততক্ষণ আশা ছিল, কারণ শোয়েব মালিক ছিলেন উইকেটে। কিন্তু ১৮তম ওভারে যখন শোয়েব মালিকও কট বিহাইন্ড হয়ে গেলেন এবং এক ওভার থেকে এরো মাত্র ২ রান, তখন দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ছিল পিন পতন নীরবতা।

কারণ, ১২ বলে ২৪ রান প্রয়োজন তখন পাকিস্তানের। আফগান বোলাররা যেভাবে নিয়ন্ত্রিত বোলিং করছেন আর টাইট ফিল্ডিং করছেন, তখন রান বের করাটাই ছিল কঠিন।

তবে, এক্ষেত্রে আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ১৮তম ওভারের শেষ বলে নাভিন-উল হকের কাছ থেকে একটি রান সহজে আদায় করতে পারবেন শাদাব খান। কিন্তু নন স্ট্রাইক প্রান্তে থাকা আসিফ আলি তাকে ফিরিয়ে দেন। রান করতে দেননি। এর অর্থ পরের ওভারে স্ট্রাইকে থাকছেন আসিফই।

এই একটি সিদ্ধান্তই অনেক কিছু পরিবর্তন করে দিলো। বোলার ছিলেন করিম জানাত। আগের তিন ওভারে ২৪ রান দিয়েছিলেন তিনি। পরের ওভারের প্রথম বলেই লং অফের ওপর দিয়ে বলকে পাঠিয়ে দিলেন গ্যালারিতে। দ্বিতীয় বল ডট। কোনো রান হলো না। তৃতীয় বলে আবারও ছক্কা। মিড উইকেটের ওপর দিয়ে আবারও গ্যালারিতে বল পাঠালেন আসিফ।

চতুর্থ বল ডট। রান হলো না। পঞ্চম বলে আবারও ছক্কা। করিম জানাত করতে চেয়েছিলেন ইয়র্কার। কিন্তু হয়ে গেলো হাফভলি। সেটাকে আসিফ গ্যালারিতে পাঠালেন লং অফের ওপর দিয়ে। ৬-০-৬-০-৬। চার বলের হিসাব। ৭ বলে তখন ৬ রান দরকার। এবার আর ডট দিলেন না আসিফ। পরের ওভারেও খেলাকে যেতে দিলেন না। এক্সট্রা কভারের ওপর দিয়ে বলকে পাঠিয়ে দিলেন সীমানার ওপারে।

পুরো ১ ওভার বাকি থাকতেই জয় নিয়ে মাঠ ছাড়লেন পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা। সে সঙ্গে টানা তিন জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষেই অবস্থান করছেন তারা। শুধু তাই নয়, সেমিফাইনালের পথে অনেকটাই এগিয়ে গেলেন তারা।

টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে ধুঁকতে থাকলেও শেষ মুহূর্তে মোহাম্মদ নবি আর গুলবাদিন নাইবের ঝড়ে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৪৭ রানের লড়াকু স্কোর সংগ্রহ করে আফগানিস্তান।

জবাব দিতে নেমে শুরুতেই মোহাম্মদ রিজওয়ানের উইকেট তুলে নিয়ে পাকিস্তানকে চেপে ধরার চেষ্টা করে আফগানরা। কিন্তু বাবর আজম আর ফাখর জামানের ৬৩ রানের জুটি পাকিস্তানকে খেলায় ফিরিয়ে আনে। ২৫ বলে ফাখর জামান ৩০ রানে মোহাম্মদ নবির বলে এলবিডব্লিউ হয়ে যান। পাকিস্তানের দলীয় রান ছিল তখন ৭৫।

এরপর মোহাম্মদ হাফিজ এসে বরাবরের মত ঝড় তোলার চেষ্টা করে আউট হয়ে যান। ১০ বলে ১০ রান করেন তিনি। আগের ম্যাচের মত শোয়েব মালিক চেষ্টা করেন ম্যাচ বের করে আনতে। কিন্তু তিনি ১৮তম ওভারে নাভিন-উল হকের বলে কট বিহাইন্ড হয়ে যান। নামের সঙ্গে যোগ করেন কেবল ১৯ রান। বল খেলেন ১৫টি।

তার আগেই অবশ্য বাবর আজম বোল্ড হয়ে যান রশিদ খানের বলে। ৪৭ বলে ৫১ রান করেন বাবর। শেষ মুহূর্তে বাবর আর শোয়েব মালিকের উইকেট হারিয়ে যখন দুঃশ্চিন্তায় পাকিস্তানি সমর্থকরা, তখনই ছক্কার ঝড় তোলেন আসিফ আলি।

আফগানদের হয়ে ২ উইকেট নেন রশিদ খান। ১টি করে উইকেট নেন মুজিব-উর রহমান, মোহাম্মদ নবি এবং নাভিন-উল হক।

শেয়ার করুন