স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে ৩১ অক্টোবর শুরু হয়েছে ২৬তম বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন (কপ-২৬)। ১৯৯৫ সালে জাতিসংঘের উদ্যোগে প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর এটি হলো ২৬তম সম্মেলন। বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন যখন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, তখন বিশ্ববাসীর সামনে জলবায়ু পরিবর্তনের অনেক কুফল বিশেষভাবে দৃশ্যমান। এবারের সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ, জলবায়ু বিশেষজ্ঞ, মীমাংসাকারীসহ প্রায় ৩০ হাজার মানুষের প্রত্যক্ষভাবে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। সেইসঙ্গে এবারের সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ কমানোর ব্যাপারে নিজেদের পরিকল্পনা উপস্থাপনের কথা রয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কপ-২৬ এর শীর্ষ বৈঠকে ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে। এবারের সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের পাশাপাশি ৪৬ জাতির ফোরাম সিভিএফের (ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম) নেতৃত্ব দেবেন। বাংলাদেশ বর্তমানে সিভিএফ সভাপতি। ‘সিভিএফ-এর অন্তর্ভুক্ত দেশের মানুষসহ সংশ্লিষ্ট সবাই বিশেষভাবে আশাবাদী যে ‘সিভিএফ-কপ-২৬ লিডার্স ডায়ালগ’ থেকে জলবায়ু পরিবর্তন রোধ, অভিযোজন ও অর্থায়নের লক্ষ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে প্যারিস চুক্তিতে সই করা দেশগুলো বৈশ্বিক উষ্ণতা প্রাক-শিল্পায়ন যুগের চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি যেন না বাড়ে, তা নিশ্চিতে ব্যবস্থা নিতে একমত হয়েছিল। এ চুক্তির আওতায় ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ কার্যত শূন্যে নামিয়ে আনতে বিভিন্ন দেশকে এখন কার্বন নিঃসরণ ব্যাপক হারে কমাতে হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সম্প্রতি কানাডায় ঘটে গেছে ইতিহাসের সর্বোচ্চ দাবদাহ। ইউরোপের বন্যাও। বিশ্বের ১৩৪টি দেশ এখন দাবানলের হুমকির মুখে, যা নতুন রেকর্ড। ২০২০ সালে পৃথিবীর প্রায় ২০ শতাংশ এলাকা খরার সম্মুখীন হয়েছে। এর সবই হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন যে, এ অবস্থা চলতে থাকলে চলতি শতাব্দীর শেষ নাগাদ সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা প্রায় দুই মিটার বৃদ্ধি পাবে। ফলে ব্যাপক প্লাবনের মুখে পড়তে হবে সমুদ্র অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষদের। মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে। যে কারণে জোরালো দাবি উঠেছে, যেসব দেশের কারণে জলবায়ু শরণার্থীর সৃষ্টি, সে সব দেশকেই তাদের দায়িত্ব নিতে হবে।
অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণ জলবায়ুর পরিবর্তনের মূল কারণ এবং এর প্রভাবে পৃথিবীর তাপমাত্রা দ্রুতহারে বেড়ে চলেছে। গত ৫ বছর ছিল বিগত ১৫০ বছরের তুলনায় উষ্ণতম সময়। ১৯০১ সালের তুলনায় সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির হার তিনগুণ বেড়েছে। এ সংকটের শুরু শিল্পযুগের সূচনা থেকে। যেসব দেশ যতখানি শিল্পোন্নয়ন ঘটিয়েছে, সে সব দেশ ততখানিই পরিবেশকে দূষিত করেছে। কিন্তু এর কুফল বেশি ভোগ করছে শিল্পে পিছিয়ে থাকা দেশগুলো। পরিবেশের এ বিপর্যয় মোকাবিলার দায়ভার ধনী দেশগুলোর ওপরই বেশি বর্তায়। কিন্তু দুঃখজনক হলো, ধনী দেশগুলো এ বিষয়ক প্রতিশ্রুতি রক্ষায় এখনো আন্তরিক নয়। তবে এ গ্রহকে বসবাস উপযোগী রাখতে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে সবাইকে ঐকমত্যে পৌঁছাবেন এবং সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দায়িত্বশীলতা ও আন্তরিকতার পরিচয় দিবেন- এমনটিই আমাদের প্রত্যাশা।