গুরুত্বপূর্ণ কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোর প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর বিপদকে ঘনীভূত করছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, কার্বন নিঃসরণকারী গুরুত্বপূর্ণ উন্নত দেশগুলো তাদের প্রতিশ্রুত তহবিল না দেওয়ায় জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দরিদ্র দেশগুলো আরও অসহায় অবস্থায় পড়ছে। এটা ‘দুর্ভাগ্যজনক এবং হতাশাব্যঞ্জক’। এতে জলবায়ু পরিবর্তনের ধ্বংসাত্মক পরিণতি মোকাবিলায় আমাদের নিজেদের মতো করে পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে।
মঙ্গলবার (২ নভেম্বর) গ্লাসগোতে কপ২৬ সম্মেলনের পাশাপাশি ফোরামের সভাপতি হিসেবে ৪৮ জাতি সিভিএফ নেতাদের সংলাপে দেওয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
এ পরিস্থিতি নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণকারী দেশগুলো তাদের প্রতিশ্রুত বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলার দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
কপ২৬ সম্মেলনের স্বাগতিক দেশ যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসও গ্লাসগো শহরের কপ-২৬ সম্মেলনে ‘ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম লিডার্স ডায়ালগ : ফোর্জিং এ সিভিএফ-কপ-২৬ ক্লাইমেট ইমার্জেন্সি প্যাক্ট’ শীর্ষক সংলাপে ভাষণ দেন।
সংলাপে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি গুরুত্বপূর্ণ কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোকে আবারও তাদের প্রতিশ্রুতি স্মরণ করান এবং তাদের জন্যই ৪৮ জাতি সিভিএফ সদস্য দেশগুলোকে অতিরিক্ত ঝুঁকিতে পড়তে হচ্ছে বলে জানান।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সম্মানে বাংলাদেশ ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ চালু করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কম কার্বন কৌশল’ অবলম্বনের মাধ্যমে আমাদের উন্নয়নের পথ নির্দেশনা দিতেই এ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এমনিভাবে ৩৭ জন সিভিএফ সদস্য জলবায়ু সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য জলবায়ু সহিষ্ণুতার নিজস্ব পরিকল্পনা গড়ে তুলবে।
বাংলাদেশের সরকারপ্রধান আরও বলেন, পর্যাপ্ত, টেকসই ও সহজলভ্য জলবায়ু অর্থায়ন ছাড়া কার্যকর কর্মপরিকল্পনা সম্ভব নয়। তাই এটা দুঃখজনক এবং হতাশাজনক যে, এখন পর্যন্ত প্রধান গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনকারী দেশগুলো তাদের প্রতিশ্রুত বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলার সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়েছে। সে কারণেই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবজনিত অস্তিত্ব সংকটের মুখোমুখি আমরা, সিভিএফ সদস্যরা।
কপ২৬ সম্মেলন থেকে ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরের অভিযোজন ও প্রশমনের ৫০:৫০ আনুপাতিক হারে প্রতিবছর মোট ৫০০ বিলিয়ন ডলারের একটি বিতরণ পরিকল্পনা মাফিক অর্থায়নে উন্নত দেশগুলোর প্রতি দাবি জানান শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী ও সিভিএফ চেয়ারম্যান আরও বলেন, সিভিএফ একটি ‘জলবায়ু জরুরি চুক্তি’ নিয়ে এসেছে। এ চুক্তি জলবায়ু অর্থ সরবরাহ পরিকল্পনাকে সমর্থন করে।
তিনি বলেন, এটি তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে নিয়ন্ত্রিত রাখার বিষয়টি ক্রমাগত অগ্রগতি নিশ্চিত করবে। আমরা কপ২৬-এর প্রেসিডেন্সি এবং ইউএনএফসিসিসির সব সদস্যকে সম্মেলনের ঘোষণাপত্রের অংশ হিসেবে জলবায়ু জরুরি চুক্তি গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।