আবেগে ‘পেইনকিলার’ খাবার কথা বলেছিলেন রিয়াদ

ক্রীড়া প্রতিবেদক

টানা ৫ হারে শেষ হলো টাইগারদের বিশ্বকাপ মিশন। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং— এহেন কোনো জায়গা নেই যেখানে ব্যর্থ হননি টাইগাররা। মাঠের বাজে পারফর্মের প্রতিফলনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে সবখানেই সমালোচিত হয়েছেন খেলোয়াড়রা। সংবাদ সম্মেলনে এসে সেই সমালোচনার জবাবে বাড়তি প্রতিক্রিয়াও দেখিয়েছিলেন ক্রিকেটাররা।

বিশ্বকাপে শ্রীলংকার বিপক্ষে হারের পর মুশফিকুর রহিম তাদের নিয়ে সমালোচনাকারীদের আয়নায় মুখ দেখতে বলেছিলেন। সাকিব দিয়েছিলেন বাঁকা বাঁকা উত্তর। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বলেছিলেন নিজের পরিবারের কথা। জানিয়েছিলেন, দলের জন্য তাদের ত্যাগের কথা। তখন তিনি বলেছিলেন, তারা পেইনকিলার খেয়ে হলেও মাঠে নামেন।

কিন্তু আজ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দল সম্পূর্ণ ব্যর্থ হবার পর টাইগার অধিনায়ক জানালেন আবেগি হয়ে তিনি জানিয়েছিলেন পেইনকিলার খাবার কথা। আজ নিজের ভুল স্বিকার করলেন। দেশকে প্রতিনিধিত্ব করছেন তাই সমালোচনার সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে চান তারা।

‘পেইনকিলার’ খাবার প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে রিয়াদ বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কথা যেটা বললেন, বিশেষ করে আমি বলছি সম্ভবত আমি আবেগি হয়ে এমন উত্তর দিয়েছি। সমালোচনা সবসময়ই হবে, আমি কখনোই বলিনি যে সমালোচনা হবে না। সমালোচনা হবে এবং এটা আমাদের মানিয়ে নিতে হবে। কারণ দেশ ও দলের জন্য পারফর্ম করা আমাদের দায়িত্ব।’

অবশ্য আগেও বাংলাদেশ বাজে খেললে খেলোয়াড়দের সমালোচনা করা হতো। তবে তখন সমর্থকদের সমালোচনার জবাবে মাঠের পারফরম্যান্স ব্যবহার হতো এবার ছিল ঠিক উল্টো। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বাঁকা উত্তর দিয়েছেন ক্রিকেটাররা। সমালোচিত হয়ে পুষে রাখা সেই ক্ষোভের উদগিরন ঘটিয়েছেন সংবাদ সম্মেলনে। এমন কিছু প্রতিক্রিয়ার বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

তবে সমালোচিত হওয়ায় বাজে ফর্মের দিকে দোষ চাপাচ্ছেন মাহমুদউল্লাহ। তিনি বিশ্বাস করেন দল খারাপ করলে সমালোচনা হবেই তবে এও মানেন তিনি অনেক বেশি আবেগি হয়ে পড়েছিলেন।

অধিনায়ক বলেন, ‘যখন আপনি করবেন না (পারফর্ম) তখন আপনাকে সমালোচিত হতে হবে। সবকিছুরই একটা নির্দিষ্ট পয়েন্ট থাকে। অনেক কিছু অনেক সময় বুঝি আবার হয়তো ইগনোরও করি। ওমানের ওই সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলাম সেটা আমি আবেগি হয়ে বলেছিলাম। অনেক সময় আমার ভেতর অনেক আবেগ করে।’

বিশ্বকাপের মূলপর্বে এবারও জয়হীন ছিল বাংলাদেশ দল।

টানা ৬ষ্ঠ আসরে মূলপর্বে জয়হীন থাকলো বাংলাদেশ দল। ব্যর্থতার বৃত্তে ঘোরা বাংলাদেশ ব্যর্থ ছিল সব বিভাগেই। প্রশ্ন উঠেছিল অধিনায়কত্ব নিয়েও। জল্পনা ছিল মাহমুদউল্লাহর বদলি হিসেবে নতুন অধিনায়ক আসারও! কিন্তু মাহমুদউল্লাহর দাবি, টাইগারদের নেতৃত্বে কে থাকবেন আর কে থাকবেন না সেটা ঠিক করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।

বিশ্বকাপের ভরাডুবির পর নিজের ঘাটতির কথাও স্বিকার করেছেন টাইগার টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক। তিনি বলেন, ‘অধিনায়কত্বের বিষয়টা আমার হাতে নেই। এটা বোর্ডের সিদ্ধান্ত। আমার পক্ষ থেকে আমি সব সময় চেষ্টা করেছি দলটাকে আগলে রাখার। পারফরম্যান্স আদায় করার জন্য। সম্ভবত আমার অধিনায়কত্বে ঘাটতি ছিল। পারফরম্যান্স আদায় করতে পারিনি। অধিনায়কত্ব নিয়ে সিদ্ধান্ত আসলে বোর্ড দেবে। এটা আমার হাতে নেই।’

মাহমদুউল্লাহর অধিনায়কত্বে এবার পূর্ণ শক্তির বাংলাদেশ নিয়েও পুরো আসরে আট ম্যাচ খেলে টাইগাররা জিতেছে মাত্র দুটি। বিপরীতে হেরেছে ৬টি ম্যাচ। এর মাঝে ছিল স্কটল্যান্ডের মতো নন টেস্ট খেলুড়ে দলও। তবে পুরো আসরে টাইগারদের এমন হতশ্রী পারফরম্যান্সের কোনো ব্যাখা নেই মাহমুদউল্লাহর কাছে।

তিনি বলেন, ‘কিছু প্রশ্নের উত্তর আমি নিজেও জানি না সম্ভবত। এই মুহূর্তে এগুলো বলা কঠিন। আমি বিশ্বাস করি যে আমাদের দলটা যে অবস্থায় ছিল আপনি যদি আগের সিরিজগুলো দেখেন, আমরা প্রথম ম্যাচ জিতেছি একটা ধারাবাহিকতা পেয়েছি, দ্বিতীয় ম্যাচ জিতেছি একটা ধারাবাহিকতা পেয়েছি। আমার মনে হয় আমাদের দলের ধারাবাহিকতা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’

মাহমুদউল্লাহ ধারাবাহিকতার কথা তুলে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে যখন টুর্নামেন্ট শুরু করি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মতো। যখন আমরা সিরিজ শুরু করি। আমাদের ধারাবাহিকতা খুব গুরুত্বপূর্ণ আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য। এটায় আমাদের ব্যাঘাত হয়েছিল। এ কারণে আমরা স্ট্রাগল করেছি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচটা যদি আমরা জিততে পারতাম আমরা সেই ধারাবাহিকতায় আসতাম। আত্মবিশ্বাস বাড়তো। এটা এখন বলেও লাভ নেই আমরা বাজে পারফরম্যান্স করেছি।’

শেয়ার করুন