চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়তে থাকে জ্বালানি তেলের দাম। এতে ডিজেলে লোকসানের মুখে পড়ে বিপিসি। সার্বিক প্রেক্ষাপটে তাই ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বৃদ্ধি করেছে সরকার। বুধবার রাতে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে ৮০ টাকা করা হয়েছে। আগে কেরোসিন ও ডিজেলের দাম ছিল ৬৫ টাকা।
ডিজেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে গণপরিবহন ও পণ্যবাহী যানবাহনের মালিকেরা শুক্রবার সকাল থেকে অনির্দিষ্ট কালের ধর্মঘট পালন করছে। গণপরিবহনের মালিকদের দাবি, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বর্তমান ভাড়ায় পোষাতে পারছেন না তাঁরা। ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, ট্যাংকলরি, প্রাইম মুভার মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদও একই মনোভাব পোষণ করেছে। পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা ধারণা করছি, সরকার মালিকপক্ষের দাবি না মেনে পারবে না। এর অর্থ পরিবহন ভাড়া বাড়বে এবং শেষ পর্যন্ত এর দায় বহন করতে হবে যাত্রীসাধারণ ও বাজারের ওপর। ফলে শেষ পর্যন্ত চাপ বাড়াবে জনজীবনেই।
এদিকে বাংলাদেশ সরকার যখন আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে, তখন ভারত পেট্রল ও ডিজেলের দাম লিটারে যথাক্রমে ৫ ও ১০ রুপি কমিয়েছে। বৃহস্পতিবার ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষণায় বলা হয়, আসন্ন রবি শস্যের মৌসুমে কৃষকেরা যাতে উপকৃত হন, সে জন্য জ্বালানি তেলের দাম কমানো হচ্ছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ভোক্তাদের সুবিধার্থে রাজ্য সরকারগুলোকে জ্বালানি তেলের ওপর ভ্যাট কমানোর অনুরোধও করেছে।
সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ২৫ শতাংশ বাড়ানো কতটা যৌক্তিক? সেই প্রশ্নটি থেকেই যায়। দেশে পরিবহন ছাড়া কৃষিকাজেও বিপুল পরিমাণ ডিজেল ব্যবহৃত হয়। সে ক্ষেত্রে ডিজেলের দাম বাড়লে কৃষিপণ্যের উৎপাদন খরচও অনেক বেড়ে যাবে। এর ওপর পরিবহন ভাড়া বাড়লে সীমিত আয়ের মানুষের জীবন ও জীবীকা দুর্বিসহ হয়ে উঠবে। এমতাবস্থায় আমরা আশা করব, সরকার এমন সিদ্ধান্ত নেবে না, যা জনজীবনকে আরও বিপন্ন করে তুলবে।