চার মাসে মসজিদের দানবাক্সে ১২ বস্তা টাকা! সঙ্গে স্বর্ণালঙ্কার

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি

পাগলা মসজিদ
ফাইল ছবি

কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানসিন্দুক খোলা মানেই কোটি কোটি টাকা। আর এবার মসজিদের সিন্দুক খুলে পাওয়া গেল তিন কোটিরও বেশি টাকা যা এ যাবতকালের সবচেয়ে বেশি বলে জানিয়েছে মসজিদ কর্তৃপক্ষ। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত টাকা গণনা চলছিল। কর্তৃপক্ষ বলছে, আরো ১৫-২০ লাখ টাকা পাওয়া যেতে পারে। ছোট নোটগুলো গুনতে দেরি হচ্ছে।

১৯ জুন শেষবারের মতো খোলা হয়েছিল মসজিদের সিন্দুক। তখন আটটি সিন্দুকে সব মিলিয়ে পাওয়া যায় দুই কোটি ৩৩ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। চার মাস পর আজ শনিবার সেখানে গণনা শেষে মসজিদের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি টাকা পাওয়া গেল। সকাল ১০টায় সিন্দুক খোলার পর গণনা শেষে বিকেলে টাকার এই হিসাব পাওয়া যায়।

দেশি টাকা ছাড়াও ছিল বিভিন্ন বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার। এর আগে গত ২৩ জানুয়ারি আরেকবার খোলা হয়েছিল সিন্দুক তখন পাওয়া গিয়েছিল দুই কোটি ৩৮লাখ ৫৫ হাজার ৫৪৫টাকা।

সকাল ১০টার দিকে জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মসজিদের ৮টি দান সিন্দুক খোলা হয়। এরপর এগুলো ১২টি বস্তায় ভরে মসজিদের দোতলায় গণনার কাজ শুরু করা হয়। এখানকার জেলা প্রশাসক পদাধিকার বলে মসজিদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ২০০ লোক গুনছিল দানের টাকা। টাকার বস্তাগুলো একে একে ঢেলে দেওয়া হয় তাদের সামনে। এভাবে সারাদিন চলে টাকা গণনার কাজ।

এ কাজ তদারকি করেন কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা মাজিস্ট্রেট (এডিএম) ফারজানা খানম ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. শফিকুল ইসলাম, শিহাবুল আরিফ, অর্ণব দত্ত, মো. মাহমুদল হাসান ও পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. শওকত উদ্দিন ভূঞা।

কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) ফারজানা খানম বললেন, এটি আসলে দেখার মতো ঘটনা। মানুষ তাদের মনোবাসনা পূরণের জন্য এখানে কোটি কোটি টাকা দান করেন। থাকে স্বর্ণালঙ্কার ও বৈদেশিক মুদ্রাও। টাকা-পয়সার সঙ্গে চিঠিপত্রও। এগুলো মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যে লেখা। এবার তিনটি চিঠি পাওয়া গেছে, যেগুলোতে রোগ-শোক থেকে মুক্তি, আয়-উন্নতি বৃদ্ধি ছাড়াও শত্রুতা থেকে রেহায় পেতে সৃষ্টিকর্তার সাহায্য প্রার্থনা করা হয়েছে।

পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. শওকত উদ্দিন ভূঞা জানান, মাদরাসার ১২৭জন ছাত্র, মসজিদের ৩৪জন কর্মচারি ও রূপালী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার ৬০জন কর্মকর্তা-কর্মচারি সারাদিন টাকা গণনা করেছেন। তিনি জানান, যারা মসজিদে টাকা গণনার কাজে সহযোগিতা করেন, তাদের জন্যও থাকে সম্মানির ব্যবস্থা।

রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক ও কিশোরগঞ্জ শাখা প্রধান মো. রফিকুল ইসলাম জানান, পাগলা মসজিদের হিসাব দেখভাল করার সুযোগ পেয়ে তারা গর্বিত। আমরাই মসজিদের সিন্দুকে লোকজনের দান করা টাকা গণনা থেকে শুরু করে ব্যাংকে নিয়ে যাওয়ার কাজটি করি।

পাগলা মসজিদের সাধারণ সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. পারভেজ মিয়া জানান, মসজিদের উন্নয়নমূলক কাজ ছাড়াও দানের টাকায় দুঃস্থ ও অসহায়দের নানাভাবে সহযোগিতা দেওয়া হয়। দূরারোগ্য রোগীদের চিকিৎসায় অনুদান দেয় এই মসজিদ। সম্প্রতি শত কোটি টাকায় এই মসজিদের বহুতল কমপ্লেক্স নির্মাণের একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। দানের টাকা দিয়ে এই প্রকল্পের ব্যয় মেটানো হবে।

তিনি আরো বলেন, মসজিদের তহবিল থেকে কোরোনা মোকাবেলায় বিভিন্ন হাসপাতালে যন্ত্রপাতি ও ওষুধপত্রের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে।

পাগলা মসজিদে টাকা গণনা দেখতে শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ অনেকেই ছুটে যান মসজিদে। প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ মসজিদটির দানসিন্দুকগুলোতে নগদ টাকা-পয়সা ছাড়াও স্বর্ণালঙ্কার দান করেন। এছাড়া গবাদিপশু, হাঁস-মুরগীসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্রও মসজিদটিতে দান করা হয়। লোকজনের বিশ্বাস এই মসজিদে দান করলে মনোবাসনা পূর্ণ হয়। এ কারণে দূর-দূরান্ত থেকেও অসংখ্য মানুষ এখানে দান করে থাকেন। শুধু মুসলমান নয়, সব ধর্মের লোকজন এখানে টাকা-পয়সা দান করে থাকেন।

কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে পাগলা মসজিদ অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান। শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মাত্র ১০ শতাংশ ভূমির ওপর এই মসজিদটি গড়ে উঠেছিল। সময়ের বিবর্তনে আজ এ মসজিদের পরিধির সাথে সাথে বেড়েছে এর খ্যাতিও।

শেয়ার করুন