সাভারে আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির চারটি ওয়্যারহাউস পরিদর্শন করে তা সিলগালা করে দিয়েছে হাইকোর্ট গঠিত পরিচালনা বোর্ড। সোমবার সাভারের আমিনবাজার ও বলিয়ারপুরে অবস্থিত এসব ওয়ারহাউস বন্ধ করে দেওয়া হয়।
দুপুরে ইভ্যালি পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককের নেতৃত্বে অপর চার সদস্য সাভারের আমিনবাজার এলাকার পিংক ফুড ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে সরেজমিনে ইভ্যালির দুটি ওয়্যারহাউস পরিদর্শন করেন। এ সময় ওয়্যারহাউস দুটি সিলগালা করে দেন তারা। পরে বলিয়ারপুর এলাকায় অবস্থিত ইভ্যালির অপর দুটি ওয়্যারহাউস পরিদর্শন শেষে সেগুলোও সিলগালা করে দেন তারা।
প্রতিষ্ঠানটির দায় ও সম্পদ পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে পরিদর্শনে আসেন ইভ্যালির পরিচালনা বোর্ডের সদস্যরা। বোর্ডের চেয়ারম্যান এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককের নেতৃত্বে পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন বোর্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) অতিরিক্ত সচিব (ওএসডি) মাহবুব কবির, সাবেক সচিব মোহাম্মদ রেজাউল আহসান, ফখরুদ্দিন আহমেদ, ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ।
এ সময় ওয়্যারহাউজগুলো বেশ কিছু টেলিভিশন, কোমল পানীয়সহ ইলেকট্রনিক্স মালামাল দেখতে পান তারা। কমিটির সদস্যদের জানানো হয়, ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল ও চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে গত ১৬ সেপ্টেম্বর র্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের পরপরই এই ওয়্যারহাউজগুলো থেকে মূল্যবান অনেক মালামাল সরিয়ে ফেলা হয়। পরে তারা সেগুলো সিলগালা করার নির্দেশ দেন।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এইচ এম সামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকক বলেন, গত ২২ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি ও হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্ট। প্রতারিত গ্রাহক ও মার্চেন্টের স্বার্থ সুরক্ষায় নিবিড়ভাবে কাজ করছে হাইকোর্ট গঠিত নতুন পরিচালনা কমিটি। এখানে টাকা লগ্নি করেছিলেন তারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আমরা চেষ্টা করছি ক্ষতিগ্রস্ত এই মানুষদের যতখানি সম্ভব স্বার্থ সুরক্ষা করে তা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করা।
কমিটির প্রধান জানান, প্রতিষ্ঠানটির কোথায় কী সম্পদ রয়েছে এবং সেগুলো কী অবস্থায় রয়েছে, সেসব সম্পদ দিয়ে দায়দেনা কতটুকু পরিশোধ করা যাবে ইত্যাদি বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করছে কমিটি।
গত ১৮ অক্টোবর বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের কোম্পানি বেঞ্চ আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে ইভ্যালি পরিচালনা করার আদেশ দেন।
ইভ্যালিতে পণ্য অর্ডারের পর অর্থ পরিশোধ করে পাঁচ মাস পরও পণ্য ও টাকা না পেয়ে কোম্পানিটির অবসায়ন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন একজন গ্রাহক। পরে অর্থ আত্মসাতের একটি মামলায় ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাসেল এবং চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তারা বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। তাদের গ্রেপ্তারের পর ইভ্যালির অফিসগুলো বন্ধের ঘোষণা দেয় কোম্পানিটি।
এর আগে জুলাই মাসে বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, ইভ্যালি গ্রাহক ও সরবরাহকারীদের কাছ থেকে অগ্রিম নেওয়া ৩০০ কোটি টাকার কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে না। জুন মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের করা তদন্তে এই তথ্য উঠে এসেছে।
এর আগে জানুয়ারি মাসে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ ও ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের একটি প্রতিবেদনে উঠে আসে যে, পণ্য বেচাকেনার ক্ষেত্রে ইভ্যালি আইন ভঙ্গ করেছে।