পরিবেশ বিপর্যয় পারমাণবিক অস্ত্রের চেয়েও মারাত্মক

গাজীউল হাসান খান

জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব
জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব। ছবি : সংগৃহীত

ক্রমাগত পরিবেশদূষণের কারণে বিশ্বব্যাপী আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে যে ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া বা পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে, তার ব্যাপক ভুক্তভোগী হচ্ছে উন্নয়নশীল দেশগুলো। অথচ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শিল্পোন্নত দেশগুলোর সৃষ্ট সে দুরবস্থা থেকে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বাঁচাতে কাঙ্ক্ষিতভাবে এগিয়ে আসছে না তারা। এ ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক দিক থেকে অবদান কিংবা অনুদানের চেয়ে জ্ঞান খয়রাতের প্রবৃত্তিই বেশি দেখা যাচ্ছে পশ্চিমা শিল্পোন্নত দেশ কিংবা পরাশক্তির মধ্যে বেশি। তাই স্ক্যান্ডিনেভিয়ান তরুণ পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ ৩১ অক্টোবর থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের গ্লাসগোতে চলমান কপ-২৬ বিশ্বসমাবেশকে ‘গ্লোবাল নর্থ গ্রিন ওয়াশ’ বলে উল্লেখ করেছেন। যার মোটামুটি বাংলা ভাবার্থ দাঁড়ায়, শিল্পোন্নত উত্তরের সবুজ ধোলাই। এতে অতি দেরিতে যা অর্জিত হয়েছে তা অত্যন্ত নগণ্য। চীন ও রাশিয়ার শাসকরা এতে উপস্থিত না হলেও বিশ্বের ২০০টি দেশের নেতারা এবং ২০ হাজার প্রতিনিধির এক বিরাট লটবহর তাতে যোগ দিয়েছেন।

বিশ্বের বর্তমান আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তনগত ভয়াবহতা ও ব্যাপকতাই যে তাদের এই নিদারুণ শীতে সমবেত হতে তাগিদ জুগিয়েছে তাতে অবিশ্বাসের কোনো সুযোগ নেই। কারণ বিশ্বের স্বল্পোন্নত, উন্নয়নশীল এবং বিশেষ করে ছোট-বড় দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর নেতা ও পরিবেশবিদরা বলেছেন, বর্তমান বৈশ্বিক তাপমাত্রা যদি গত মে মাসে যে রেকর্ড ২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উন্নীত হয়েছিল, তা থেকে কিছুটাও বাড়ে, তবে তা হবে তাদের জন্য মৃত্যুর একটি নিশ্চিত পরোয়ানা। কারণ তার প্রভাবে বাড়বে খরা, বনাগ্নি, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ। সমুদ্রের তলদেশ ও জলরাশি স্ফীত হওয়ার কারণে তলিয়ে যাবে অনেক দ্বীপরাষ্ট্র কিংবা নিম্নাঞ্চল। পশ্চিম ও উত্তর এশিয়া এবং উত্তর আফ্রিকায় চলতি বছরের মাঝামাঝি তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছিল। এ ধারা বিগত কয়েক বছর ধরে ঊর্ধ্বগতি লাভ করছে। তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চল থেকে কানাডার দু-একটি এলাকায়ও। পরিবেশদূষণের ফলে আবহাওয়া ও জলবায়ুগত পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে এ শতাব্দীর মাঝামাঝি প্রতিবছর বিশ্বের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৭.৯ ট্রিলিয়ন ডলারে। সে ক্ষেত্রে বিশ্বের স্বল্পোন্নত, উন্নয়নশীল দেশগুলো ও অনগ্রসর দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর অবস্থা কী দাঁড়াবে? এ অবস্থায়ও কপ-২৬-এ সমবেত শিল্পোন্নত দেশগুলো থেকে বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার সাহায্যের প্রতিশ্রুতি পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই স্বল্পোন্নত, উন্নয়নশীল ও দ্বীপরাষ্ট্রগুলোকে সাহায্য করার জন্য বেসরকারি পর্যায় থেকে পর্যাপ্ত সাহায্য আসা বাঞ্ছনীয় হয়ে পড়েছে। এর পাশাপাশি রয়েছে জলবায়ু ও পরিবেশ রক্ষার জন্য আরো কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আবশ্যকতা। নতুবা উপরোক্ত দেশগুলোর কষ্টসাধ্য উন্নয়নের প্রচেষ্টা প্রাকৃতিক দুর্যোগের উত্তরোত্তর ছোবলে ভেস্তে যাবে এবং দরিদ্রতার অভিশাপ তাদের মধ্যে আরো বিস্তৃত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাতে স্বস্তিতে থাকতে পারবে না উন্নত বিশ্ব। কারণ তাতে ভূমিহীন ও সহায়-সম্বলহীন দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উদ্বাস্তুগতভাবে শরণার্থী হওয়ার প্রবণতা কিংবা আশঙ্কা আরো অনেক বেড়ে যাবে।

মূলত চারটি লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্য নিয়ে গ্লাসগোতে আয়োজিত হয় কপ-২৬। তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল চলতি শতাব্দীর মাঝামাঝির মধ্যে বৈশ্বিক তাপমাত্রাকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনা এবং তাকে আর কোনো অবস্থায়ই ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠতে না দেওয়া। প্রাক-শিল্প পর্যায়ে বৈশ্বিক তাপমাত্রাকে ব্যবস্থাপনা করতে পারলে আবহাওয়া ও পরিবেশগত বিপর্যয় থেকে বিশ্বকে রক্ষা করা অনেকাংশে সম্ভব হবে বলে পরিবেশবিজ্ঞানীরা মত প্রকাশ করেছেন। বৈশ্বিক তাপমাত্রাকে দুইয়ের নিচে অর্থাৎ ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ধরে রাখতেই হবে। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বন্যা, ঘূর্ণি, খরা, জলোচ্ছ্বাস কিংবা অগ্ন্যুৎপাতের মতো যে সমস্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ ক্রমাগতভাবে মানবসমাজ ও উন্নয়নের ধারাকে বিপর্যস্ত করছে, সেগুলো নিয়ন্ত্রণে আনতে পরিবেশদূষণ রোধ ও তাপমাত্রাকে সামাল দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই বলে বিজ্ঞানীরা বারবার হুঁশিয়ার করে যাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী বনাঞ্চল প্রতিরক্ষা ও মিথেন গ্যাস নিঃসরণ রোধের ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। বিশ্বের ১০০টি দেশ উল্লিখিত সময়ের মধ্যে তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনতে ঐকমত্য প্রকাশ করেছে। তারা ২০৩০ সালের মধ্যে বন উজাড় বন্ধ এবং মিথেন গ্যাস নিঃসরণ ৩০ শতাংশ কমিয়ে আনার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে। কপ-২৬ থেকে ২০৫০-এর মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণকে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে বলা হয়েছে। জ্বালানি উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিশ্বের প্রায় সব শিল্পোন্নত দেশই কয়লা ব্যবহার করে থাকে, যা পরিবেশদূষণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে মারাত্মক বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। জ্বালানি উৎপাদনের ব্যাপারে কয়লার ব্যবহারকে ২০৩০ সালের মধ্যে ৮০ শতাংশ কমিয়ে আনতে বলা হলেও চীন, রাশিয়া, ভারতসহ অনেক দেশই তাদের প্রতিশ্রুতি দিতে ব্যর্থ হয়েছে। চীন বিশ্বের পরিবেশদূষণের ব্যাপারে একাই ৩০ শতাংশ অবদান রাখছে। তবে উল্লিখিত সময়ের মধ্যে তা কমিয়ে আনার ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেনি। তারা (চীন) বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ভবিষ্যতে আর কয়লাভিত্তিক জ্বালানি উৎপাদনে বিনিয়োগ করবে না বলে উল্লেখ করলেও নিজ দেশে তা বন্ধ করার কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি।

যুক্তরাজ্যের ব্যবস্থাপনা ও জাতিসংঘের কাঠামোর (Frame work) মধ্যে আয়োজিত কপ-২৬ গ্লাসগো সম্মেলনে ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ শূন্যতে নামিয়ে আনার তাগিদ দিলেও চীন ও রাশিয়া বলেছে তাদের পক্ষে ২০৬০ এবং ভারত বলেছে তাদের পক্ষে ২০৭০-এর আগে উল্লিখিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে না। কারণ তাদের রয়েছে নিজস্ব কয়লাখনি। তা ছাড়া তারা জ্বালানি উৎপাদনের জন্য কয়লা ব্যবহার করে থাকে। এর পাশাপাশি তাদের পর্যাপ্ত বিকল্প ব্যবস্থা নেই। এ ক্ষেত্রে একমাত্র যুক্তরাষ্ট্র উল্লিখিত সময়ের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে। জাতিসংঘ বলেছে, OECD সদস্যভুক্ত দেশগুলোর ২০৩০ সালের মধ্যে কয়লার ব্যবহার বন্ধ করা উচিত এবং ২০৪০ সালের মধ্যে কয়লাভিত্তিক জ্বালানি উৎপাদন কারখানা তালাবদ্ধ করা উচিত। তবে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কয়লা ব্যবহারকারী কিংবা কয়লাভিত্তিক জ্বালানি উৎপাদনকারী শিল্পোন্নত দেশ চীন, রাশিয়া, ভারত ও ব্রাজিল কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে প্রথম থেকেই তাদের অক্ষমতার কথা জানিয়েছে, যা কপ-২৬-এর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে না। প্রথম সারির শিল্পোন্নত দেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যই একমাত্র ব্যতিক্রম। জার্মানি কপ-২৬-এর লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে একমত পোষণ করলেও সম্পূর্ণভাবে সেসব লক্ষ্য পূরণ করতে আরো কিছুটা সময় নেবে বলে জানিয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে গৃহীত অন্যান্য ব্যবস্থা বা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত করতে আগ্রহী। পরিবেশদূষণের ফলে জলবায়ু পরিবর্তন কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে স্বল্পোন্নত, উন্নয়নশীল ও ছোট-বড় দ্বীপরাষ্ট্রগুলোকে রক্ষা করার ব্যাপারে যে ১০০ বিলিয়ন ডলারের সাহায্য তহবিল গঠন করার কথা, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেনি কপ-২৬ সম্মেলন। তবে সম্মেলনের স্বাগতিক দেশ হিসেবে যুক্তরাজ্য এ ব্যাপারে অত্যন্ত আন্তরিক বলে মনে হয়েছে। কারণ ব্রেক্সিট অর্থাৎ ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসা এবং একটি ফলপ্রসূ পরিবেশ সম্মেলনের জন্য ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকতে চান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। তাঁর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও নিজ দেশকে আবার প্যারিস পরিবেশ চুক্তিতে ফিরিয়ে এনে প্রশংসিত ও নন্দিত হয়েছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে প্যারিস পরিবেশ চুক্তি থেকে বের করে নিয়েছিলেন। তাতে নিজ দেশ ও বিশ্বব্যাপী নিন্দিত হয়েছেন তিনি। সর্বত্র হারিয়েছিলেন জনসমর্থন। অভিজ্ঞ কিংবা প্রজ্ঞাবান জো বাইডেন রাজনৈতিকভাবে সে সুযোগটি কাজে লাগিয়েছেন।

দ্রুত শিল্পায়ন কিংবা শিল্পসমৃদ্ধ দেশগুলোর পরিবেশদূষণের কারণে বিশ্বব্যাপী এখন চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে স্বল্পোন্নত, উন্নয়নশীল ও দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর জনগণ। অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, খরা, বন্যা কিংবা জলোচ্ছ্বাসের কারণে প্রতিবছর ঘরবাড়ি হারাচ্ছে অগণিত মানুষ। নদীভাঙনের কারণে সহায়-সম্বল ও ভিটামাটি হারিয়ে উদ্বাস্তু হচ্ছে অনেকে। কিন্তু কার কারণে তাদের এই বিপর্যয়, লাঞ্ছনা ও ভোগান্তি। দেশ-বিদেশি অর্থাৎ আন্তর্জাতিকভাবে সরকার ও শিল্পপতি কিংবা শিল্প-কারখানার বিত্তশালী মালিকদের সেসব হতভাগ্য মানুষের কথা ভাবতে হবে। বুঝতে হবে কার কারণে বিশ্বব্যাপী পশ্চাৎপদ দেশগুলোর মানুষ এই ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে। একমাত্র তাহলেই বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলারের তহবিল গঠন সহজ হবে। বিশ্ববাসী অবগত রয়েছে যে জ্বালানি ছাড়া কলকারখানায় উৎপাদন সম্ভব নয়। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই রয়েছে কয়লাভিত্তিক জ্বালানি উৎপাদনব্যবস্থা। এখনো শিল্পোৎপাদনের ক্ষেত্রে সবুজ জ্বালানির উৎপাদন যথেষ্ট নয়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে পর্যায়ক্রমে দ্রুততার সঙ্গে সবুজ জ্বালানিতে রূপান্তরিত করতে হবে শিল্প-কারখানার উৎপাদন। পারমাণবিক জ্বালানি এখনো ব্যয় সাশ্রয়ী হয়ে ওঠেনি। তা ছাড়া সূর্যরশ্মি কিংবা বায়ুনির্ভর বিদ্যুৎ উিৎপাদনও বিশ্বব্যাপী সহজলভ্য হয়ে ওঠেনি নিম্ন ও নিম্নমধ্যম আয়ের দেশগুলোতে। সুতরাং একটি সামগ্রিকভাবে নির্ভরশীল জ্বালানি ব্যবস্থায় যেতে বিশ্বব্যাপী সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সাহায্য ও সহযোগিতা দিতে হবে স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মানুষকে। এতে বিশ্বের ধনিক শ্রেণির দেশগুলো ছাড়াও বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংকিং এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়মিত অনুদান আসতে হবে কপ-২৬-এর উল্লিখিত ১০০ বিলিয়ন ডলারের তহবিলে। যারা পরিবেশের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি বিপর্যয় ঘটাচ্ছে তাদের অবদান কিংবা অনুদানই এ ক্ষেত্রে হওয়া উচিত সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। অথচ বাস্তবে দেখা যায় তার সম্পূর্ণ বিপরীত। চীন, রাশিয়া, ভারত, ব্রাজিল, ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কিছু দেশের পরিবেশদূষণের ক্ষেত্রে অবদান রয়েছে সবচেয়ে বেশি। তারা কেউ দরিদ্র দেশ নয়। বিশ্বব্যাপী তাদের রয়েছে বৃহৎ অঙ্কের বাণিজ্য। সুতরাং পরিবেশ এবং জলবায়ু উন্নয়নে তাদের অবদানও হওয়া উচিত তেমনই।

বর্তমান বিশ্বের পরাশক্তির দেশগুলোর সামরিক বাজেটের কথা বিস্তারিতভাবে জানতে পারলে যেকোনো মানুষকেই অবাক হতে হয়। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া ও ভারতের সামরিক বাজেট সব খাতকে ছাড়িয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্র এখন পারমাণবিক ক্ষেত্রে বিশ্বের প্রধান হুমকি। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চীন। এ ক্ষেত্রে ক্রমে ক্রমে উঠে আসছে ভারত। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে তিন হাজার ৭৫০টি পারমাণবিক বোমাসহ মারাত্মক অস্ত্র। তার পাশাপাশি ২০৩০ সালের মধ্যে চীন তার পারমাণবিক বোমাসহ বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্রের পরিমাণ এক হাজারের অধিক করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ভারত-পাকিস্তান দারিদ্র্যমুক্ত না হলেও তাদের প্রতিরক্ষা বাজেট অবাক হওয়ার মতো। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে যে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া কিংবা ভারত কেউই ১০০ বিলিয়নের ঘোষিত পরিবেশ রক্ষা তহবিলে তেমন কোনো বিশাল অঙ্কের অনুদান বা অর্থ ঘোষণা করেনি। অর্থনৈতিক দিক থেকে ভারত ও পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া কিংবা ইউরোপের জার্মানি বা ফ্রান্সের মতো কাছাকাছি না হলেও তাদের প্রতিরক্ষা বাজেট কম নয়। পরিবেশ রক্ষাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য যথেষ্ট অর্থ জোগান দিতে না পারলেও প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় হচ্ছে উদারভাবে। এ অবস্থা থেকে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশ এখনো মুক্ত হতে পারেনি। পরিবেশগত মহাবিপর্যয়ের কারণে নিজের দেশ ও প্রিয় পৃথিবীকেই যদি না বাঁচানো যায়, তাহলে পারমাণবিক অস্ত্র কিংবা বিশাল অঙ্কের প্রতিরক্ষা বাজেট দিয়ে কী হবে। কপ-২৬-এর ঘোষিত পরিবেশ তহবিলে অবদানের জন্য সব দেশের সরকার, শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা-বাণিজ্যকে এগিয়ে আসতে হবে নতুবা বিশ্বব্যাপী যে মহাবিপর্যয় নেমে আসবে তা থেকে কোনো সামরিক কিংবা পারমাণবিক শক্তি বিশ্বমানবতাকে বাঁচাতে পারবে না। ভুলে গেলে চলবে না যে পরিবেশদূষণ বা বিপর্যয় পারমাণবিক শক্তির চেয়েও অনেক মারাত্মক ও ধ্বংসাত্মক।

লেখক : বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাবেক প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক

শেয়ার করুন