ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমান্যুয়েল ম্যাক্রোঁর আমন্ত্রণে ফ্রান্স সফরে গিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার (৯ নভেম্বর) প্যারিসের এলিসি প্যালেসে বৈঠকও করেছেন দুই নেতা। তাদের এ বৈঠকে উঠে এসেছে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, উন্নয়ন, নিরাপত্তা, জলবায়ু ও রোহিঙ্গা সংকটের মতো ইস্যুগুলোও। এসব বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা আরও বাড়ানোর আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তারা। ফরাসি প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক যৌথ বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়ন, আগামী বছর দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছরপূর্তিসহ আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। উভয়পক্ষই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক নেতৃত্ব এবং মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের পক্ষে ফ্রান্সের সরকার ও জনগণের মূল্যবান সমর্থনের কথা উল্লেখ করেছে।
দুই দেশ রাজনীতি, কূটনীতি, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, টেকসই উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিনিময়সহ সব ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে দৃঢ় সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করেছে।
বাংলাদেশ ও ফ্রান্স প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তা খাতে অংশীদারত্ব বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সেই লক্ষ্যে উভয় দেশই সংলাপ ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে সম্মত হয়েছে, বিশেষ করে প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে। এছাড়া প্রতিরক্ষা খাতে সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সম্ভাব্য প্রযুক্তি হস্তান্তরে সহযোগিতা বাড়াতেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে দুই দেশ। এ বিষয়ে একটি ইচ্ছাপত্র স্বাক্ষরকে স্বাগত জানানো হয়েছে।
আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে একটি উন্মুক্ত, শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল গঠনে বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের দৃষ্টিভঙ্গি একই। উভয়পক্ষই আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রচার এবং সামুদ্রিক নিরাপত্তা ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ সন্ধানে সম্মত হয়েছে।
স্বল্পোন্নত দেশের ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণে জাতিসংঘের সুপারিশ পাওয়ায় এদিন বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে ফ্রান্স। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে শ্রম খাতে বাংলাদেশের জাতীয় কর্মপরিকল্পনা জমা দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে তা বাস্তবায়নে উৎসাহিত করেছে ফ্রান্স। কৃষি, অবকাঠামো, পরিবহন, জ্বালানি, ডিজিটাল প্রযুক্তি খাতসহ দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক ও শিল্প অংশীদারত্ব জোরদারে আশাবাদ পুনর্ব্যক্ত করেছে তারা।
কথা হয়েছে জাতিসংঘে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী প্রেরণের বিষয়েও। এছাড়া রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের মহানুভবতার প্রশংসা করেছে ফ্রান্স। এর কারণে বাংলাদেশের ওপর ব্যাপক চাপ তৈরি হয়েছে বলেও স্বীকার করেছে তারা। রোহিঙ্গাদের নিরাপদে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে গুরুত্বারোপ করেছে ফ্রান্স ও বাংলাদেশ।
কপ২৬ সম্মেলনের পর পরিবেশ রক্ষায় দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বাড়াতে সম্মত হয়েছে দুই দেশ। এছাড়া ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামে বাংলাদেশের নেতৃত্বেরও ভূয়সী প্রশংসা করেছে ফ্রান্স। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সফরে বাংলাদেশে ও ফ্রান্সের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে বলে বিশ্বাস উভয়পক্ষের।