প্রশ্নফাঁস: আহসানউল্লাহকে দিয়ে আর ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা হবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ ব্যাংক
ফাইল ছবি

প্রশ্নফাঁসের পর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে চক্রটির ৮ জন গ্রেপ্তারের পর সরকারি ব্যাংকে নিয়োগে আহসানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়কে দিয়ে আর কোনো পরীক্ষা না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যাংকার্স সিলেকশনস কমিটি। একইসঙ্গে আগামীকালের নির্ধারিত দুটি নিয়োগ পরীক্ষাও বাতিল করা হয়েছে।

আর গত শুক্রবারে যে নিয়োগ পরীক্ষাটির প্রশ্নফাঁসের কথা বলা হচ্ছে সেই পরীক্ষাটি বাতিল হবে কি-না আগামী রোববার সিদ্ধান্ত আসবে। রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচটি ব্যাংকে ১৫১১টি অফিসার ক্যাশ পদে নিয়োগে ওই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়নের দায়িত্বে ছিল বেসরকারি আহসানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়।

universel cardiac hospital

বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অধীন ব্যাংকার্স সিলেকশনস কমিটি এসব সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। আগের দিন বুধবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ব্যাংকে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস চক্রের পাঁচজনকে গ্রেপ্তার কথা জানানোর পর এ সিদ্ধান্ত এল ব্যাংকার্স সিলেকশনস কমিটির পক্ষ থেকে।

৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির অধীনে পাঁচ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস হচ্ছে- এমন গোপন খবরে ঢাকা মহানগর ডিবি পুলিশ প্রশ্ন কেনে। পরে পরীক্ষায় আসা প্রশ্নপত্রের সঙ্গে কেনা প্রশ্নপত্রের মিল পেলে চক্রটি ধরতে অভিযান শুরু করে ডিবি। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার পাঁচজন ও আজ বৃহস্পতিবার তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তাররা হলেন- জনতা ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার এমদাদুল হক খোকন, সোহেল রানা, ঢাকা কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী এবি জাহিদ, আহসান উল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি টেকনেশিয়ান প্রশ্ন ও উত্তর ফাঁসের মূলহোতা মোক্তারুজ্জামান রয়েল, জনতা ব্যাংকের গুলশান শাখার অফিসার শামসুল হক শ্যামল, রূপালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার জানে আলম মিলন, পূবালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান মিলন ও পরীক্ষার্থী রাইসুল ইসলাম স্বপন।

তাদের কাছ থেকে একটি ল্যাপটপ, বিভিন্ন মডেলের পাঁচটি মোবাইল, চারটি প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র, হোয়াটস অ্যাপে-এ রক্ষিত উত্তরপত্রের ছবি, একটি প্রবেশপত্রের ফটোকপি ও নগদ ছয় লাখ টাকা জব্দ করা হয়। এই ঘটনায় সাক্ষী হিসেবে আরও দুজনকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. শাহদাত হোসেন সোমা বলেন, ‘বুধবার রাতে রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ৫ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে মোট আটজনকে গ্রেপ্তার করা হলো। তাদের কাছ থেকে প্রশ্ন পেয়েছে এমন অন্তত দুই শ পরীক্ষার্থীর নামও মিলেছে।’

এর আগে বুধবার বিকালে ডিবি প্রধান এ কে এম হাফিজ আক্তার জানান, আহসান উল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঁচ ব্যাংকের প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটে। চক্রটি চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে প্রায় ৬০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। গত ৬ নভেম্বর বিকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে পাঁচটি ব্যাংকের ১৫১১টি অফিসার ক্যাশ পদে নিয়োগ পরীক্ষা হয়। ওইদিন বিকাল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন কেন্দ্রে এমসিকিউ পদ্ধতিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকার সিলেকশন কমিটির মাধ্যমে প্রশ্নপত্র তৈরি ও পুরো পরীক্ষা সম্পাদনের দায়িত্বে ছিল আহসানুল্লাহ ইউনির্ভার্সিটি অব সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি।

ডিবির প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মুক্তারুজ্জামান ও শ্যামল জানিয়েছেন, সু-কৌশলে তারা আগেও তিনটি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তর ফাঁস করেছেন। পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে নিয়োগ পাওয়ার আগ পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে ৫ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হতো। এমসিকিউ পরীক্ষার আগে ২০ শতাংশ, লিখিত পরীক্ষার আগে আরও ২০ শতাংশ ও নিয়োগ পাবার পর বাকি ৬০ শতাংশ টাকা পরিশোধের শর্তে পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে চুক্তি করে ডেকে নেওয়া হতো।

২০০ জন পরীক্ষার্থীর নাম পাওয়া গেছে:

মহানগর ডিবি প্রধান বলেন, আমরা এ পর্যন্ত ১১টি বুথ এই চক্রের ২৫/৩০ জনের নাম এবং প্রায় ২০০ জন পরীক্ষার্থীর নাম পেয়েছি। মোক্তারুজ্জামান রয়েল প্রশ্ন ও উত্তর ফাঁসের মূল হোতা। মোক্তারের কাছ থেকে প্রশ্ন নিয়ে শামসুল হক শ্যামল বিভিন্ন বুথে সরবরাহ করে। জানে আলম মিলন বিভিন্ন পরীক্ষার্থী সংগ্রহ ও বুথ নিয়ন্ত্রণ করে। পরীক্ষার্থীদের প্রশ্ন ও উত্তর মুখস্থ করায়। অর্থেও মাধ্যমে প্রশ্ন ও উত্তর প্রদান করে। মোস্তাফিজুর রহমান মিলন পরীক্ষার্থী এবং বুথ নিয়ন্ত্রণ করে। পরীক্ষার্থীদের প্রশ্ন ও উত্তর মুখস্থ করায়। অর্থের মাধ্যমে প্রশ্ন ও উত্তর প্রদান করে। স্বপন পরীক্ষার্থী। সেও প্রশ্ন ও উত্তরপত্র সংগ্রহ এবং বুথ নিয়ন্ত্রণ করে। অর্থের মাধ্যমে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন ও উত্তর প্রদান করে। এ পর্যন্ত এই চক্রের সনাক্ত সদস্য সংখ্যা ২৫/৩০ জন বলে জানা গেছ। বিগত সময়ে অনুষ্ঠিত ব্যাংকের ৩টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করেছিল বলে তথ্য মিলেছে।

শেয়ার করুন