বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার জন্য দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে আর ছুটতে হবে না। বাড়ির পাশে কম টাকায় কোনোরকম ভোগান্তি ছাড়াই বসা যাবে পরীক্ষায়। এমন প্রত্যাশায় প্রথমবারের মতো দেশের ২০টি সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (জিএসটি) বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে গুচ্ছভর্তি পরীক্ষা শুরু হলেও দিন যত গড়াচ্ছে ভর্তি পরীক্ষার প্রতিটি ধাপ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সবশেষ এই গুচ্ছভর্তির পরবর্তী ধাপ হিসেবে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা করে আবেদন করতে হবে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের। আর এই ক্ষেত্রে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে দিতে হবে আলাদা ফিও। বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে ভর্তিচ্ছুদের প্রতিটি ইউনিটে আবেদন ফি দিতে হবে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা পর্যন্ত। আর এই ফি নির্ধারণ করা নিয়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে ভর্তিচ্ছুদের মাঝে। শিক্ষার্থীরা এ ‘ফি’ কে তাদের উচ্চশিক্ষায় প্রবেশের ক্ষেত্রে বড় বাধা হিসেবে উল্লেখ করে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।
ইতোমধ্যেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ গুচ্ছভুক্ত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছুদের আবেদনের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। বিজ্ঞপ্তিতে দেখা গেছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিটি ইউনিটে আবেদনের ফি ধরা হয়েছে ৬০০ টাকা। আর যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিটি ইউনিটে ফি ধরা হয়েছে ৬৫০ টাকা। যদিও ভর্তি আয়োজক কমিটি শুরুতে এরকম ফি নিয়ে কখনো স্পষ্ট কোনো বক্তব্য দেয়নি। কিন্তু পরীক্ষা পরবর্তী নতুন করে শিক্ষার্থীদের ওপর আবার ইউনিট আবেদন ফি জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ‘জিএসটি’ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসারে, ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ভর্তি নেবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এ ক্ষেত্রে অন্য শর্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ঠিক করতে পারবে। ১২০০ টাকা ফি দিয়ে এই পরীক্ষায় আবেদন করতে হয়েছিল ভর্তিচ্ছুদের। যদিও প্রথমে এই ফি ৬০০ টাকা নির্ধারণের কথা ছিল। কিন্তু পরে খরচ পোষাতে ফি বাড়ানো হয়। ভর্তির ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আলাদা ফি নেবে কি না সে ব্যাপারে আগে কোনো কথা না হলেও এখন বাড়তি অর্থ আদায়ের শর্ত যুক্ত করা হচ্ছে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে শিক্ষার্থীরা বলছেন, তারা ভেবেছিলেন ১২০০ টাকা খরচের মাধ্যমেই ফি পর্ব শেষ হচ্ছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, খরচ আগের চেয়ে বাড়তিই নেওয়া হচ্ছে। গুচ্ছের আগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি আলাদা ভর্তি পরীক্ষায় আগে ফি নিয়ে নিতো। গুচ্ছ আসার পর এখন কেবল আবেদন মূল্যায়ন করে মেধাক্রম তৈরির জন্যই মোটা অংকের অর্থ নিতে চাইছে তারা।
ফেনী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ভর্তিচ্ছু মো. ফুয়াদুল ইসলাম ভূইয়া বলেন, যবিপ্রবির সার্কুলারে আবেদন ফি ধরা হয়েছে ডিপার্টমেন্টপ্রতি ৬৫০ টাকা। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে সাতটি ডিপার্টমেন্ট রয়েছে। একজন শিক্ষার্থী যদি চারটি ডিপার্টমেন্টেও আবেদন করে তবে তার খরচ হবে দুই হাজার ৬০০ টাকা। একই হারে বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও আবেদন ফি নিলে ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে শিক্ষার্থীদের খরচ হবে ৬০ হাজার টাকা, যা একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বছরের সেমিস্টার ফির চেয়েও বেশি।
তিনি আরও বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি আবেদন করতেই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সমতুল্য খরচ লাগে তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষত্ব থাকে কী করে? কর্তৃপক্ষ কি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও ধীরে ধীরে পুরোদস্তুর বাণিজ্যিকীকরণের চেষ্টা করছে না? আমাদের এইচএসসি ২০ ব্যাচকে সবদিক থেকেই অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। আমরা কর্তৃপক্ষকে অযৌক্তিক একটি পয়সাও দেবো না।
নালিতাবাড়ী শহীদ আব্দুর রশিদ মহিলা ডিগ্রি কলেজের ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী মানসী সিংহ শুভ্রা বলেন, গুচ্ছ কমিটি আমাদের সঙ্গে এমনটা করবে সেটা কারও কাম্য ছিল না। আমরা ইতোমধ্যেই প্রাথমিক আবেদন ও চূড়ান্ত আবেদনের টাকা দিয়ে পরীক্ষায় বসেছি। এখন প্রতিটা ইউনিটের জন্য এতোগুলো টাকা দিয়ে আবেদন করা সম্ভব নয়। আর তারা (গুচ্ছভর্তি কর্তৃপক্ষ) আমাদের শুধু নম্বর দিয়েছে, কোনো সিরিয়াল দেয়নি। তাই কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করাটা সঠিক হবে, সেটা আমরা কেউ বুঝতে পারছি না। তাই আমাদের দাবি, গুচ্ছ আবেদনের টাকা মওকুফ করা হোক।
এদিকে এই ‘ফি’কে অযৌক্তিক আখ্যা দিয়ে তা বাতিলের দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনও।
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এবং গুচ্ছভর্তি পরীক্ষা আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব প্রকৌশলী ওহিদুজ্জামান বলেন, ভর্তি পরীক্ষা পরবর্তী আবেদন ফি প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের নিজস্ব ডিন’স কমিটির সভায় সিদ্ধান্তের মাধ্যমে নির্ধারণ করেছে। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আবেদন ফি।