প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গ্লাসগোতে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে (কপ২৬) যোগদান শেষে প্যারিস সফর বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর এ সফরকালে মঙ্গলবার দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বিষয়ে একটি সম্মতিপত্র স্বাক্ষরিত হয়। ওইদিন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে বৈঠক করেন শেখ হাসিনা।
বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নেওয়া, দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো দুই নেতার আলোচনায় স্থান পায়। বৈঠকের পর এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকে দুই দেশ বিদ্যমান অংশীদারিত্বকে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আরও সম্প্রসারিত করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ লক্ষ্যে দুই দেশ আলোচনা ও সহযোগিতা জোরদার করার ব্যাপারে একমত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরে ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী জ্যঁ কাস্তেক্সের সঙ্গেও বৈঠক করেন। এ সময় দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবেই সৌহার্দ্যপূর্ণ। সুদূর অতীতেই এ সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপিত হয়। ফরাসিরা সপ্তদশ শতাব্দীতে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে প্রথম ঢাকা শহর ও দেশের অন্যান্য বাণিজ্যিক এলাকায় সম্পর্ক স্থাপন করেন। সে সময় তাদের ব্রিটিশদের সঙ্গে বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক মতবিরোধ ছিল। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন যখন ব্রিটিশদের সঙ্গে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার পলাশীর যুদ্ধ হয়, তখন নবাবের সহায়তার জন্য সৈন্য প্রেরণের মাধ্যমে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল ফ্রান্স।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেও ফরাসিদের অবদান চিরস্মরণীয়। ফরাসি লেখক ও চিন্তাবিদ অঁদ্রে মালরো বলেছিলেন, তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে নিজের যুদ্ধ মনে করেন। এ যুদ্ধে অংশ নিতে তিনি এ দেশে আসার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছিলেন। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জঁ ক্যা নামে একজন মানবতাবাদী ফরাসি যুবক ভারতে আশ্রয়গ্রহণকারী বাংলাদেশি শরণার্থীদের ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রীর দাবিতে একটি পাকিস্তানি বিমান (পিআইএ) ছিনতাইয়ের চেষ্টা করলে বিষয়টির প্রতি আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছিল।
এ ঘটনার পর ফরাসি সরকার বাংলাদেশকে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং ভারতের শরণার্থী শিবিরে ২০ টন ওষুধ আর চিকিৎসাসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়েও বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে সবসময় সুসম্পর্ক বিদ্যমান। ফ্রান্স বর্তমানে বাংলাদেশের পঞ্চম বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য। এ বাণিজ্যিক যোগাযোগ আরও সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে। তাই দেশটির সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কের উন্নতি হলে আমরা লাভবান হতে পারি। ফরাসি ব্যবসায়ীদের প্রতি বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। দুই দেশের যৌথ উদ্যোগেও গড়ে উঠতে পারে বিভিন্ন শিল্প।
অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে ফ্রান্সে নতুন নতুন পণ্য রপ্তানির সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখতে হবে। শিক্ষা ও শিল্প-সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও দুই দেশের মধ্যে দৃঢ় করা যেতে পারে সহযোগিতার বন্ধন। বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের সম্পর্ক উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাক, এটাই কাম্য।
লেখক : শিক্ষার্থী