সরকারের একটি মহল মুক্তিযুদ্ধবিরোধী চক্রকে লালন-পালন করছে: মোকতাদির চৌধুরী

নিজস্ব প্রতিবেদক

মোকতাদির চৌধুরী

সরকারের একটি মহল মুক্তিযুদ্ধবিরোধী চক্রকে লালন-পালন করছে বলে মন্তব্য করেছেন বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি।

আজ শনিবার দুপুরে হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন পুন:চালুকরণ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রান্তে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেন, ‘সরকারের একটি মহল মুক্তিযুদ্ধবিরোধী চক্রকে লালন পালন করছে, আমি তার বিরোধিতা করি। কিভাবে সরকারের একটি মহল মুক্তিযুদ্ধবিরোধী চক্রকে লালন-পালন করে যাচ্ছে তার আমি প্রমাণ দিতে পারি। কিন্তু উপরে থুতু দিলে নিজের গায়ে পড়ে সেজন্য এখন প্রমাণ দেওয়া হচ্ছে না।’

এই মহলটি যারা বাংলাদেশকে ভালোবাসে না, তারাই মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘প্রথমে হেফাজতের নেতারা বলেছেন তাদের কোন লোক হামলায় অংশ নেয় নাই, কিন্তু এক সপ্তাহ পরে তারা ২০ জন মাদ্রাসা ছাত্রকে বহিষ্কার করে বলেছে-এরা হামলায় জড়িত ছিল। তারা মিথ্যাবাদী এবং প্রতারক।’

এই সংসদ সদস্য পুলিশ প্রশাসনের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘যে ২০ জনকে মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছিল কিনা? তাদের অবস্থান কোথায়, তারা গ্রেপ্তার হয়েছিল কিনা?’

তিনি আরও বলেন, ‘২০১৬ সালে নাসিরনগরে ঘটা সাম্প্রদায়িক সহিংসতার পর আমি সরকারের কাছে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছিলাম। কিন্তু তা করা হয় নাই। মাত্র একটি মামলার চার্জশিট হয়েছে, বাকি মামলাগুলোর চার্জশিট এখনো দেওয়া হয় নাই। সেদিনও সরকারের একটি মহল সমস্ত ঘটনা আমার আমার কাঁধে দায় চাপিয়ে পার পাওয়ার চেষ্টা করেছিল। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনাতেও তাই হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে খবর গিয়েছে ২৮ মার্চের ঘটনার পেছনে উস্কানিদাতা আমি। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছিলাম- ২৮ তারিখের ঘটনার যদি আমি উস্কানিদাতা হয়ে থাকি, তাহলে ২৬ তারিখের ঘটনার উস্কানিদাতা কে? তিনি সেদিন নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছিলেন, উত্তর দিতে পারেন নাই।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের তাণ্ডবের বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করে তিনি বলেন, আমি জানি এই মামলাগুলোর যদি সঠিকভাবে তদন্ত করা হয় তাহলে সরকারের ভেতরকার মহলের অনেকেই এটার সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়বে।

হেফাজতের নেতাদেরকে ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীর কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ভাঙচুর ইসলামসম্মত এটা প্রমাণ করতে পারলে আমরা আপনাদের কাছে ক্ষমা চাইবো। আর যদি প্রমাণ করতে না পারেন তাহলে আপনারা ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীর কাছে ক্ষমা চাইবেন।

চলতি বছরের ২৬ মার্চ হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ২৩২ দিন পর আজ থেকে এই স্টেশনে পুরোদমে আগের শিডিউল অনুযায়ী ট্রেনের যাত্রাবিরতির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনের এক নম্বর প্লাটফর্মে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

এর আগে সকালে রাজধানীর কমলাপুর স্টেশনে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেসের মাধ্যমে যাত্রাবিরতির উদ্বোধন করেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। এ সময় তিনি ট্রেনের যাত্রীদের মধ্যে ফুল বিতরণ করেন। পরে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।

এ সময় রেলমন্ত্রী বলেন, গত ২৬ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনে কর্তব্যরত স্টেশনমাস্টারের রুম, অপারেটিং রুম, ভিআইপি রুম, প্রধান বুকিং সহকারীর রুম, টিকিট কাউন্টার, প্যানেল বোর্ড, সিগন্যালিং যন্ত্রপাতি, পয়েন্টের সিগন্যাল বক্স, লেভেল ক্রসিং গেটসহ অন্যান্য স্থাপনা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় বাংলাদেশ রেলওয়ের আড়াই কোটি টাকার ক্ষতি হয়। ওই ঘটনার পরদিন থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনে সকল আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতি বাতিল করা হয়। দীর্ঘ প্রায় আটমাস পরে এটি আবার চালু করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, পূর্বে যেভাবে যাত্রাবিরতি ছিল আজ থেকে একইভাবে যাত্রাবিরতি করবে। স্টেশনে ১৪টি আন্তঃনগর, আটটি মেইল এবং চারটি কমিউটার ট্রেনের যাত্রাবিরতি রয়েছে।

নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, যারা স্বাধীনতাবিরোধী, যারা বাংলাদেশ চায় না- তারাই এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ সময় ট্রেনে ঢিল ছোড়া রোধে জনগণকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

শেয়ার করুন