করোনাভাইরাসের টিকা উৎপাদন করে অন্য দেশকে দেওয়ার সক্ষমতাও বাংলাদেশের আছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী তার সাম্প্রতিক সফরে দেওয়া বক্তৃতার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, আমরা নিজেরা ভ্যাকসিন তৈরি করতে চাই। ভ্যাকসিন তৈরির যে বাধাগুলো আছে, সেগুলো আপনাদের (উন্নত দেশগুলোকে) সরিয়ে দিতে হবে, উন্মুক্ত করতে হবে। এটা জনগণের প্রাপ্য, তাদের সম্পদ হিসেবেই দিতে হবে; সারা বিশ্বের কোনও মানুষ যেন ভ্যাকসিন থেকে দূরে থাকতে না পারে। আমাদের সুযোগ দিলে আমরা উৎপাদন করবো। আমরা বিশ্বে দিতে পারবো, সে সক্ষমতা আমাদের আছে। (টিকা উৎপাদনের ল্যাব তৈরির জন্য) জমিও নিয়ে রেখেছি। এভাবে উদ্যোগ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।
আজ সোমবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনের এক সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকার প্রধান এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, আজকে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় আমাদের যে সাফল্য, তা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে— আমি এটাও বলে এসেছি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে পুরস্কার চালু করায় জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা- ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ জানাতে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সাবেক প্রধান হুইপ আব্দুস শহীদ কার্যপ্রণালি বিধির ১৪৭ বিধিতে সাধারণ আলোচনার জন্য জাতীয় সংসদে একটি প্রস্তাব তোলেন। প্রস্তাবে বলা হয়—‘জাতীয় সংসদে বিশেষ আলোচনার মাধ্যমে ইউনেস্কোকে বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানানো হোক।’
এই প্রস্তাব ওঠানোর পর তা নিয়ে আলোচনা করেন সরকারি ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা। আলোচনা শেষে সংসদে সেটি সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করা হয়।
সাধারণ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে জাতির পিতার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তী ঘটনা প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ৭৫-এর পর আমরা কী দেখেছি? ১৯টা ক্যু হয়েছে। হাজার সেনাবাহিনীর অফিসার ও সৈনিক, বিমান বাহিনীর অফিসার ও সৈনিক এবং সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে, কারাগারে ফেলে রাখা হয়েছে, নির্যাতন চালানো হয়েছে। গুলি-অস্ত্র, দুর্নীতি এটাই ছিল (সে সময়ের) জননীতি। এর বাইরে একটা দেশকে যে উন্নত করা যায় সেদিকে কোনও আন্তরিকতাই আমরা দেখিনি। আমি বাংলাদেশে আসার পর কী দেখেছি— বিজ্ঞান পড়েই না মানুষ, বিজ্ঞানের প্রতি কোনও আগ্রহ নেই, গবেষণা তো ছিলই না। কোনও বিশেষ বরাদ্দও ছিল না।
১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এখন আমরা পিছিয়ে নেই। আমি ধন্যবাদ জানাই বাংলাদেশের জনগণকে। তারা বারবার আমায় ভোট দিয়েছেন। সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। এক দশকের ভেতরে বাংলাদেশের পরিবর্তন সারা বিশ্বে একটা মর্যাদা পেয়েছে। বাংলাদেশের কাউকে বাইরে গিয়ে কথা শুনতে হয় না।
সংসদ নেতা বলেন, যুব সমাজকে উৎসাহিত করার জন্য… ভালো কাজটা চোখে না দেখলে আমাদের কিছু বলার নেই। আমাদের যে সিআরআই আমরা তৈরি করেছি— আওয়ামী লীগের একটা গবেষণা প্রতিষ্ঠান। সেখান থেকে ইয়াংবাংলা নামে একটা উদ্যোগ নেওয়া হয়, যুব সমাজকে উৎসাহিত করতে। তাদের স্টার্টআপ প্রোগ্রামের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। তাদের এটাও বলা হয়, শুধু চাকরির পেছনে ঘুরবে কেন, চাকরি দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবে, নিজের পায়ে দাঁড়াবে। নিজের ব্যবসা করবে, নিজেরা অন্যকে চাকরি দেবে। এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে আমাদের সরকারের আমলে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকসহ আমাদের কিছু ইয়াং সংসদ সদস্য, সবাই মিলেই কিন্তু ইয়াংবাংলা স্টার্টআপ প্রোগ্রাম নিয়েছে। এই প্রোগ্রামের জন্য আমরা বিশেষ বরাদ্দও রেখেছি। ছেলেমেয়েরা যদি কেউ উদ্যোগ নিতে চায় আমরা তাদের পাশে দাঁড়াবো। অনলাইনে কেনাবেচা, ই-কমার্স, টেন্ডার- এগুলো তো (ইতোমধ্যে) হয়েছে বাংলাদেশে। সামনে আরও সময় আছে, আরও হবে। এক দিনে তো হয় না, ধাপে ধাপে করতে হয়।
বাংলাদেশের প্রস্তাবে গত বছর ডিসেম্বরে ইউনেস্কো নির্বাহী পরিষদের শরৎকালীন ২১০তম অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে বঙ্গবন্ধুর নামে আন্তর্জাতিক এই পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন অঙ্গনে অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর আর্থিক সহযোগিতায় আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তন করে থাকে ইউনেস্কো।
গত বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) প্যারিসে প্রথমবারের মতো ‘ইউনেস্কো-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ইন দ্য ফিল্ড অব ক্রিয়েটিভ ইকোনমি’ পুরস্কার দেওয়া হয়। উগান্ডার ‘মোটিভ ক্রিয়েশন’ নামে একটি সংগঠন এই পুরস্কার পেয়েছে। প্যারিসে ইউনেস্কো সদর দফতরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ পুরস্কার তুলে দেন। পুরস্কার দেওয়া হবে প্রতি দুই বছরে একবার, যার আর্থিক মূল্য ৫০ হাজার ডলার।
বঙ্গবন্ধুর নামে পুরস্কার প্রবর্তন করায় বক্তব্যকালে ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা। উগান্ডার মোটিভ ক্রিয়েশনের মতো বাংলাদেশের যুব সমাজও এগিয়ে আসবে বলে আশা প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘উগান্ডা আজ এই পুরস্কার পেয়েছে। একদিন ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশেরও কোনও না কোনও উদ্যোক্তা এই পুরস্কার পাবে বলে আমি আশা করি।’
প্রধানমন্ত্রীর আগে এই আলোচনায় সংসদ অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন, সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আমির হোসেন আমু, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ওয়াসিকা আয়শা খান, বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের, জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, বিএনপির হারুনুর রশীদ, জাপার রুস্তম আলী ফরাজী ও পীর ফজলুর রহমান।